নিহত পূজা ও মিঠু।
শনিবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পর থেকে মেয়েটিকে আর দেখা যায়নি। সোমবার পরীক্ষা দিতে যায়নি। ওই দিনই রেশন তুলে বাড়ি ফিরেছিলেন মা। তারপর থেকে সাড়াশব্দ মিলছিল না তাঁরও। সন্দেহ হয় পড়শিদের। সোমবার রাতে বাড়িতে হাজির হন কেউ কেউ।
ঘটনাচক্রে, অন্য একটি অভিযোগের তদন্তে পুলিশ হাজির হয়েছিল বাড়িতে। বাড়ির কর্তার খোঁজে তারাই দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে। ততক্ষণে ঘর থেকে ঢিল-পাটকেল ছুড়তে শুরু করেছে গৃহকর্তা। পরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টাও করে সে।
পুলিশ ঘরে ঢুকে খাটের তলায় প্লাস্টিকে মোড়া পূজা দেবনাথ (১৬) ও মিঠু দেবনাথের (৩৬) দেহ উদ্ধার করে। জানা যায়, স্ত্রী-মেয়েকে খুন করেছে গৃহকর্তা শেখরই। তাকে প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এই বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় দেহ দু’টি। ইনসেটে, শেখর।
সোমবার রাতে হাবড়ার মছলন্দপুর ১ পঞ্চায়েতের সাদপুর এলাকার ঘটনা। উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রাথমিক তদন্তের পরে জানা গিয়েছে, বাজারে প্রচুর টাকা ধারদেনা হয়ে গিয়েছিল শেখরের। মানসিক অবসাদে ভুগছিল ওই যুবক। সে কারণেই স্ত্রী-মেয়েকে খুন করে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল।’’ পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার শেখরকে বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক দু’দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশের দাবি, শেখর জেরায় জানিয়েছে, শনিবার মেয়ে পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পরেই পিছন থেকে চ্যালাকাঠ দিয়ে তার মাথায় মারে সে। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পূজা। এরপরে শাড়ির পাড় দিয়ে তার গলায় পেঁচিয়ে খুন করে। শেখরের স্ত্রী মিঠু রেশন তুলে বাড়ি ফিরলে তাঁকেও একই ভাবে খুন করে। দু’টি দেহ একটি প্লাস্টিকে মুড়ে খাটের তলায় রেখে দেয়। দেহ দু’টি ময়না-তদন্তের জন্য বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ঘর থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট, মদের বোতল উদ্ধার হয়েছে। স্ত্রী-মেয়েকে খুনের পরে মদ-বিরিয়ানি খেয়ে ‘মোচ্ছব’ করেছিল কিনা ওই যুবক, তা জেরা করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
শেখরের আগে ব্যাগ তৈরির কারবার ছিল। সেই ব্যবসা লাটে ওঠে। এরপরে বাড়িতে পোশাক তৈরির কারখানা খোলে। বছরখানেক আগে সেই ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। চিটফান্ডে টাকা রেখেছিল ওই যুবক। সেখানেও অনেক টাকা নষ্ট হয়। এ দিকে বাড়ি তৈরির জন্য চড়া সুদে ধার নিয়েছিল। শোধ করতে না পেরে ক্রমশ মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছিল। বছর দেড়েক আগে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল বলেও দাবি পুলিশের।
রবিবার স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বিমান রায়কে ফোনে ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দিয়েছিল শেখর। কিছু দিন আগে বাড়ির পাশে একটি ঢালাই রাস্তা তৈরি করা নিয়ে শেখরের সঙ্গে বিমানবাবুর ঝামেলা বাধে। সোমবার বিমানবাবু মছলন্দপুর পুলিশ ফাঁড়িতে এ নিয়ে অভিযোগ করেন। সোমবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার তদন্তেই শেখরের বাড়িতে গিয়েছিল পুলিশ। তারপরেই জোড়া খুনের বিষয়টি সামনে আসে।
পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তাপস ঘোষ বলেন, ‘‘দেনার দায়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিল শেখর। নেশাও শুরু করেছিল।’’ তবে শেখরের পরিবারে এ নিয়ে কোনও অশান্তি ছিল বলে জানতেন না পাড়া-পড়শিরা। কেউ তাকে টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিল কিনা, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
—নিজস্ব চিত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy