শ্রীভূমির দুর্গাপুজো মণ্ডপে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শৌভিক দে-র তোলা ছবি।
চার মাসেই বিরোধী ঘর ভেঙে আনা হয়েছে ৬ জনকে! প্রায় রোজ তৃণমূল ভবন যে ভাবে বিরোধীদের হাতে জোড়া ফুলের পতাকা ধরানোর পীঠস্থান হয়ে উঠেছে, তাতে প্রশ্ন ভাসছে— ২৯৪ আর কতই বা দূর?
বিধানসভা ভোটে ২১১টি আসন জিতেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। পরের ক’মাসে বিরোধী দল ভাঙিয়ে তাদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের বিধায়ক কানহাইয়ালাল অগ্রবাল এবং নদিয়া জেলার কালীগঞ্জের বিধায়ক হাসানুজ্জামান হাসান বুধবার কংগ্রেস ছেড়ে শাসক দলের পতাকা নেওয়ায় বিধানসভায় তাঁদের শক্তি এখন ২১৭ হল বলে নিজেই ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই হারে এগোতে থাকলে শেষে কি ২৯৪-এ থামবেন তাঁরা? অভিষেক কবুল করেননি, উড়িয়েও দেননি। বলেছেন, ‘‘কোনও লক্ষ্য নেই আমাদের। কেউ যদি আসতে চান, আমরা কি নিষেধ করতে পারি? জনপ্রতিনিধিরা কে কোন দলে যাবেন, তাঁদের ব্যক্তিগত এক্তিয়ার। আমরা কাউকে জোরজবরদস্তি করে দলে আনছি না!’’
বিরোধী শিবির অবশ্য অভিযোগ করছে, প্রলোভনের ফাঁদ ও মামলার ভয়— এই দুই অস্ত্রের জোরেই দল ভাঙানো চলছে। শাসক দলের এই খেলার সঙ্গে পেরে না উঠেই বিরোধীদের মামলার পথে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আদালতে কী হবে, সেই জল্পনায় না গিয়েও প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যে বিরোধীশূন্য পরিস্থিতি কি গণতন্ত্রের পক্ষে সুখকর? তখনও অভিষেক বলছেন, ‘‘মানুষ নিজের থেকে আমাদের দলে এলে কী করব?’’
এর আগে একে একে সিপিএমের দীপালি বিশ্বাস এবং কংগ্রেসের তুষারকান্তি ভট্টাচার্য, রবিউল আলম চৌধুরী, মানস ভুঁইয়া তৃণমূলে গিয়েছেন। কানহাইয়া, হাসানুজ্জামানের পরে কান্দির অপূর্ব সরকার, ফরাক্কার মইনুল হক, মুর্শিদাবাদের শাঁওনি সিংহ রায়েরাও জোড়া ফুল শিবিরে পা বাড়িয়ে আছেন বলে জল্পনা তুঙ্গে। কেউ যেতে চাইলে তাঁকে বেঁধে রাখা যায় না বলে মেনে নিয়েও দলত্যাগীদের বিধায়ক-পদ খারিজের লক্ষ্যে এখন লড়াই চালাচ্ছে কংগ্রেস। বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের কথায়, ‘‘তৃণমূল হয়তো ভাবছে, প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদাও তারা রাখতে দেবে না! পরিণাম এক দিন তাদের ভুগতে হবে। আর কংগ্রেসের টিকিটে জিতে যাঁরা অন্য দলে যাচ্ছেন, তাঁরা ভোটদাতাদের সঙ্গেই বেইমানি করছেন। এই জিনিস আটকাতেই মামলার পথে যাচ্ছি।’’ অভিষেকের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘ওঁরা তো ভোটে নেই, কোর্টেই আছেন!’’
দলবদল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে তৃণমূলের পতাকা নিলেন নদিয়া ও উত্তর দিনাজপুরের এক ঝাঁক বিধায়ক-কাউন্সিলর। বুধবার কলকাতার তৃণমূল ভবনে শৌভিক দে-র তোলা ছবি।
তবে বেপরোয়া গতিতে দল ভাঙাতে গিয়ে তৃণমূলের ঘরেও কিছু কোন্দল দেখা দিচ্ছে। ইসলামপুরে কানহাইয়া যাঁকে হারিয়েছিলেন, সেই প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরী যেমন এখন তৃণমূলে বিক্ষুব্ধ। তিনি সরাসরিই বলেছেন, ‘‘দলনেত্রীর সিদ্ধান্তে আমি খুবই দুঃখ পেয়েছি। দলের মধ্যে থাকা কিছু বিশ্বাসঘাতকের কথা শুনে একটি পৃথক দল তৈরি করে ফেললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘ওরা (কানহাইয়ারা) ভেজাল! ভেজাল হিসাবেই থাকবে!’’ কানহাইয়াদের দলে নেওয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবারই ইসলামপুরে ধিক্কার মিছিল হয়েছিল। কানহাইয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে দল ছাড়ার পরে এ দিন মান্নান, সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য, দীপা দাশমুন্সির মতো বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তেমন হলে তৃণমূলের পাল্টা চাল হিসেবে করিমকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার ভাবনাও রয়েছে কংগ্রেসের।
তবে কানহাইয়ার দাবি, ‘‘যাঁরা ভোট দিয়েছিলেন, তাঁদের রায় নিয়েই তৃণমূলে এসেছি!’’ ভোটের আগেই কেন তৃণমূলে যোগ দেননি? বিধায়কের জবাব, ‘‘তৃণমূলের টিকিট তো আর দু’জনকে দেওয়া হতো না! তাই তখন যাইনি।’’ চেয়ারম্যান কানহাইয়ার সঙ্গে আরও ৮ জন কাউন্সিলর এ দিন তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ইসলামপুর পুরসভাও শাসক দলের হস্তগত হয়েছে। ১৭ সদস্যের ওই পুরবোর্ডে তৃণমূল এখন ১৫।
কংগ্রেস এবং ফরওয়ার্ড ব্লক ভেঙে ১১ জন কাউন্সিলরকে দলে টেনে মুর্শিদাবাদ পুরসভাও দখল করেছে তৃণমূল। অধীর চৌধুরীর জেলায় কাগজে-কলমে এখন কংগ্রেসের হাতে রয়ে গিয়েছে শুধু কান্দি পুরসভা। যদিও শাসক দলের যুবরাজের ঘোষণা, ‘‘আইনি জটিলতায় থাকা কান্দি পুরসভাও আগামী দিনে তৃণমূলে যোগ দেবে আশা করছি।’’ কান্দির কয়েক জন কাউন্সিলর আজ, বৃহস্পতিবারই যোগ দিতে পারেন তৃণমূলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy