Advertisement
১১ মে ২০২৪

বামে কোন পন্থা, বিতর্ক ফেরাল জেএনইউ

হেরে গোলমাল হয়েছিল। এখন জিতেও স্বস্তি নেই! পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে লড়েছিল বামেরা। নির্বাচনে ভরাডুবি হতেই সেই ঐক্যের যৌক্তিকতা নিয়ে ঝড় উঠেছিল সিপিএমের অন্দরে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৩২
Share: Save:

হেরে গোলমাল হয়েছিল। এখন জিতেও স্বস্তি নেই!

পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে লড়েছিল বামেরা। নির্বাচনে ভরাডুবি হতেই সেই ঐক্যের যৌক্তিকতা নিয়ে ঝড় উঠেছিল সিপিএমের অন্দরে। আক্রমণে নেমেছিল বামফ্রন্টের শরিকেরা। তার কয়েক মাসের মধ্যে বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়ে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) বিপুল সাফল্য পেয়েছে বাম ছাত্র জোট। সঙ্গে সঙ্গেই আসরে নেমে পড়েছেন সিপিএমের মধ্যে প্রকাশ কারাটপন্থীরা! তাঁরা দেখাতে শুরু করেছেন, বৃহত্তর বাম ঐক্যই পথ। এর থেকে বাইরে বেরিয়ে কংগ্রেসের হাত ধরার কোনও যুক্তি নেই।

ছাত্র জোটের সাফল্যের মুহূর্তে অন্য কিছু করতে পারছেন না সীতারাম ইয়েচুরিরাও। বরং, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরি এবং রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বৃহত্তর বাম ঐক্যকে সাধুবাদই জানিয়েছেন। কিন্তু দলের অন্দরে এই শিবির পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে, জেএনইউ-এর ছাত্র ভোট আর সাধারণ নির্বাচনকে এক করে দেখলে আবার মহা ভুল হবে! সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের মতো বামফ্রন্টের বাইরের ছোট বাম দলকে সঙ্গে নেওয়াই যদি বিজেপিকে হারানোর একমাত্র রাস্তা হয়, তা হলে বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে বামেদের শোচনীয় ফল হয়েছিল কেন? প্রশ্ন তুলছেন এই অংশের নেতারা।

দীর্ঘদিনের বিরোধ ভুলে জেএনইউ-এ এ বার জোট বেঁধেছিল সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই এবং লিবারেশনের আইসা। বরাবরের বাম ঘাঁটি জেএনইউ-এর এই জোট সঙ্ঘ পরিবারের এবিভিপি-কে মাথা তুলতে দেয়নি। সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক— সব পদই এসেছে বামেদের ঝুলিতে। এই সাফল্যকে হাতিয়ার করে বঙ্গ সিপিএমের একাংশ স্লোগান তুলে দিচ্ছে, ‘তাড়িয়ে গেরুয়া, ছাড়িয়া কং, চাই শুধু লাল-লাল রং’! কিছু কিছু ঐক্য যে আসলে পশ্চাদগামিতার নামান্তর এবং কিছু ঐক্য প্রগতিশীল, জেএনএউয়ের জয় দেখিয়ে এমন প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। বৃহত্তর বাম ঐক্যের প্রবল প্রবক্তারা অবশ্য কেউ খেয়াল করছেন না, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিন্তু একই সময়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বামেদের জামানত জব্দ হয়েছে। যদিও সেখানে এসএফআই এবং আইসা-র জোট হয়নি। কিন্তু তাদের প্রাপ্ত ভোট যোগ করলেও জয়ের জায়গায় পৌঁছনো যাচ্ছে না। এই হিসেব সরিয়ে রেখে হইচই হচ্ছে শুধু কানহাইয়া কুমারের কারণে নজরে আসা জেএনইউ নিয়েই।

বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের মোকাবিলায় বৃহত্তর ধর্মনিরপেক্ষ জোটের প্রবক্তা ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘জেএনইউ-র প়়ড়়ুয়ারা জবাব দিয়েছে! কেন জেএনইউ-কে নিশানা করা হয়েছিল, সেটা ভুলে যাওয়া উচিত হবে না!’’ অর্থাৎ বাম জোটের সাফল্যকে অভিনন্দন জানিয়েও ইয়েচুরি কৌশলে মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন, কানহাইয়া-সহ ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ ও তাঁদের জেলে পাঠানোর জন্যই জেএনইউ-এ আলাদা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছিল। যার প্রতিফলন ভোটে ঘটেছে। সূর্যবাবু সরাসরিই মন্তব্য করেছেন, ‘‘জেএনইউ নির্বাচনে লাল ঝড়ের কাছে সাম্প্রদায়িক শক্তি উড়ে গিয়েছে! আন্তরিক অভিনন্দন। বামপন্থাই ভবিষ্যৎ।’’ আর লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘যারা জেএনইউ বন্ধ করতে চেয়েছিল, তাদের দোকানই বন্ধ করে দেওয়া গিয়েছে! আইসা-এসএফআইয়ের নিরঙ্কুশ রায়ের জন্য জেএনইউ-কে ধন্যবাদ।’’

সূর্যবাবুদের বামপন্থা নিয়ে গর্বের সূত্রেই সিপিএমের একাংশ প্রশ্ন তুলছে, তা হলে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়া হয়েছিল কেন? সেই ভুল কেনই বা সূর্যবাবুরা স্বীকার করেননি? দলেরই অন্য একাংশ আবার বলছে, ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে ধর্মরিরপেক্ষ সব দলকে একজোট করার মধ্যে বামপন্থার সঙ্গে আপসের প্রশ্ন নেই।

সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘গঙ্গা ধাবা থেকে যমুনা ধাবা, এর মধ্যেই জেএনইউ-এর পৃথিবী। সাধারণ নির্বাচন কি এই সূত্র মেনে হতে পারে? বিহারেই তো তার পরীক্ষা গিয়ে গিয়েছে!’’

জেএনইউ-এর সাফল্য আসলে এক বিতর্কের পুনর্জন্ম ঘটালো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

cpim jnu left unity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE