Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘চোর’ মেয়েকে খুন করে কবুল মায়ের

নয়ানজুলিতে মিলেছিল বছর বারোর এক কিশোরীর দেহ। তার পরিচয় জানা যেতেই সামনে এল খুনের রহস্য। মেয়েকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল কিশোরীর মা-কে। পুলিশের জেরায়, খুনের কথা কবুলও করলেন তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২০
Share: Save:

নয়ানজুলিতে মিলেছিল বছর বারোর এক কিশোরীর দেহ। তার পরিচয় জানা যেতেই সামনে এল খুনের রহস্য। মেয়েকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল কিশোরীর মা-কে। পুলিশের জেরায়, খুনের কথা কবুলও করলেন তিনি। জানালেন, মেয়ের চুরির অভ্যাস ছিল। সেই বদনাম সহ্য করতে না পেরেই সরবতে বিষ মিশিয়ে মেয়েকে খুন করেছেন।

পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগর থানার বৃন্দাবনপুরের বাসিন্দা দীপালি কামিল্যা (১২) নামে ওই কিশোরীকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে গত বুধবার নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন বাবা প্রশান্ত কামিল্যা। শুক্রবার হেঁড়িয়া স্টেশনের কাছে জরারনগরে নয়ানজুলিতে এক কিশোরীর দেহ উদ্ধারের পরে তদন্তে নামে পুলিশ। জানা যায়, ওই দেহ দীপালির। এরপর প্রশান্ত ও তাঁর স্ত্রী যমুনা কামিল্যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় যমুনাকে। আজ, রবিবার তাঁকে আদালতে তোলা হবে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘যমুনা মেয়েকে খুনের কথা কবুল করেছেন। জানিয়েছেন, মেয়ে বারবার চুরি করত। তা নিয়ে লোকে নানা কথা বলত। সেই অপবাদ সহ্য করতে না পেরেই এই খুন।’’

জেরায় যমুনা জানিয়েছেন, স্কুল, গৃহশিক্ষকের বাড়ি, প্রতিবেশীদের বাড়িতেও চুরি করত দীপালি। লোকে তাকে ‘চোর’ বলে ডাকত। যমুনাকেও শুনতে হতো ‘চোরের মা’ ডাক। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতেই খুনের ছক কষেন তিনি। ১৩ জানুয়ারি প্রশান্ত বাড়িতে না থাকায় ওডিশার চন্দনেশ্বর শিবমন্দিরে রওনা দেন মা-মেয়ে। ১৫ জানুয়ারি যমুনা একা বাড়ি ফিরে বলেন, মেয়ে মেলায় হারিয়ে গিয়েছে। পুলিশকে যমুনা জানান, চন্দনেশ্বর থেকে ফেরার সময় সরবতে বিষফল মিশিয়ে দীপালিকে খাইয়ে দেন তিনি। অসুস্থ হয়ে পড়ে কিশোরী। তারপর হেঁড়িয়ায় বাস থেকে নেমে প্রায় সংজ্ঞাহীন দীপালিকে নয়ানজুলিতে ফেলে বাড়ি ফেরেন তিনি।

পুলিশ যমুনার সব দাবি মানছে না। দীপালিকে বাস থেকে নামিয়ে নয়ানজুলিতে ফেলে আসা বছর বত্রিশের যমুনার একার পক্ষে সম্ভব কিনা, তা নিয়ে ধন্দে তদন্তকারীরা। তাই খুনে আর কেউ জড়িত কিনা, খুনের কারণ অন্য কিছু কিনা, খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দীপালির বাবাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রশান্ত পেশায় দিনমজুর। এই দম্পতির সাত বছরের ছেলেও রয়েছে। গোবিন্দপুর হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী দীপালির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় চুরির অভিযোগ উঠেছিল বলে মানছেন পাড়া প্রতিবেশীরাও। স্থানীয় প্রদীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘মেয়েটি অনেক জায়গায় চুরি করত। এ নিয়ে পাড়ায় বৈঠকও হয়েছে।’’ কিন্তু তার জেরে তাকে মেরে ফেললেন মা? বিশিষ্ট মনোবিদ জয়রঞ্জন রামের মতে, সামাজিক সম্মানহানি থেকে বাঁচতে এই খুন করা হয়ে থাকতে পারে। তা ছাড়া মা-মেয়ের সম্পর্কের সমস্যাও এই খুনের কারণ হতে পারে। সম্পর্ক ঠিক ছিল না বলেই হয়তো মেয়েটির চুরির অভ্যাস গড়ে উঠেছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arrest murder Mother Daughter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE