Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাধা টপকেই অনন্য দুই

বিয়ের আগের দিন, চাইল্ড লাইনের কর্মীরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মেমারির রসুলপুরের উল্লেরায় তার বাড়ি গিয়ে বিয়ে রোখেন। কিন্তু, তাঁরা ফিরে আসার আসার সময় দৃঢ় স্বরে অঞ্জলি তাঁদের জানিয়েছিল, ‘আমায় নিয়ে চলো। তোমরা চলে গেলেই বাবা-মা আমার বিয়ে দেয়ে দেবে।’

অঞ্জলি মান্ডি

অঞ্জলি মান্ডি

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ০৩:৫৬
Share: Save:

এমনিতে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। কিন্তু, একটা জায়গায় বড্ড এক অঞ্জলি ও সূরয। কঠিন পথ পেরিয়ে দু’জনেই পাশ করেছে মাধ্যমিক। এক জন হোমে থেকে পরীক্ষা দিয়েছে। অন্য জনের ঠিকানা, এখন ‘কেয়ার অফ’ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

বাবা-মায়ের জেদের সামনে না ঝুঁকে নিজেই ফোন করে প্রশাসনকে বিয়ের ঠিক হওয়ার কথা জানিয়েছিল মেমারির অঞ্জলি মান্ডি। চলতি বছরে ফেব্রুয়ারির গোড়ায় মাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক আগেই তার বিয়ে ঠিক করেছিলেন বাবা-মা। বিয়ে আটকাতে থানা, পঞ্চায়েতে গিয়েছিল মেয়েটি। নিজেই চাইল্ড লাইনের নম্বর জোগাড় করে ফোনও করে। বিয়ের আগের দিন, চাইল্ড লাইনের কর্মীরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে মেমারির রসুলপুরের উল্লেরায় তার বাড়ি গিয়ে বিয়ে রোখেন। কিন্তু, তাঁরা ফিরে আসার আসার সময় দৃঢ় স্বরে অঞ্জলি তাঁদের জানিয়েছিল, ‘আমায় নিয়ে চলো। তোমরা চলে গেলেই বাবা-মা আমার বিয়ে দেয়ে দেবে।’

এর পরে বর্ধমানের সরকারি হোম থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া। ২৩০ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে সে। সপ্তাহখানেক আগে বাড়ি ফেরা অঞ্জলি বলে, ‘‘খুব ভাল পরীক্ষা দিতে পারিনি। তাই এখন থেকেই উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি শুরু করেছি। পড়ার খরচ জোগাড় করতে পাঞ্জাবিতে জরি বসানোর কাজ করছি এখন।” বাবা রঘুনাথবাবুর কথায়, “মেয়ের জেদের কাছে হেরে গিয়েছি। আর বিয়েতে জোর করব না।” পড়ায় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে স্কুলও।

সূরয দাস

যত টুকু জানা যায়, ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে দুমকা থেকে বাঁকুড়ায় কাজে গিয়েছিলেন দম্পতি শ্যামসুন্দর ও নীলা দাস। ভাড়া ছিলেন লক্ষ্মীপুরে। কিন্তু, ভাড়া দিতে না পারায় ঠিকানা হয়, বর্ধমান স্টেশনের এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম। সেখানেই মারা যান ওই দম্পতি। তখন অন্য এক সংস্থা সূরযকে নিয়ে যায়। কিন্তু, দিদির খোঁজ মিলছে না জেনে ফের স্টেশনে পালায় সুরজ। এ বার হাল ধরেন তাপসবাবুরা। তাঁদের দাবি, উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলে সূরযকে ফাইন আর্টস নিয়ে পড়াবেন।

জেলা প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওরা দু’জন বিরাট কোনও নম্বর পায়নি ঠিকই। কিন্তু, যে অবস্থার মধ্যে ওরা পাশ করেছে, ওদের পরিশ্রমকে কুর্নিশ না জানালেই নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madhyamik Results 2017 Struggle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE