Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

আকালের দিনে রক্ত দানে ডাক্তার-নার্সেরাই

দিনের পর দিন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুরা ফিরে যাচ্ছে রক্ত না পেয়ে। হিমোফিলিয়া রোগীদের পরিবারের মুখ দুশ্চিন্তায় অন্ধকার। দুর্ঘটনায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। বড়সড় অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা করার আগে ডাক্তারেরা বেশ কয়েক বার ভেবে নিচ্ছেন।

সোমা মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০৩:৪৩
Share: Save:

দিনের পর দিন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুরা ফিরে যাচ্ছে রক্ত না পেয়ে। হিমোফিলিয়া রোগীদের পরিবারের মুখ দুশ্চিন্তায় অন্ধকার। দুর্ঘটনায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়া মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা দুষ্কর হয়ে পড়ছে। বড়সড় অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা করার আগে ডাক্তারেরা বেশ কয়েক বার ভেবে নিচ্ছেন।

একে ভোটের মরসুম, সঙ্গে গরম— দুই কারণে রাজ্য জুড়ে রক্তের আকাল তীব্র। নেগেটিভ গ্রুপ হলে কথাই নেই, পজিটিভ গ্রুপের রক্তও অমিল বহু ব্লাড ব্যাঙ্কে। নির্বাচনের ফল বেরোনোর পরে রাজ্যের পরিস্থিতি কী থাকবে, সে নিয়েও দুশ্চিন্তায় অনেকে। এই পরিস্থিতিতে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের ঘাটতি মেটাতে এগিয়ে এলেন ডাক্তার, হবু-ডাক্তার, নার্সরা। রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে নিজেরাই রক্তদান করে এই আকালের দিনে রক্তের ভাঁড়ার ভরাতে উদ্যোগী হয়েছেন তাঁরা।

তালিকায় আছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এআরএস, আরজিকর-সহ বেশ কিছু হাসপাতালের নাম। শুধু ডাক্তার-নার্স নয়, রোগীদের দুর্ভোগ দেখে এগিয়ে এসেছেন হাসপাতালের অচিকিৎসক কর্মীরাও। রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে যখন অহরহ চিকিৎসা বিভ্রাটের একাধিক অভিযোগ সামনে আসে, তখন এই মানবিক ছবিটি মানুষের কাছে বড় আশ্বাস হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘ডাক্তার-নার্সদের সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি আমাদেরও উদ্বুদ্ধ করেছে। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য ভবন-সহ অন্যত্রও এই উদ্যোগ ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।’ রক্তদান শিবিরের সংখ্যা যে বহু চেষ্টা সত্ত্বেও আশানুরূপ জায়গায় পৌঁছচ্ছে না, তা মেনে নিয়েছেন রক্তদান আন্দোলনের কর্মীরাও। এমনই একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত দীপঙ্কর মিত্র বলেন, ‘‘ডাক্তার-হবু ডাক্তার-নার্সরা এগিয়ে এলে সাধারণ মানুষও উৎসাহিত হবেন। এই মুহূর্তে তাঁদের উৎসাহিত করাটা জরুরি। তাতেই মিটতে পারে রক্তের আকাল।’’ সোমবার মানিকতলা ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে ছাত্র সংগঠন ডিওয়াইএফআই-ও।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের চিকিৎসক মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রক্তের সঙ্কটে বেশি বিপাকে পড়ছে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুরা। ১০ জনের শয্যায় হয়তো ছ’টি শিশু রক্ত পাচ্ছে। রোগীর বাড়ির লোকেরা এগিয়ে আসছেন রক্ত দেওয়ার জন্য। সেটা দেখে আমরা তো চুপ করে বসে থাকতে পারি না। তাই আমরাও রক্ত দিচ্ছি। তাতে হয়তো পরবর্তী কয়েকটা দিনের সঙ্কট কাটছে।’’

আরজিকরে এক দিন রক্ত দিয়েছেন স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সদস্যরা। ব্লাড ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে টান বলে এক দিন রক্ত দিয়েছেন ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরাও। এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, ‘‘প্রতি দিন রক্তের জন্য হাহাকার দেখছি। নিজেদের খুব অসহায় লাগে। কিন্তু অসহায়তা নিয়ে চুপ করে বসে থাকলে তো সমস্যা মিটবে না। তাই আমরাও এগিয়ে এসেছি। প্রতি দিন যত রোগীর আত্মীয়রা আসেন, তাঁরাও এগিয়ে আসছেন। সকলে একজোট হলে সঙ্কট কাটবেই।’’

এগিয়ে এসেছে এনআরএসের স্টুডেন্টস ইউনিয়নও। যে এনআরএসে দিন কয়েক আগেই রক্ত সংগ্রহের পরে তা থেকে পৃথক হওয়া প্যাকড সেল যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করতে ভুলে গিয়েছিলেন ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা, সেখানেও হাসপাতালের কর্মীরাই এগিয়ে এসেছেন রক্ত দিতে। যদিও যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ না করা ওই রক্তই রোগীদের দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। হাসপাতালের এক জুনিয়র ডাক্তার বলেন, ‘‘রান্নায় টিকটিকি পড়লে কি খাওয়াবেন? তা তো নয়। তা হলে এই রক্তই বা রোগীদের দেওয়া হবে কেন? এই অনিয়মের প্রতিবাদ করেও কোনও ফল হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে নিজেরাই রক্তদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

যদিও এ সবের মধ্যেও এনআরএসে ‘অনিয়ম’–এর অভিযোগ থেমে নেই। শুক্রবারই চার মাসের এক শিশুকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। তার বাবা সন্তানের জন্য রক্ত দেন। কিন্তু সে দিন সেই রক্ত তাকে দেওয়া যায়নি। অভিযোগ, ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা ‘রিকুইজিশন’-এর কাগজ হারিয়ে ফেলেন। যে শিশুটিকে যত দ্রুত সম্ভব রক্ত দেওয়া জরুরি বলে জানান ডাক্তারেরা, সেই রক্তই তার শরীরে যায় অন্তত ১৮ ঘণ্টা পরে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Blood Bank Hemophilia Blood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE