তখনও ব্যাঙ্ক খোলেনি। পাইকপাড়ায় দেশকল্যাণ চৌধুরীর তোলা ছবি।
কেউ লাইন দিয়েছেন চার ঘণ্টা। কেউ বা তারও বেশি। কেউ আবার বহু ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে তখনও ব্যাঙ্ক পর্যন্ত পৌঁছতেই পারেননি। কোথাও বিশৃঙ্খলা এড়াতে গ্রাহকরা নিজেরাই লাইনে তালিকা তৈরি করছেন, তো কোথাও লাইনে হাতাহাতি। নোট বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত এবং এক দিন ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মোটামুটি ছবিটা ছিল এরকমই।
যেমন বারুইপুরের সন্ন্যাসী দাশ। সকলা ছ’টাতেই ব্যাঙ্কের সামনে চলে যান লাইন দিতে। গিয়ে দেখেন তখনই তাঁর সামনে জনা পঞ্চাশেকের ভিড়। ব্যাঙ্কের দরজা খোলার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর, সাড়ে ১০টা নাগাদ হাতে টাকা পান তিনি। যখন ফিরছেন, সেই লাইন বেড়ে গিয়েছে প্রায় ২৫০ জনে। প্রায় একই অবস্থা বারুইপুরেরই স্বপন দাসের। সাড়ে ৭টা থেকে লাইন দিয়ে টাকা পেয়েছেন ১১টা নাগাদ। তবে ২০০০ টাকার নতুন নোট পেয়ে বেজায় খুশি তিনি। বললেন, “এত ক্ষণ অপেক্ষা সার্থক হল মনে হচ্ছে।”
তবে এত ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি নির্মল অধিকারীকে। গরফায় স্টেট ব্যাঙ্কের শহিদনগর শাখায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেই কাঙ্খিত নোট হাতে পেয়ে গিয়েছেন। নতুন নোট হাতে নিয়ে উচ্ছ্বসিত তিনিও।
এসবিআইয়ের গাড়ুলিয়া শাখায় লম্বা লাইন। ছবি সজল চট্টোপাধ্যায়।
পাঁচশো, হাজার টাকার নোট বদল, জমা ও টাকা তোলার জন্য আজ, বৃহস্পতিবার থেকে ব্যাঙ্কে-পোস্ট অফিসে যে লম্বা লাইন পড়বে, সেটা মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। কিন্তু পরিষেবা ঠিক না থাকলে যে শান্তি বজায় রাখা যাবে না, তা নিয়ে ব্যাঙ্ককর্তাদের দুশ্চিন্তা ছিল বেশ। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে তাই বুধবারই রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। স্টেট ব্যাঙ্কের বেঙ্গল সার্কেলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার পার্থসারথি সেনগুপ্ত নবান্নে গিয়ে রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ করপুকায়স্থের সঙ্গে দেখা করেন। নোট-কাণ্ড ঘিরে আগামী ক’দিন যাতে আইন-শৃঙ্খলায় সমস্যা দেখা না দেয়, সে জন্য বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছেন তিনি। রাজ্যের তরফে ভরসা দেওয়া হয়েছে, যথাযথ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হবে।
তাঁর সেই আশঙ্কা যে অমূলক নয় তারও প্রমাণ মিলেছে এ দিন। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সামনে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন গ্রাহকরা। ব্যাঙ্ক অব বরোদার মাইকেলনগর শাখায় হাতাহাতি ঠেকাতে পুলিশ ডাকতে বাধ্য হন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। থিয়েটার রোডের অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের সামনে সকাল থেকেই অবশ্য লাইন সামলাতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। পাশাপাশি দেখা গিয়েছে বিপরীত চিত্রও। পাইকপাড়ার স্টেট ব্যাঙ্কের একটি শাখায় গ্রাহকদেরই দেখা গেল ব্যাঙ্ক খোলার আগে তালিকা তৈরি করে নিতে। সেই তালিকা অনুযায়ী গ্রাহকরা পরপর ঢুকেছেন ব্যাঙ্কে।
তবে ব্যাঙ্কে লম্বা লাইন থাকলেও সেই তুলনায় ভিড়টা কিন্তু একটু কম শহরের পোস্ট অফিসগুলিতে। পোস্ট অফিসগুলিতে এখনও নতুন নোট এসে না পৌঁছনর জন্যই গ্রাহকদের ভিড় তুলনামূলক কম বলে জানা গিয়েছে।
কলকাতার মতো একই অবস্থা জেলার ব্যাঙ্কগুলিরও। সব জায়গাতেই লম্বা লাইন। এমনকী লাইন পড়েছে পোস্ট অফিসগুলিতেও। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ত্রিবেণী পোস্ট অফিসে প্রায় ২৫০ লোকের ভিড়। প্রায় দু’ঘণ্টা লাইন দেওয়া পার্থবাবু বলেন, “নতুন নোট পাব না জানি। কিন্তু যে নোট গুলো বাড়িতে রয়েছে সেগুলো অন্তত অ্যাকাউন্টে জমা পড়ুক। টাকা তোলার কথা পরে ভাবা যাবে।”
আরও পড়ুন...
পুরনো নোট বদলাতে কী করবেন জেনে নিন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy