পুজোর আগেই একাধিক সরকারি হাসপাতালে ওষুধ এবং ওষুধ কেনার অর্থের ভাণ্ডার শূন্য ।
কয়েক দিনের মধ্যে টাকা দেওয়া হবে, এমন আশ্বাসও স্বাস্থ্যভবন থেকে আসেনি। ফলে শঙ্কিত একাধিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা বারবার স্বাস্থ্যভবনে দরবার করেও আশ্বস্ত হতে পারছেন না। সব চেয়ে বেশি চিন্তা কেমোথেরাপি-সহ ক্যানসারের ওষুধ, থ্যালাসেমিয়ার ওষুধ, ইনসুলিন প্রভৃতি প্রাণদায়ী ওষুধ নিয়ে।
কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক-কর্তা বললেন, ‘‘এত দিন পুজোর সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসক-সঙ্কট হতো। অধিকাংশ সিনিয়র চিকিৎসকই এই সময় ছুটিতে চলে যান। এ বার তো সেই সঙ্গে ওষুধেরও মারাত্মক আকাল হবে মনে হচ্ছে। রোগীরা না পাবেন ডাক্তার, না পাবেন ওষুধ!’’ এসএসকেএমের এক কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘ফ্রি ড্রাগ পলিসি সামলাতে আমাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে।’’
যে সমস্ত সংস্থা স্বাস্থ্য দফতরে ওষুধ এবং বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করে, তারাও অনেকে জিনিসপত্র দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বা শীঘ্রই তা করবে বলে পরিকল্পনা করেছে। কারণ, তাদের বিপুল বকেয়া জমেছে। বিশেষ করে, জিএসটি চালুর পরে গত জুলাই মাস থেকে স্বাস্থ্য দফতর কার্যত কোনও বিলের টাকা মেটাচ্ছে না বলে অভিযোগ।
নীলরতন মেডিক্যাল কলেজে যেমন দীর্ঘদিন পরে চলতি সপ্তাহে ওষুধ কিনতে দেড় কোটি টাকা দিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু সেখানে চাহিদা এত বেশি যে, তার পরেও এই মুহূর্তে সেখানে ওষুধের নন-প্ল্যান খাতে মাত্র ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা রয়েছে এবং স্পেশ্যাল প্ল্যান খাতে টাকা মাইনাস-এ (-৬৮৩৮) চলে গিয়েছে। চিকিৎসকেরাই জানাচ্ছেন, এই টাকায় বড় জোর দু’-তিন দিন চলবে। ক্যানসার এবং থ্যালাসেমিয়ার ওষুধ কেনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আউটডোরে প্যান্টোপ্রাজোল-অ্যামিপ্রাজোলের মতো সাধারণ গ্যাসের ওষুধও দেওয়া যাচ্ছে না।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২ সেপ্টেম্বর ওষুধের জন্য স্বাস্থ্যভবন থেকে ২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে দেড় কোটি-ই জিএসটি-র চার্জ মেটাতে ধরে রাখা হয়েছে। আগে যে-টুকু টাকা ছিল, তা মিলিয়ে ওষুধ কেনা গিয়েছে মাত্র ৯০ লাখের। কয়েক দিনে টাকাও শেষ, ওষুধও নেই। বৃহস্পতিবার হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠকে এই নিয়েই বেশির ভাগ আলোচনা চলে। স্বাস্থ্যভবনকেও জানানো হয়, অবিলম্বে ওষুধ কেনার জন্য ২ কোটি টাকা না দিলে কোনও রোগীকে আর কোনও ওষুধ দেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন: বিনয়ের বোর্ডকে বিপুল বরাদ্দ
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মেডিক্যালের আউটডোরে অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট বা ব্যথার ট্যাবলেট নেই। সেখানে সোম ও শুক্রবার আউটডোর থেকে ইনসুলিন দেওয়া হয়। নথিভুক্ত প্রায় ৩ হাজার রোগী। তাঁরা ইনসুলিন পাচ্ছেন না। ইন্ডোরে ক্যানসার ও ডায়াবিটিসের ওষুধ মিলছে না। এ ব্যাপারে বর্তমানে ট্রান্সপোর্ট-ড্রাগ-ইক্যুইপমেন্ট-এর দায়িত্বে থাকা দেবাশিস বসুর বক্তব্য, ‘‘কেউ সমস্যা খুলে বললে সহযোগিতা করা হয়। এখন টাকার একটু অভাব রয়েছে। কারণ, গত বছর যত লোক সরকারি হাসপাতাল থেকে ওষুধ-সামগ্রী নিয়েছেন, চলতি বছর প্রথম ৫ মাসেই তার থেকে বেশি লোক পরিষেবা নিয়ে ফেলেছেন। তা ছাড়া, জিএসটি-র ধাক্কা সামলাতেও একটু সময় লাগছে। তবে আমরা টাকা ছাড়তে শুরু করেছি।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অনেক চালু দরপত্র কয়েক বছর ধরে পুনর্মূল্যায়ন হয়নি। ফলে জিনিসের দাম বাড়া সত্ত্বেও সরবরাহকারীরা পুরনো দামে জিনিস দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁদের অনেকেই অনিয়মিত ভাবে জিনিস দিচ্ছেন। দেবাশিসবাবুর কথায়, ‘‘বিষয়টি স্বাস্থ্যসচিবেরও নজরে এসেছে। দ্রুত সমাধান করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy