আত্মঘাতী বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী সুপ্রিয়া দে। —নিজস্ব চিত্র।
এমন মর্মান্তিক পরিণতি অপেক্ষায় ছিল! ভাবতেই পারছে না ১ নম্বর ওয়ার্ড। শুধু ১ নম্বর ওয়ার্ডে আর সীমাবদ্ধ নেই ধাক্কা, গোটা কুপার্সে দাবানলের মতো ছড়িয়ে গিয়েছে খবরটা। নদিয়ার ছোট্ট পুর এলাকায় বেনজির জয় পেয়েছে তৃণমূল। কিন্তু গণনা কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী সুপ্রিয়া দে যে কাণ্ডটা ঘটিয়ে ফেলেছেন, তাতে আচমকা থমকে গিয়েছে তৃণমূলের উল্লাসের দমক।
টানা ১০ বছর কাউন্সিলর ছিলেন তিনি। ২০০৭ এবং ২০১২ পর পর দু’বার কুপার্স পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাপিয়ে জিতেছিলেন সুপ্রিয়া দে। তখন কংগ্রেস করতেন। বরাবরই সুপ্রিয়া ছিলেন শঙ্কর সিংহের ঘনিষ্ঠ, সেই সুবাদে প্রদেশ কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে দীপা দাশমুন্সির বৃত্তে। নিজের এলাকায় জনপ্রিয় নেত্রী সুপ্রিয়ার সাজপোশাকেও দীপা দাশমুন্সির ছাপ ছিল স্পষ্ট। কপালে বড় টিপ, নজরকাড়া শাড়ি, অল্প গয়না।
সাজপোশাকে দীপার ছাপ যতই থাক, দীপার দলে কিন্তু থাকা হয়নি সুপ্রিয়া দে-র। ২০১২ সালে তৃণমূলের মরিয়া চেষ্টা সত্ত্বেও কুপার্সের দুর্গ অটুট রেখেছিল কংগ্রেস। সুপ্রিয়া দে দ্বিতীয় বারের জন্য ‘হাত’ চিহ্নের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু খুব দ্রুতই দল বদলে তৃণমূলে চলে যান কুপার্সের কংগ্রেস কাউন্সিলররা। সুপ্রিয়াও গিয়েছিলেন। সেই থেকে তৃণমূলেই ছিলেন তিনি। এ বার যে তৃণমূল টিকিটই দেবে না তাঁকে, সে বোধ হয় দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি সুপ্রিয়া।
আরও পড়ুন: শঙ্কর ম্যাজিক? বিরোধীদের মুছে দিয়ে প্রথম বার কুপার্সে জয় তৃণমূলের
কুপার্স যাঁর খাসতালুক হিসেবে পরিচিত, সেই শঙ্কর সিংহ পুর নির্বাচনের কিছু দিন আগেই কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে ঢুকেছেন। ফলে সুপ্রিয়ার মতো একদা শঙ্কর-ঘনিষ্ঠদের দাপট আরও বাড়ার কথা ছিল দলে। কিন্তু তা হয়নি। স্থানীয় সূত্রের খবর, শঙ্কর সিংহ চেয়েছিলেন, ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এ বারও সুপ্রিয়াই টিকিট পান। কিন্তু নদিয়া জেলা তৃণমূলের আর এক প্রভাবশালী নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস সুপ্রিয়া দে-কে টিকিট দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। উজ্জ্বল বাবুর এক অনুগামীই শেষ পর্যন্ত জোড়াফুলের টিকিট পান। তাই বিক্ষুব্ধ সুপ্রিয়া নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন নিজের কেন্দ্রে।
জয়ের ব্যাপারে নাকি খুবই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। হারতে হবে, ভাবতেই পারেননি। তাই গণনার গতিপ্রকৃতি দেখে ক্রমশই নাকি স্তম্ভিত হয়ে পড়ছিলেন সুপ্রিয়া। চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর জানা যায়, সুপ্রিয়া দে ৩০ ভোটে হেরে গিয়েছেন। আর সময় নষ্ট করেননি গণনা কেন্দ্রে। সোজা বাড়ি ফিরে যান। তার পরেই চারিয়ে যায় দুঃসংবাদটা— অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন সুপ্রিয়া দে।
আরও পড়ুন: সর্বত্র তৃণমূলের জয়, দ্বিতীয় স্থানে বিজেপি, ধূলিসাৎ বাম-কংগ্রেস
প্রথমে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সুপ্রিয়াকে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।
নির্বাচনে বিপুল জয় সত্ত্বেও শোকে মুহ্যমান কুপার্সের তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই। রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক শঙ্কর সিংহ দৃশ্যতই বিপর্যস্ত এই খবরে। তিনি বলেন, ‘‘অত্যন্ত দুঃখের খবর। ভাবতেই পারিনি, এমন কিছু ঘটে যাবে। এখন সর্বাগ্রে সুপ্রিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো দরকার। আমরা সব রকম ভাবে ওঁর পরিবারের পাশে থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy