মানস ভুঁইয়া ও শান্তা ছেত্রী
তৃণমূলের রাজ্যসভার তালিকায় এ বার জোড়া পুরস্কার! কংগ্রেস ছেড়ে শাসক দলে এসে দিল্লি যাত্রার টিকিট পেলেন মানস ভুঁইয়া। আর পাহাড়ের পুরভোটে তৃণমূলের পা রাখার পাল্টা মর্যাদা দিয়ে শান্তা ছেত্রীকে রাজ্যসভার প্রার্থী করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভায় খালি হচ্ছে ৬টি আসন। তার মধ্যে তৃণমূল নিজেদের বিধায়ক-সংখ্যার জেরে ৫টি আসন সরাসরি জিতবে। সেই ৫টি আসনের জন্য রবিবার তৃণমূল নেত্রী মানস, শান্তা ছাড়াও ডেরেক ও’ব্রায়েন, সুখেন্দু শেখর রায় এবং দোলা সেনের নাম ঘোষণা করেছেন। ডেরেক রাজ্যসভায় তৃণমূলের দলনেতা ছিলেন। তাঁর এবং পারফরম্যান্সের জেরে সুখেন্দুবাবুর ফের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। আইএনটিটিইউসি নেত্রী দোলাকে অবশ্য দু’দিন আগেও তিরস্কার করেছেন মমতা। তবে তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, সৃঞ্জয় বসু ইস্তফা দেওয়ায় তাঁর মেয়াদের বাকি অংশের জন্য সাংসদ হয়েছিলেন দোলা। তাই তাঁকে এক বার পূর্ণ মেয়াদ সুযোগ দেওয়াই স্বাভাবিক।
এ বারের তালিকার মধ্যে বেশি আলোচনা অবশ্যই মানসবাবুকে নিয়ে। তৃণমূলের সাংগঠনিক দায়িত্ব পেলেও খাতায়-কলমে তিনি এখনও কংগ্রেসের বিধায়ক। দলত্যাগ নিয়ে শুনানি চলছে বিধানসভায়। এই জট থেকে তাঁকে বেরোনোর রাস্তা করে দিলেন মমতা। রাজ্যসভায় নির্বাচিত হওয়ার পরে এমনিই বিধায়ক পদ ছাড়তে হবে মানসবাবুকে। সবংয়ে তখন উপনির্বাচন হবে। বলিয়ে-কইয়ে মানসবাবু শাসক দলে নাম লিখিয়ে বিধানসভায় তেমন সুবিধা করতে পারছিলেন না। বিরোধী দলের সাংসদ হিসেবে রাজ্যসভায় তিনি আবার স্বমহিমায় আবিভূর্ত হবেন। মমতার মতে, ‘‘মানসদা অপমানিত (কংগ্রেসে) হয়েছিলেন। তাঁর একটা সম্মানের জায়গা দরকার ছিল।’’ আর মানসবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূলের সৈনিক হিসাবে নিষ্ঠা দিয়ে দলনেত্রীর দেওয়া দায়িত্ব পালন করব।’’
আরও পড়ুন: ‘এত সহজে আমার রাজনৈতিক জীবনে কালি লাগানো যাবে না’
তবে এর অন্য দিকও আছে। বিরোধীরা মনে করছে, কংগ্রেসের বিধায়ক মানসবাবুকে রাজ্যসভার টিকিট দিয়ে দল ভাঙানোয় ফের আনুষ্ঠানিক সিলেমোহর দিল তৃণমূল। এক দিকে কংগ্রেসের প্রতি তৃণমূল নরম হবে, তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজ্যসভার ষষ্ঠ আসনে প্রার্থী জেতানোর প্রস্তাব দেবে আবার কংগ্রেসেরই ঘর ভেঙে রাজ্যসভার টিকিট দেবে— দু’টো এক সঙ্গে কী ভাবে চলে, প্রশ্ন তাদের। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘মানসবাবু প্রার্থী হওয়ায় আমাদের কোনও অস্বস্তি নেই। দিদির দালালি করার পুরস্কার যা পাচ্ছেন, তাঁর জন্য ভাল! এ বার মানে মানে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিন।’’ তাঁর আরও যুক্তি, মমতা নিজের প্রয়োজনে কংগ্রেসের প্রতি নরম হওয়ার কথা বলেন। তাতে প্রভাবিত হওয়ার কিছু নেই। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমও বলেন, ‘‘মানসবাবুকে প্রার্থী করে তৃণমূল আসলে কংগ্রেসকে ভেংচি কাটল! দেখো, তোমাদের লোক ভাঙিয়ে সাংসদ করে দিলাম!’’
মিরিখে পুরভোটে জয় এবং অন্য তিনটি পুরসভায় পা রাখার পরে শান্তাকে প্রার্থী করে পাহাড়কে বার্তা দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘পাহাড়কে সকলে শোষণ করে। কিছু দেয় না। শান্তা প্রার্থী হওয়ায় আমি খুশি।’’ শান্তাও বলেছেন, ‘‘মমতাদিদি পাহাড়ে শান্তি ও উন্নয়ন এনেছেন। তাঁর নেতৃত্বে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমি খুশি।’’
গত বিধানসভা ভোটে কার্সিয়াং থেকে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়িয়ে ২৫ হাজার ভোট পেয়েছিলেন শান্তা। তখন থেকেই পাহাড়ে জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে ব্যবধান কমিয়ে আনার দৌড় শুরু তৃণমূলের। যা আরও কাছাকাছি এসেছে এ বারের পুরভোটে। প্রাক্তন জিএনএলএফ বিধায়ক শান্তাকে সাংসদ করে মোর্চাকে আরও চাপে রাখতে চাইছেন মমতা। পাশাপাশিই শান্তাকে দিয়ে টক্কর নেওয়া যাবে দার্জিলিঙের মোর্চা সমর্থিত বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সঙ্গে। সিপিএমের সমন পাঠকের পরে পাহাড় থেকে ফের রাজ্যসভায় প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে বাংলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy