Advertisement
০৯ মে ২০২৪

ইস্পাত ছিল নিম্নমানের, উড়ালপুল-তদন্তে নেমে বলল পুলিশ

বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুলে ব্যবহৃত ইস্পাত যে নিম্নমানের তা পরীক্ষায় ধরা পড়েছিল। তা সত্ত্বেও সেই ইস্পাত দিয়েই তৈরি হয়েছিল উড়লপুলের ৪০ নম্বর স্তম্ভ। উড়ালপুল-কাণ্ডে লালবাজারের তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই নির্মাতা সংস্থার বেপরোয়া মনোভাব পরিষ্কার হচ্ছে, জানিয়েছে লালবাজারের একটি সূত্র।

শিবাজী দে সরকার
শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ২১:১২
Share: Save:

বিবেকানন্দ রোড উড়ালপুলে ব্যবহৃত ইস্পাত যে নিম্নমানের তা পরীক্ষায় ধরা পড়েছিল। তা সত্ত্বেও সেই ইস্পাত দিয়েই তৈরি হয়েছিল উড়লপুলের ৪০ নম্বর স্তম্ভ। উড়ালপুল-কাণ্ডে লালবাজারের তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই নির্মাতা সংস্থার বেপরোয়া মনোভাব পরিষ্কার হচ্ছে, জানিয়েছে লালবাজারের একটি সূত্র।

ওই ইস্পাতের যোগ্যতামান পরীক্ষার রিপোর্ট দেখার পরেও কেন কেএমডিএ কোনও ব্যবস্থা নিল না সেই প্রশ্নও তুলেছেন তদম্তকারীরা। তদন্তকারী দলের এক অফিসার বলেন, ‘‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেএমডিএ-র নজরদারির অভাব স্পষ্ট। ইস্পাত যে নিম্নমানের তা জানা সত্ত্বেও যদি কেএমডিএ-র ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকেরা তার ব্যবহার আটকাতে না পারেন তা হলে তা ফৌজদারি অপরাধের সামিল।’’

লালবাজার সূত্রের খবর, ওই উড়ালপুল নির্মাণের সময় যে ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছিলে তা পরীক্ষায় নির্ধারিত যোগ্যতামান পাশ করতে পারেনি। ফেল করা ওই ইস্পাত নির্মাণকারী সংস্থা (আইভিআরসিএল) ব্যবহার করেছিল উড়ালপুল তৈরির সময়। আর তাতেই ওই বিপযর্য় ঘটে যায় বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

লালবাজার সূত্রের খবর, কোনও নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা প্রতিটি সামগ্রী নির্দিষ্ট পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করিয়ে যদি তা যোগ্যতামান উতরে যায় কেবলমাত্র সেই সব সামগ্রী দিয়েই কাজ করতে হয়। পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ যে কোনও সামগ্রী বাতিল করে দেওয়ার কথা। নির্মাতা সংস্থা আইভিআরসিএল অন্য সামগ্রীর মতো ভিলাইয়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সরবরাহ করা ইস্পাতের নমুনাও ২০১৩ সালে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিল। সেই পরীক্ষায় ওই ইস্পাতের নমুনা পাশ করতে পারেনি। কিন্তু কার নির্দেশে সেই নিম্নমানের ইস্পাত উড়ালপুলের স্তম্ভ তৈরিতে ব্যবহার করা হল তা খতিয়ে দেখছে লালবাজার।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ভিলাই থেকে ইস্পাত আসার পরে প্রথমে তা রাখা হয় ডানকুনিতে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থার গুদামে। সেখান থেকে নির্মাণকারী সংস্থা ওই ইস্পাত নিয়ে যায় খিদিরপুরে একটি পরীক্ষাগারে। পুলিশের দাবি, সেখানে যোগ্যতমান পরীক্ষার পর জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই ইস্পাত দিয়ে সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়। যে ধরণের গুণগত মান থাকলে উড়ালপুল নির্মাণে ইস্পাত ব্যবহার করা যায় ইস্পাতের ওই নমুনায় তার অভাব রয়েছে। কিন্তু এর পরেও ওই ইস্পাত দিয়েই উড়ালপুল তৈরি হয়। উড়ালপুল-কাণ্ডের পরে নির্মাতা সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার এবং কর্তা-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রের দাবি, ধৃতদের জেরা করেই পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ইস্পাত দিয়ে উড়ালপুল তৈরির বিষয়টি জানা যায়। রাজ্য সরকার উড়ালপুল-কাণ্ডের তদন্তে যে উচ্চপর্যায়ের কমিটি তৈরি করেছে তার সদস্য খড়্গপুর আইআইটি-র বিশেষজ্ঞেরা ইতিমধ্যে নবান্নকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ৪০ নম্বর স্তম্ভে ব্যবহৃত ইস্পাতের মান যথাযথ ছিল না। ৮০ নম্বর স্তম্ভ থেকে ইস্পাতের নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করিয়ে নিয়েছিলেন ওই বিশেষজ্ঞেরা।

লালবাজার জানাচ্ছে, ভোটপর্ব মিটলেই ওই রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা এবং খিদিরপুরের ওই পরীক্ষাগারের সঙ্গে কথা বলবেন তদন্তকারীরা। পুলিশের পক্ষ থেকে ৪০ নম্বর স্তম্ভের ইস্পাতের নমুনা নতুন করে সংগ্রহ করা হয়েছে। তা পাঠানো হয়েছে সল্টলেকের জাতীয় পরীক্ষাগারে। কলকাতা পুলিশকে এই তদন্তে সাহায্য করছে রেলের সহযোগী সংস্থা রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক সার্ভিস বা রাইটস। ইতিমধ্যেই রাইটসের পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল ঘুরে গিয়েছেন। ওই বিশেষজ্ঞদের রিপোর্টের জন্য এখন অপেক্ষা করছেন লালবাজারের তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE