মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
সংখ্যালঘু দফতরের অধীনে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় যে-ভাবে চলছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে খুশি নন। তাই তিনি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক তত্ত্বাবধানের ভার নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর। সেই সঙ্গে আলিয়াকে উচ্চশিক্ষা দফতরের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনাও শুরু হয়েছে।
শিক্ষাজগৎ সূত্রের খবর, উপাচার্য আবু তালেব খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগকে ঘিরে পড়ুয়ারা দীর্ঘদিন ধরেই সরব। তাঁদের আন্দোলন এবং উপাচার্যের বিভিন্ন পদক্ষেপের জেরে আলিয়ায় যে-অচলাবস্থা চলছে, তাতে মুখ্যমন্ত্রী ভীষণ অসন্তুষ্ট। আর্থিক অনিয়ম, স্বজনপোষণ-সহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আছে ওই উপাচার্যের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ছাত্র-অসন্তোষ চরমে উঠেছে। ঘেরাও-অবস্থান লেগেই আছে। ফলে পঠনপাঠনও বিঘ্নিত হচ্ছে। উপাচার্য পথে নামা পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে পুলিশ ডাকার পাশাপাশি নানা ধরনের পদক্ষেপ করায় জটিলতা বেড়েছে বলে শিক্ষা শিবিরের একাংশের পর্যবেক্ষণ। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটানোর জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হচ্ছে সেপ্টেম্বরে। নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠনের দায়িত্ব শিক্ষামন্ত্রীকে আগেই দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পার্থবাবু বলেন, ‘‘আলিয়ায় উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আমরা কয়েকটি তালিকা তৈরি করছি।’’ আর এর মধ্যেই চলছে আলিয়াকে উচ্চশিক্ষা দফতরের আওতায় নিয়ে আসার তোড়জোড়।
আরও পড়ুন: বিচারপতি চেয়ে বিক্ষোভ
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন শুরু হয় ২০০৮ সালে। সূচনা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টি সংখ্যালঘু দফতরের অধীনে ছিল। মুখ্যমন্ত্রী সংখ্যালঘু দফতরের পূর্ণ মন্ত্রী হলেও তিনি নানান কাজে ব্যস্ত থাকায় আলিয়ার প্রশাসনিক বিষয়টি দেখেন ওই দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা। ২০১৩-র অক্টোবরে আবু তালেব উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা শুরু হয়। চার বছরে অচলাবস্থা কাটাতে ব্যর্থ গিয়াসুদ্দিনও। তাই মুখ্যমন্ত্রী চান, শিক্ষামন্ত্রী আলিয়ার বিষয়টি দেখুন।
গত প্রায় চার বছরে বিভিন্ন সময়ে নিয়োগে স্বজনপোষণ থেকে শুরু করে নানা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে আবু তালেবের বিরুদ্ধে। তাঁর পদত্যাগের দাবিতে গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে টানা ৪২ দিন অনশন করেন ছাত্রছাত্রীরা। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তথ্য অনুসন্ধান কমিটি গড়া হয়। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, সেই কমিটি রিপোর্ট দিলেও সেটি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। উপাচার্য অবশ্য বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ছাত্ররা মিথ্যা অভিযোগ করছে। তথ্য অনুসন্ধান কমিটির রিপোর্টেও আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।’’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উপাচার্য বছর চারেকের কার্যকালে আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক বার পুলিশি ব্যবস্থা নিয়েছেন। এই ধরনের শেষ ঘটনাটি ঘটে গত ১১ অগস্ট। সে-দিন নিউ টাউনে আলিয়া ক্যাম্পাসের পাশে হজ হাউসে ছাত্র-বিক্ষোভের সময়ে উপাচার্য ও সংখ্যালঘু দফতরের বিশেষ সচিব সুরেশ কুমারের সামনে পড়ুয়াদের উপরে লাঠি চালায় পুলিশ। আহত কিছু ছাত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। সেই ঘটনায় আট ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আলিয়ার পরিস্থিতি এতই খারাপ যে, বিশ্ববিদ্যালয়-চত্বরে কর্মসমিতির বৈঠক করারও সাহস পাচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আজ, বৃহস্পতিবার কর্মসমিতির বৈঠক হবে নবান্নে, সংখ্যালঘু দফতরের বিশেষ সচিবের ঘরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy