যন্ত্রাংশ খতিয়ে দেখছেন কোস্ট গার্ডের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র
মাঝসমুদ্রে জাল ফেলেছিলেন মৎস্যজীবীরা। মাছ নয়, উঠল টুকরো টুকরো ধাতব যন্ত্রাংশ। সোমবার ভোরে ওই যন্ত্রাংশ উদ্ধারের পরে অনেকেই ভেবেছিলেন, এর সঙ্গে দিঘার শব্দ-রহস্যের যোগ রয়েছে। কিন্তু দিনের শেষে অঙ্ক মিলল না।
দিঘা থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে মাছ ধরছিলেন ‘আজমীরা’ ট্রলারের মৎস্যজীবীরা। ধাক্কা খেয়ে দাঁড়িয়ে যায় ট্রলার। মৎস্যজীবীরা ভয় পেয়ে যান। ট্রলারের মাঝি অদ্বৈত জানা বলেন, “পরে বুঝি জালে বড় কিছু জড়িয়েছে। দেখা যায়, সব ধাতব যন্ত্রের ভাঙা টুকরো।’’ ট্রলার নিয়ে শঙ্করপুর মৎস্যবন্দরে ফেরেন মৎস্যজীবীরা। আর এক মৎস্যজীবী অমলেন্দু প্রামাণিকের কথায়, “রহস্যের গন্ধ পেয়েই জালের ক্ষতি করেও পাড়ে নিয়ে এলাম যন্ত্রাংশ।’’
আরও পড়ুন: কী চাই, টোকা দিন শুধু দরজায়
রহস্য ভেদে হলদিয়া থেকে কোস্ট গার্ডের প্রতিনিধিরা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসুর নেতৃত্বে জেলা পুলিশের দল শঙ্করপুরে পৌঁছয়। সব খতিয়ে দেখে তাঁরা জানান, এই যন্ত্রাংশ বায়ুসেনার ব্যবহৃত বলেই মনে হচ্ছে। যন্ত্রাংশে এইচ.এ.এল (হিন্দুস্তান অ্যারোনোটিক্স লিমিটেড), বেঙ্গালুরু খোদাই করা রয়েছে। তবে একটা ব্যাপারে কোস্ট গার্ড এবং পুলিশ উভয়েই নিশ্চিত যে এই যন্ত্রাংশ অন্তত বেশ কিছুদিন আগে সমুদ্রগর্ভে পড়েছে। কোস্টগার্ডের ডেপুটি কমান্ডান্ট মোদিতকুমার সিংহ বলেন, “অন্তত তিন থেকে চার মাস আগে ওই যন্ত্রাংশ জলে পড়েছে।’’
বায়ুসেনার তরফে জানানো হয়েছে, যুদ্ধবিমান থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানার মহড়ায় অন্য যুদ্ধবিমান থেকে এই ধরনের যন্ত্রাংশ ‘নিশানা’ (টার্গেট) হিসেবে সমুদ্রে ফেলা হয়। তেমনই কিছু মৎস্যজীবীদের জালে জড়িয়েছে বলে বায়ুসেনার বিশেষজ্ঞদের মত। উদ্ধার হওয়া যন্ত্রাংশ আপাতত দিঘা মোহনা কোস্টাল থানার অধীন শঙ্করপুরের এফআইবি অপারেটিং স্টেশনে রাখা হয়েছে। কলাইকুণ্ডা থেকে বায়ুসেনার একটি প্রতিনিধিদল এখানে এসে যন্ত্রাংশগুলি পরিদর্শন করবে বলে জেলা পুলিশ সূত্রে খবর।
অর্থাৎ এটা পরিষ্কার যে শ্যাওলা জমা, মরচে ধরে যাওয়া ওই যন্ত্রাংশ বেশ কয়েক মাসের পুরনো। তাহলে শনিবার সকালে দিঘায় জোড়া শব্দের উৎস কী? পুলিশ-প্রশাসন এ দিনও তার ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই শব্দ যুদ্ধবিমানেরই। কলাইকুণ্ডা থেকে ওড়া সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমানের গতি শব্দের গতি ছাপিয়ে যাওয়ার সময় যে তীব্র শব্দ হয়েছিল, শনিবার তাই শোনা গিয়েছিল দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর থেকে।
কিন্তু কলাইকুণ্ডা বিমানঘাঁটি থেকে এমন বিমান হামেশাই ওড়ে। তাহলে সব সময় শব্দ শোনা যায় না কেন? বায়ুসেনার বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, যুদ্ধবিমান ‘সাবসনিক’ থেকে ‘সুপারসনিকে’ পৌঁছনোর সময় অর্থাৎ তার গতি শব্দের গতি ছাপিয়ে যাওয়ার মুহূর্তটি যদি স্থলভাগ থেকে ৪০ হাজার ফুট উপরে থাকাকালীন আসে, তাহলে সেই শব্দ শোনা যায় না। কিন্তু ওই অবস্থায় যুদ্ধবিমানের উচ্চতা মাটি থেকে ৪০ হাজার ফুটের মধ্যে থাকলে তীব্র শব্দ (সনিক বুম) তৈরি হয়। সেই শব্দ স্থলভাগ থেকে শোনা যায়। মনে করা হচ্ছে, দিঘার ক্ষেত্রে যুদ্ধবিমান মাটি থেকে খুব বেশি উচ্চতায় ছিল না। তার ফলেই শব্দের অভিঘাতে মাটিতে ফাটল, কাচ ভাঙার মতো ঘটনা ঘটেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy