পুলিশ ভ্যানে ধৃত অপর্ণা সাধু। সিউড়িতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
টানা আট দিন থানায় আটক তিনি। মহম্মদবাজারে দুই নাবালিকা বোনের হত্যার ঘটনায় এত দিন ধরে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পরে শেষমেশ মা অপর্ণা সাধুকে গ্রেফতারই করল পুলিশ।
রবিবার সিউড়ি সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব রায়চৌধুরী অপর্ণাদেবীকে দু’দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ওই হত্যা-কাণ্ডে ঠিক কোন তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এই গ্রেফতারি, তা স্পষ্ট করেনি পুলিশ। তবে, বীরভূমের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের বক্তব্য, ‘‘ভাইকে বাঁচাতে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করেছেন অপর্ণাদেবী। সেই কারণেই ওঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে, তদন্ত এখনও চলছে।’’ এই মামলার সরকারি আইনজীবী কেশব দেওয়াসিরও দাবি, ‘‘জেরায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে তদন্তে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছেন অপর্ণাদেবী। জেরায় তিনি এমন কিছু কথাও (যা তদন্তের স্বার্থে জানাতে নারাজ পুলিশ) বলেছেন, যা তাঁর বিপক্ষে গিয়েছে।’’
গত ১৬ জুন মহম্মদবাজারের কাঁইজুলি এলাকায় নিজেদের বাড়িতেই খুন হয় দুই বোন সুস্মিতা ও পুষ্পিতা সাধু। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি বঁটি ও একপাটি চটি উদ্ধার করেছিল। অপর্ণাদেবী সম্পত্তির লোভে তাঁর দেওরের পরিবার এই খুন করেছে বলে দাবি করেছিলেন। পরিবারের লোকেদের এবং পরিচিতদের দফায় দফায় জেরা করেছে পুলিশ। শেষে গ্রেফতার করা হয় নিহতদের মামা রামপ্রসাদ সাহাকে। এ বার ধরা হল মাকেও। পুলিশ সূত্রের খবর, অপর্ণাদেবীর বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় খুনের মামলাই রুজু করেছে পুলিশ।
এ দিন আদালতে প্রথমে অপর্ণাদেবীর পক্ষে কোনও আইনজীবী ছিলেন না। পরে অপর্ণাদেবীকে সহায়তা করার জন্য জেলা লিগাল সেল থেকে শঙ্খ দত্ত নামে এক জন আইনজীবীকে নিযোগ করা হয়। ধৃতকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার আবেদনের বিরোধিতা করে তিনি বিচারককে বলেন, ‘‘অপর্ণাদেবীর স্বামী দেবাশিস সাধু যে এফআইআর করেছেন, তাতে শ্যালক রামপ্রসাদের নাম থাকলেও স্ত্রীর নাম নেই। অপর্ণাদেবীকে এত দিন ধরে আটকে রেখেও পুলিশ কিছু পায়নি। এখন হেফাজতে নিয়ে কী করবে?’’ সরকারি কৌঁসুলি আদালতকে জানান, তদন্তের স্বার্থে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে অপর্ণাদেবীকে আরও জেরা করার প্রয়োজন আছে। শেষে দু’দিনের পুলিশি হেফাজত দেন বিচারক।
পুলিশের দাবি, পারিবারিক সম্পত্তির লোভেই এই খুন। তাদের আরও দাবি, জেরায় অপর্ণাদেবী জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তিনি বাড়িতে ঢোকার সময় ভাইকে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলেন। প্রথম দিকের জেরায় তিনি এই তথ্য চেপে গিয়েছিলেন। দু’জনকে জেরা করে শনিবারই বাড়ির পিছনের দেওয়ালের বাইরে থেকে আরও এক পাটি চটি পেয়েছে পুলিশ।
রামপ্রসাদের স্ত্রী চুমকি সাহা অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘পুলিশ প্রথম থেকেই অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছে। খুনের সঠিক তদন্তই হচ্ছে না। কোনও দিশা না পেয়ে সম্পত্তির লোভে খুনের তত্ত্ব খাড়া করছে পুলিশ।’’ একই সঙ্গে কোন আইনে অপর্ণাদেবীকে এত দিন ধরে থানায় আটক করে রাখা হল সে প্রশ্ন তুলেছেন শঙ্খবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখনও পর্যন্ত খুনের কোনও কিনারাই করতে পারেনি পুলিশ। শুধুই বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। নিহতদের মাকে টানা আটকে রাখার পরে গ্রেফতার করা, সেটাই প্রমাণ করে।’’
বৃহস্পতিবার কর্মস্থল ঝাড়খণ্ডে ফিরে গিয়েছেন পেশায় রেলকর্মী দেবাশিসবাবু। সেখান থেকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রীর গ্রেফতারির খবর জানতাম না। আমার স্ত্রী বা যে-ই মেয়েদের খুনি হোক, শাস্তির ব্যবস্থা করুক পুলিশ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy