জলপাইগুড়ির হোম থেকে বাজেয়াপ্ত করা দোলনা। ছবি: সন্দীপ পাল।
অভিযোগ উঠেছে, তিনি দেশে-বিদেশে শিশু বিক্রি করে মোটা টাকা নিতেন। কোথা থেকে সেই টাকা আসত এবং তা শেষ পর্যন্ত কী কাজে লেগেছে— এ বার সেই তথ্যই খুঁজে বের করার কাজে হাত দিয়েছেন গোয়েন্দারা। জলপাইগুড়ির হোম মালিক চন্দনা চক্রবর্তী এবং তাঁর সঙ্গিনী সোনালি মণ্ডলকে রবিবারেই হেফাজতে নিয়েছে সিআইডি। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি ও ব্যাঙ্ক লেনদেনের নথি খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। এই সম্পত্তির তালিকায় রয়েছে ডুয়ার্সের একটি রিসর্ট, কলকাতা-দিল্লিতে ফ্ল্যাট, একটি বিএমডব্লিউ গাড়িও।
সিআইডি সূত্রের বক্তব্য, লক্ষ লক্ষ টাকায় শিশু বেচা হতো। বিদেশে, বিশেষ করে ফ্রান্স, আমেরিকা এবং সিঙ্গাপুরে তিনটি শিশু পাঠানো হয়েছিল ওই হোম থেকে— এমন তথ্যও মিলেছে। গোয়েন্দাদের দাবি, লেনদেন হয়েছে মার্কিন ডলারে। সেই অর্থের হদিস পেতে এর মধ্যেই চারটে পাশবই বাজেয়াপ্ত করেছে সিআইডি।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, মাস দুয়েক আগে ওই হোমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের অধীন কেন্দ্রীয় দত্তক কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জমা পড়ে। স্পষ্ট ভাবে বলা হয়, টাকার বিনিময়ে শিশু দত্তক দেওয়া শুরু করেছে হোমটি। এর পরেই তদন্তে নামে সিআইডি। বাদুড়িয়ায় সিআইডি-র যে দলটি শিশু পাচার নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছিল, জলপাইগুড়ির দায়িত্বও তাদেরই দেওয়া হয়।
রবিবার এই দলটিই হেফাজতে নিয়েছে চন্দনা-সোনালিকে। সরকারি আইনজীবী প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টাকার বিনিময়ে যে পাচার করা হয়েছিল, তার প্রমাণ সিআইডি পেয়েছে। পাচারের টাকা কোথায় গেল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃতদের সম্পত্তি নিয়ে খোঁজও শুরু হয়েছে।’’ শোকজ করা হয়েছে জেলার শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সুস্মিতা ঘোষকে। প্রশাসন সূত্রের খবর, হোম-কাণ্ডে সিডব্লিউসি-র সদস্যদের অভিযোগের ভিত্তিতেই এই শোকজ। সুস্মিতা ঘোষ যদিও গাফিলতির কথা অস্বীকার করেছেন। শোকজের চিঠি পাননি বলেও জানিয়েছেন।
সিআইডি-র দাবি, এর জাল অনেক দূর ছড়ানো। এর মধ্যেই অভিযোগ উঠেছে, বিজেপির রাজ্য মহিলা মোর্চার সাধারণ সম্পাদক নেত্রী জুহি চৌধুরীর কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন চন্দনা। সেই মতো জুহি তাঁদের দিল্লিতে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন বলেও অভিযোগ। এ সবের প্রেক্ষাপটে বাজেয়াপ্ত ব্যাঙ্ক নথিও খতিয়ে দেখছে সিআইডি। ডুয়ার্সের লাটাগুড়ির একটি রিসর্ট, দার্জিলিঙের একটি বাংলো, দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী আবাসনের দামি ফ্ল্যাট, দুটি প্যাথলজিক্যাল সেন্টার এবং একটি ওষুধের দোকানের মালিক কে, তা কেনার সময়ে কে টাকা দিয়েছিলেন— খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হোমের কর্মীরা প্রায়ই তিনটি গাড়ি ব্যবহার করতেন। তার মধ্যে একটি এসইউভি-ও ছিল। সেগুলি চলে এসেছে সিআইডি-র তদন্তের আওতায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy