অভিযোগের পর অভিযোগ ওঠে। তদন্ত হয়। রিপোর্ট দেয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কেন? এই প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভ বেড়ে চলেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
যাদবপুরে শ্লীলতাহানির কয়েকটি অভিযোগ ঘিরে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়েছে। নিয়ম মেনে প্রতিটি ক্ষেত্রেই তদন্তের ভার পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি (আইসিসি)। তদন্ত হয়েছে। পেশ করা হয়েছে তদন্তের রিপোর্টও। কিন্তু সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতিতে লিখিত ভাবে আবেদন জানিয়েছে যাদবপুরের শিক্ষক সংগঠন আবুটা।
শুধু শিক্ষক সংগঠন নয়, শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যেও এই নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন তদন্তের পরে যদি কারও কোনও শাস্তিই না-হয়, তা হলে আইসিসি দিয়ে তদন্ত করানোর অর্থ কী? শিক্ষকদের একাংশের আশঙ্কা, রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা না-নিলে দু’দিক থেকে সমস্যা বাড়বে। প্রথমত, অপরাধমূলক কাজকর্ম বাড়তে থাকবে। দ্বিতীয়ত, বাড়বে ভুয়ো অভিযোগ করার প্রবণতাও।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র ২০১৩ সালের নিয়ম অনুসারে কর্মক্ষেত্রে বা স্কুল, কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্লীলতাহানির, যৌন হেনস্থার মতো অভিযোগের তদন্ত করে অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটি। তদন্তের পরে সেই কমিটির রিপোর্ট প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতিতে পেশ করা হয়। আইসিসি তাদের রিপোর্টে শাস্তিরও সুপারিশ করে থাকে। সেগুলিও কর্মসমিতিতে পেশ করা হয়। সুপারিশ মেনে শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব কর্মসমিতির। যাদবপুরে বিশেষত যে-দু’টি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি শোরগোল শুরু হয়েছিল, তার প্রতিটিরই তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট জমা পড়েছে বলে আইসিসি সূত্রের খবর। কিন্তু সেই সব রিপোর্ট পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয় কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ।
গত বছর ২৮ অগস্ট এক ছাত্রীর যৌন নির্যাতনের অভিযোগকে কেন্দ্র উত্তাল হয়ে ওঠে যাদবপুর ক্যাম্পাস। তার জেরে ঘেরাও তুলতে পুলিশ ঢোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে। পড়ুয়াদের মারধরের অভিযোগে ‘হোক কলরব’ আন্দোলন শুরু হয়। পরবর্তী কালে পদত্যাগ করতে হয় তৎকালীন উপাচার্যকে। যে-যৌন নির্যাতনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে এত কাণ্ড, তার তদন্ত শেষ করে রিপোর্ট পেশ করেছে আইসিসি। কিন্তু তা কর্মসমিতিতে পেশ করা হয়নি। আনন্দবাজারে প্রকাশিত হয় সেই রিপোর্ট। তাতে যৌন নির্যাতনের অভিযোগকে পুরোপুরি সত্যি বলা হয়নি। ঘটনাটিকে বড়জোর যৌন হেনস্থা বলা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছে আইসিসি।
এ ছাড়াও চলতি বছর মার্চে এক ছাত্রীর ব্যাগ তল্লাশিকে কেন্দ্র করে গোলমাল বাধে। তার পরেই ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। তার পাল্টা আরও একটি শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। সেটিকে কেন্দ্র করে শুরু হয় ‘হোক-ন্যাপকিন’ আন্দোলন। আইন মেনে শ্লীলতাহানির অভিযোগের তদন্ত শুরু করে আইসিসি। গত ১ সেপ্টেম্বর কর্মসমিতির বৈঠকে সেই তদন্তের রিপোর্ট পেশ করা হয়। এক অভিযোগকারিণীকে লিখিত ভাবে ক্ষমা চাইতে হবে বলে সুপারিশ করে আইসিসি। কিন্তু কর্মসমিতির বৈঠকে বিষয়টি শুধু রেকর্ড করা হয়েছে। কর্মসমিতির এক সদস্য বলেন, ‘‘ওই সুপারিশ আদৌ বাস্তবায়িত করা হবে কি না, বৈঠকে তা স্পষ্ট করা হয়নি।’’
আবুটা-র যাদবপুর শাখার আহ্বায়ক গৌতম মাইতি জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এবং অভিযোগের প্রমাণ না-মিললে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। ‘‘কিন্তু আজ পর্যন্ত এই নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আর সেটা না-হওয়ায় পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়ে উঠেছে,’’ বললেন ওই শিক্ষক-নেতা।
আইসিসি রিপোর্ট পেশ করা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন?
উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘আইসিসি-র রিপোর্ট পাওয়ার পরে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, এটা ঠিক নয়। মঙ্গলবার কর্মসমিতির বৈঠকে ওই রিপোর্ট পেশের পরে দু’পক্ষকেই লিখিত ভাবে তা জানানো হয়েছে। এর পরে তাঁরা কী করবেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। তাঁরা কর্মসমিতিতে ফের আবেদন করতে পারেন।’’
কিন্তু গত বছরের ২৮ অগস্ট এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির যে-অভিযোগ উঠেছিল, তার সত্যতা পুরোপুরি প্রমাণিত না-হওয়া সত্ত্বেও কোনও রকম ব্যবস্থা নেওয়া হল না কেন?
‘‘তখন আমি ছিলাম না। তাই এই ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না,’’ বললেন উপাচার্য সুরঞ্জনবাবু।
৬০০ শিক্ষককে ল্যাপটপ
গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ল্যাপটপ দেওয়া হল। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, শুক্রবার ৬০০ জন শিক্ষককে ল্যাপটপ দেওয়া হয়। এই ল্যাপটপ কেনাকে কেন্দ্র করেই জুনে বিতর্কের শুরু হয়েছিল। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সবিস্তার রিপোর্ট চায় রাজ্যের শিক্ষা দফতর। কিন্তু এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরে শিক্ষা দফতর পিছিয়ে আসে। তার পরে ল্যাপটপ কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy