কুড়িটি জেলা পরিষদের মধ্যে ন’টিতে এ বার কোনও বিরোধী সদস্য নেই। একই ভাবে কয়েকশো পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতও এ বার বিরোধী শূন্য হয়েছে। অগস্ট-সেপ্টেম্বরে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতগুলি গঠনের পর থেকেই তা ‘আইন মেনে’ পরিচালনার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না তো? পঞ্চায়েত পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত অনেক আমলা-কর্তাদের মনেই এখন সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
কারণ, এ রাজ্যে তৃণমূলস্তরে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে বিরোধী মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা পঞ্চায়েত আইনেই লিপিবদ্ধ করা আছে। সেই আইনে সিদ্ধান্তগ্রহণের সমস্ত কমিটিতেই বিরোধীদের রাখা এক প্রকার বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ বার যে ভাবে কয়েকশো পঞ্চায়েত সমিতি, গ্রাম পঞ্চায়েত এমনকী জেলা পরিষদও বিরোধীবিহীন হয়েছে, তাতে ‘আইন রক্ষায়’ সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন পঞ্চায়েত কর্তাদের একাংশ।
পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য কটাক্ষ করে বলেন,‘‘আইনে বিরোধী সদস্যদের গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত আইনে তো বিরোধী সদস্যদের জিতিয়ে আনার দায়িত্ব শাসক দলকে দেওয়া নেই। থাকলে আমরাই জিতিয়ে আনতাম। এখন যাঁরা জিতেছেন তাঁরাই পঞ্চায়েত চালাবেন। প্রয়োজন হলে আইন বদলাতে হবে।’’
সমস্যা ঠিক কোথায়?
পঞ্চায়েত কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, প্রতিটি জেলা পরিষদের বিরোধী নেতা বা কোনও বিরোধী সদস্যকে মাথায় রেখে জেলা কাউন্সিল গঠন করা হয়। এই কাউন্সিলের সদস্য-সচিব থাকেন জেলা পরিষদের অতিরিক্ত জেলাশাসক। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই কমিটির কাজ অনেকটা বিধানসভা বা লোকসভার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির মতো। জেলা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসাবে বিরোধী সদস্য যে কোনও পঞ্চায়েত পরিদর্শন, কাজের হিসেব চাওয়া, টাকা পয়সার লেনদেন নিয়ে জবাবদিহি করার ক্ষমতার অধিকারী। এ বার ন’টি জেলা পরিষদে সেই কাউন্সিল কী ভাবে গঠিত হবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী এই কাউন্সিল গঠন বাধ্যতামূলক। এক পঞ্চায়েত কর্তা অবশ্য বলেন,‘‘আইনি পরামর্শ করে দেখা হবে। যদি সম্ভব হয় তা হলে শাসক দলের মধ্যে থেকেই কাউকে এই কমিটির মাথায় এখন বসাতে হবে।’’
কাউন্সিল ছাড়াও পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া বিভিন্ন স্থায়ী সমিতির বৈঠকে। আইন অনুযায়ী, প্রতিটি স্থায়ী সমিতিতে এক জন করে বিরোধী সদস্য রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু আইনে এও বলা আছে বিরোধী সদস্য না থাকলে বিজয়ী সদস্যরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। বাম জমানাতেও বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত ছিল। সেখানে সিপিএম সদস্যরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য বলেছেন, ‘‘পঞ্চায়েত আইন মেনে তৃণমূল কাজ করলে তো সুষ্ঠুভাবে ভোটটাই করাত। একচেটিয়া জেতার পর বিরোধীদের পরামর্শ নিয়ে ওরা পঞ্চায়েত চালাবে এটা ভাবা অনর্থক। ফলে আইনে যা-ই লেখা থাকুক, অবাধে লুটপাটই এখন এদের মূল উদ্দেশ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy