Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পুরুলিয়ার অনেক এলাকায়

জলের তলায় রাস্তা, সেতু

টানা বৃষ্টিতে পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ও কজওয়ে জলের তলায় চলে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ দিকে মঙ্গলবারও বৃষ্টি বন্ধ না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠেছে।

মানবাজার-বরাবাজার রাস্তায় দুয়ারসিনি ঘাটের কজওয়ে উপচে কুমারী নদীর জল বইছে। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন সমীর দত্ত।

মানবাজার-বরাবাজার রাস্তায় দুয়ারসিনি ঘাটের কজওয়ে উপচে কুমারী নদীর জল বইছে। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন সমীর দত্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৫ ০০:৫১
Share: Save:

টানা বৃষ্টিতে পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ও কজওয়ে জলের তলায় চলে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ দিকে মঙ্গলবারও বৃষ্টি বন্ধ না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠেছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৩৬ ঘণ্টায় জেলায় ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

জলের তোড়ে সোমবার দুপুরেই বলরামপুর-বাঘমুণ্ডি রাস্তায় শোভা নদীর উপরে থাকা বিকল্প সেতুটি ভেসে যাওয়ায় এই রাস্তা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। টানা বৃষ্টিতে হুড়া ব্লকের লালপুর-কেশরগড় রাস্তায় পাতলুই নদীর উপরে থাকা করণডি সেতুটিও জলের তলায় চলে যাওয়ায় মঙ্গলবার এই রুটে কোনও যান চলাচল করেনি। সোমবার বিকেলেই মানবাজার-বরাবাজার রাস্তায় দুয়ারসিনি ঘাটের কুমারী নদীর জল বিপদসীমার উপরে বইছিল। মঙ্গলবার জল ফুলে উঠে কজওয়ের উপর দিয়ে বইতে থাকায় সারাদিন ওই রাস্তায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘‘দু’দিনে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। তবে বন্যা পরিস্থিতি কোথাও তৈরি হয়নি। কেবল বান্দোয়ানে ভালু জলাধারের কাছাকাছি থাকা কয়েকটি পরিবারকে সরাতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বলরামপুর-বাঘমুণ্ডি রাস্তায় শোভা নদীতে জল কমলে পাশের বিকল্প সেতু দ্রুত তৈরি করে দেওয়া হবে।’’

মঙ্গলবার সকালে দুয়ারসিনি ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কজওয়ে ডুবে গিয়েছে। তার উপর দিয়ে বইছে ফুলে ওঠা কুমারী নদীর জলের স্রোত। নদীর দু’পাশে কৌতুহলী জনতার ভিড়। পরিস্থিতি সরজমিনে দেখতে আসা মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি প্রভাত মাহাতো বলেন, ‘‘বৃষ্টি না ধরলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলে মনে হচ্ছে।’’ বরাবাজার-কলকাতা নাইট সার্ভিস বাসের কর্মী লালমোহন প্রামাণিক বলেন, ‘‘এ দিন সকালে দুয়ারসিনি সেতু পার হওয়া যায়নি। গাড়ি মানবাজার ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছর আটেক আগে এই রকমই বৃষ্টির তোড়ে কুমারী নদীতে বান এসেছিল। তাতে সেতুর দুই প্রান্তের ক্ষতি হয়। সংস্কারের জন্য এক সপ্তাহ ওই রাস্তার যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এ বারও তেমনই হতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। তাঁদের দাবি, পরিকল্পনায় ভুল রয়ে গিয়েছে। মানবাজারের বিডিও সায়ক দেব বলেন, ‘‘দুয়ারসিনি সেতুতে জল উঠে পারাপার বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে শুনেছি। সরজমিনে দেখে জেলা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাব।’’

বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় মানবাজার-ধানাড়া যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়েছে। জমিতে জমা জল কালভার্টের পাইপে বের হতে না পারায় এ দিন দ্বিগুণ বেগে রাস্তার উপর দিয়ে জল বইছে। তার সত্ত্বেও বাসিন্দারা ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। বান্দোয়ান-পুরুলিয়া রাস্তায় টটকো নদীর জল সেতুর উপরে উঠে যাওয়ায় মঙ্গলবার অনেক বেলা পর্যন্ত ওই রাস্তায় যানবাহন চলাচল করেনি। তবে দুপুরের পর জল নেমে যাওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বান্দোয়ান থেকে দু’কিলোমিটার দূরে চেকপোস্টের কাছে সেতুর উপরে জল দেখতে উৎসুক জনতা ভিড় জমান। স্থানীয় বাসিন্দা মহম্মদ আকিল বলেন, ‘‘সকালে জলের ভয়ঙ্কর স্রোত দেখে আমরা কেউই পারাপার করিনি। কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়ে পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। পুলিশ ও বাসিন্দারা তাঁদের বুঝিয়ে নিরস্ত করেছেন।’’

বান্দোয়ান-কুইলাপাল রাস্তায় কুইলাপালের কাছে কজওয়ের উপরে তোড়ে জল বইতে থাকায় বাঁকুড়া ও বেলপাহাড়ি যাওয়ার রাস্তায় যোগাযোগ ব্যাহত হয়। বান্দোয়ানের গুরুড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তা জলের তোড়ে ভেঙে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বান্দোয়ানের বিডিও মধুসূদন মণ্ডল বলেন, ‘‘পারগেলা জলাধারের নীচে থাকা প্রায় ২০টি শবর পরিবারকে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে। আপাতত তাদের স্থানীয় একটি স্কুলে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃষ্টির তোড়ে কয়েকটি গ্রামের সংযোগ রাস্তা ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়েছি। বিশদ খবর নেওয়ার চেষ্টা করছি।’’

বোরো গ্রাম থেকে জয়পুর হয়ে বান্দোয়ানের কুইলাপাল যাওয়ার রাস্তা রয়েছে। মঙ্গলবার জয়পুরের কজওয়েতে বুক সমান জল বইতে থাকায় ওই রাস্তায় কেউ পারাপার করার সাহস দেখাননি। আবার এই থানার দিঘি-খড়িদুয়ারা রাস্তায় দিঘি গ্রামের কাছে কজওয়েতে কোমর সমান জল বইতে থাকায় দুপুর অবধি ওই রাস্তায় যাতায়াত বন্ধ থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE