নেতৃত্ব: কার্শিয়াঙের সভায় বিনয় তামাঙ্গ। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
নবান্নে সর্বদল বৈঠকের ৪৮ ঘণ্টার মাথায় বৃহস্পতিবার দুপুরে পাহাড়ে পা দিলেন বিনয় তামাঙ্গ। প্রথমে কার্শিয়াঙে জনসভা করে মানুষকে বোঝালেন, কেন আপাতত বন্ধ শিথিল করা দরকার। তার পরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিলেন, ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ তুলে নেওয়া হল। যা শুনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘ভাল খবর। আমরাও চাই পাহাড়ে শান্তি ফিরুক।’’
মোর্চার চিফ কো-অর্ডিনেটরের এই সিদ্ধান্তে রীতিমতো ক্ষিপ্ত দলের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। বন্ধ তুলতে গেলে তার ফল যে ভাল হবে না, সেই হুঁশিয়ারি তো দিয়েছেনই। তার পরে বিনয়কে চিফ কো-অর্ডিনেটর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিলেন। একই সঙ্গে জানালেন, দ্রুত বহিষ্কার করা হবে বিনয় ও অনীত থাপাকে। বৃহস্পতিবার দিনের শেষে কার্যত দু’ভাগ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
যদিও কার্শিয়াঙের সভা থেকে ‘মোর্চা এক রয়েছে’ বলেই জানিয়েছিলেন বিনয়। একই সঙ্গে বলেন, ‘‘আমআদমিকে কষ্ট না দিয়ে আন্দোলন চলবে। আমিই গোর্খাল্যান্ড আনব।’’ হাততালিতে ফেটে পড়ে সভা। ওই সভা থেকে একসঙ্গে অনেকগুলি কাজ করেন বিনয়। প্রথমত, নবান্নের বৈঠকে কী হয়েছিল, তা পাহাড়ের জনগণের কাছে খোলামেলা ভাবে জানান। একই সঙ্গে বলেন, ‘‘এত দিন রাজ্য সরকার বলত বঙ্গভঙ্গ হতে দেব না। এখন বলেছে, গোর্খাল্যান্ডের দাবি সংবিধানিক। এটা কি আমাদের জয় নয়!’’
আরও পড়ুন: রাগে ফোন ছুড়ে ফেললেন গুরুঙ্গ
দ্বিতীয়ত, সভা থেকে গুরুঙ্গকেও বার্তা দেন বিনয়। বলেন, ‘‘আমি কিন্তু আপনাকেও বাঁচাতে গিয়েছিলাম। সব মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছি। আপনি কারও কথা শুনে হাওয়ায় অডিও বার্তা দিচ্ছেন। এ সব এ বার বন্ধ করুন।’’ সর্বোপরি, গুরুঙ্গের বাধা সত্ত্বেও বন্ধ তুলতে গেলে যে জনমত গঠন করতে হবে, তা-ও করে নিয়েছেন এই সভার মাধ্যমে। রাজ্য যেখানে আলোচনায় সাড়া দিচ্ছে, আগামী দিনে কেন্দ্রও আলোচনায় বসার ইঙ্গিত দিচ্ছে, সেখানে পাহাড়বাসীরা বন্ধ চালিয়ে যাবেন কেন— এই প্রশ্ন ছুড়ে ‘হ্যাঁ কিংবা না’ জানতে চান তিনি। বন্ধের পক্ষে কিছু আওয়াজ উঠলেও কয়েক হাজার মোর্চা সমর্থকের ‘বন্ধ তোলা হোক’ আওয়াজে তা চাপা পড়ে গিয়েছে।
পরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষে বিনয় বলেন, ‘‘কেন্দ্র-রাজ্য আমাদের আবেগ ও দাবিকে মর্যাদা দিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে রাজি। তা হলে খামোকা বন্ধ চালিয়ে মানুষকে কষ্ট দেবো কেন!’’ ১২ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়িতে দ্বিতীয় দফার বৈঠক। সে দিন পর্যন্ত বন্ধ তুলে এর পরে ইতিবাচক বার্তা দেন বিনয়। জানান, গুরুঙ্গকেও সব জানানো হয়েছে।
গুরুঙ্গ এর আগেই জানিয়েছেন, জনগণের ডাকা এই বন্ধ চলবে। এর পরেও বিনয়রা লাইন বদল করায় রাতে তাঁকে চিফ কো-অর্ডিনেটরের পদ থেকে ছাঁটাই করেন গুরুঙ্গ। বিনয়-অনীতকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানানো হয়। যা শুনে বিনয় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক তো আমি ডেকেছি (তাতে ৯৩ সদস্যের মধ্যে ৩১ জন হাজির ছিলেন। গুরুঙ্গ-সহ ১৪ জন এমনিতেই গা ঢাকা দিয়ে বেড়াচ্ছেন)। তা হলে এই সিদ্ধান্ত কে, কোথায় নিল?’’
বন্ধ জারি রাখতে গিয়ে গুরুঙ্গপন্থী কেউ যদি গোলমাল করে, তা সামলাতে নিরাপত্তাবাহিনী তৎপর। পাহাড়ে বহু জায়গায় দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। বাকিটাও কি শুক্রবার খুলে যাবে? গুরুঙ্গকে অবজ্ঞা করে বিনয়দের কথা কি শুনবে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ? সেটাই এখন সব থেকে বড় পরীক্ষা বিনয়ের।
(সহ-প্রতিবেদন: প্রতিভা গিরি)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy