রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলিচালনা ও তাণ্ডবের ঘটনার ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। এরই মধ্যেই শুক্রবার শিক্ষক দিবস উপলক্ষে নজরুল মঞ্চে আয়োজিত সরকারি উৎসবে বক্তৃতা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ শিক্ষাঙ্গনে এই নৈরাজ্য নিয়ে একটি বাক্যও উচ্চারণ করলেন না তিনি। উপরন্তু বক্তৃতার আগাগোড়াই তাঁর মূল বক্তব্যই ছিল সরকারি কাজের খতিয়ান। সরকার ক’টা বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্কুল তৈরি করেছে, স্কুলে শৌচালয় গড়তে কতটা সাফল্য পেয়েছে তার বিস্তৃত খতিয়ান দিলেও এ দিনের অনুষ্ঠানে মমতা একবারের জন্যও রায়গঞ্জের ঘটনা উল্লেখ করেননি। অথচ এ দিন অনুষ্ঠানের মঞ্চে উপবিষ্ট রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের মধ্যে প্রথম সারিতেই বসেছিলেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনিল ভুঁইমালি। তাঁর হাত দিয়ে একাধিক পুরস্কারও দেওয়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। হাসিমুখে কথাও বললেন। শুধু বাদ থেকে গেল শিক্ষক দিবসের আগে শিক্ষাঙ্গনের নৈরাজ্যের বিষয়টিই!
আর এ রকম পরিস্থিতিতে নিজের বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অনুষ্ঠানে যোগদানই বা করলেন কী করে উপাচার্য? এ দিন অনিলবাবু জানিয়েছেন, অনুষ্ঠানে আসাটা তাঁর কাছে ‘কমপালশন’ বা বাধ্যবাধকতার ব্যাপার ছিল। কীসের বাধ্যবাধকতা? তাঁকে কি ভয় দেখানো হয়েছিল? বাধ্যবাধকতা কীসের তা ভেঙে বলেননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এই অনুষ্ঠানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। আমাকে আসতেই হত।’’ তা হলে কি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলিচলা বা বোমা পড়াটা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়? উপাচার্যের উত্তর, ‘‘মিথ্যা রটনা হচ্ছে। আমার কাছে যা খবর তাতে সেখানে গুলিও চলেনি, বোমাও পড়েনি।’’ তা হলে কার্তুজের খোল মিলল কী করে? তিনি জবাব দেন, ‘‘সব মিথ্যা প্রচার, ইচ্ছাকৃত ভাবে রটানো হচ্ছে। আমার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কর্তাদেরও কথা হয়েছে। তাঁরাও জানিয়েছেন, এইরকম কিছু হয়নি। দূরে কোথাও কোনও ঝামেলা হচ্ছিল, সেখান থেকে বোমা-গুলির শব্দ এসেছে।’’
অনিলবাবু এ দিন জানান, বৃহস্পতিবার তিনি যখন কলকাতায় আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে মাঝরাস্তায় এসেছেন তখন তাঁর কাছে গোলমালের খবর আসে। শুনে তিনি ফিরে গেলেন না কেন জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তর দেন, ‘‘ততক্ষণে পুলিশ ঝামেলা অনেক কমিয়ে ফেলেছিল।’’ কারা কেন ঝামেলা করল জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বলেন, ‘‘যাঁরা ভর্তি হতে পারেননি তাঁদের অভিভাবকেরা কিছু বাইরের লোকদের নিয়ে হামলা করেছিল।’’ মিনিট দশেকের মধ্যে অবশ্য তাঁর বয়ান বদলে যায়। তখন তাঁর মন্তব্য, ‘‘ছাত্র পরিষদের ছেলেরা কিছু বাইরের লোকদের নিয়ে কলেজে ধুন্ধুমার বাঁধিয়েছিল। কারণ ওখানে ছাত্র সংসদ এখন ওদের দখলে। সামনে আবার ছাত্র নির্বাচন আসছে। ছাত্রপরিষদ রাজনৈতিক মাইলেজ চাইছে। যাতে ছাত্র পরিষদের নিয়ন্ত্রণ অক্ষুণ্ণ থাকে।’’
রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা হোক বা মালদহের মানিকচকের স্কুল, শিক্ষক দিবসের আগের দিন সরকারি কাজের খতিয়ান দিয়ে নজির গড়লেন মুখ্যমন্ত্রী !
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy