Advertisement
১১ মে ২০২৪

রাজ্যের ভাগে টাকা কই, বিতর্ক

সান্ত্বনা একটাই। রেলের ভাঁড়ে ভবানী! তাই কোনও রাজ্যই তেমন বরাদ্দ পায়নি। বাংলাও পেল না। বরং যেটুকু পাওয়া গেল তাই নিয়ে যদি খুশি থাকা যায়! তবু এ-ও বাস্তব, আজ প্রভুর কলমের খোঁচায় পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জরুরি প্রকল্প রূপায়ণের মেয়াদ এক্কেবারে অনিশ্চিত হয়ে গেল! কত দিনে বাকি টাকা আসবে, কবে তা শেষ হবে, রেলও জানে না। কী রকম? কলকাতা শহরের মেট্রো ও সার্কুলার রেলের প্রকল্পের কথাই ধরা যাক।

শঙ্খদীপ দাস
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৪১
Share: Save:

সান্ত্বনা একটাই। রেলের ভাঁড়ে ভবানী! তাই কোনও রাজ্যই তেমন বরাদ্দ পায়নি। বাংলাও পেল না। বরং যেটুকু পাওয়া গেল তাই নিয়ে যদি খুশি থাকা যায়!

তবু এ-ও বাস্তব, আজ প্রভুর কলমের খোঁচায় পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জরুরি প্রকল্প রূপায়ণের মেয়াদ এক্কেবারে অনিশ্চিত হয়ে গেল! কত দিনে বাকি টাকা আসবে, কবে তা শেষ হবে, রেলও জানে না।

কী রকম? কলকাতা শহরের মেট্রো ও সার্কুলার রেলের প্রকল্পের কথাই ধরা যাক। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রেল বাজেটে এ সংক্রান্ত সাতটি প্রকল্পের জন্য এ বার বরাদ্দ করা হয়েছে মোট ৫৮২ কোটি টাকা। রেলের বর্তমান যা আর্থিক স্বাস্থ্য, তার নিরিখে শুধু একটি মহানগরীর জন্য এ টাকা কম কি? কিন্তু এই মুদ্রার উল্টো দিকটি হল, ওই সাতটি প্রকল্প রূপায়ণ করতে বর্তমান মূল্যে আরও প্রায় দশ হাজার চারশো কোটি টাকা দরকার। সন্দেহ নেই, সময় যত গড়াবে, মুদ্রাস্ফীতির অঙ্ক মেনে অঙ্কটা আরও বাড়বে। একই ভাবে কাঁচরাপাড়া, ডানকুনি, নোয়াপাড়া, খড়্গপুর, লিলুয়া-সহ রাজ্যের একাধিক রেল কারখানা ও ওয়ার্কশপের জন্য বাজেটে প্রায় ৯০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। বাস্তব হল, এই প্রকল্পগুলির কাজ শেষ করতেও প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। আবার তারকেশ্বর-বিষ্ণুপুর, আরামবাগ-ইরপালা নতুন লাইন নির্মাণ, লক্ষীকান্তপুর শাখায় নতুন লাইনের সম্প্রসারণ, তমলুক-দীঘা-নন্দীগ্রাম এবং দীঘা-জলেশ্বরের মতো একাধিক লাইনের কাজ এগোনোর জন্য নাম মাত্র টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অথচ ওই প্রকল্পগুলি রূপায়ণের জন্য কোথাও আরও চারশো কোটি টাকা প্রয়োজন, কোথাও আটশো কোটি, কোথাও বা ছ’শো কোটি টাকা।

প্রশ্ন হল, এ জন্য দায়ী কে?

বাজেট বরাদ্দে এই ছাঁটাই নিয়ে রাজনৈতিক আক্রমণ ও সমালোচনার ঝড় যে উঠবে, তা অজানা ছিল না। রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর। তাই তাঁর বাজেট বক্তৃতা শেষ হওয়ার পরেই রেল মন্ত্রক ব্যাখ্যা দিতে নেমে পড়ে। মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “রেলমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন, দায় তাঁর নয়। চাইলেই টাকা পাওয়া যাবে, এমন গৌরী সেনের অবস্থা আর রেলের নেই! বাজার থেকে টাকা তোলার চেষ্টা হচ্ছে। তাতে সরকার সফল হলে তবেই কাজ এগোবে।” ওই আমলার পাল্টা প্রশ্ন, “রেলের হাঁড়ির খবর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতেন না?” মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, রেলের আর্থিক অবস্থার কথা বিচার না করে কেবল মাত্র রাজনৈতিক কারণেই রেলমন্ত্রী থাকাকালীন কল্পতরু হয়েছিলেন মমতা। কিন্তু ওই বিপুল পরিমাণ টাকার যোগান দেওয়া কতটা কঠিন, তা বিলক্ষণ জানতেন মমতা বা তাঁর দলের উত্তরসূরিরা। টাকার যোগান বাড়াতে কিছুই করেননি তাঁরা। উল্টে এমন এমন পদক্ষেপ করেছেন, যাতে বোঝা বেড়েছে। উদাহরণ দিতে গিয়ে তাঁরা বলছেন, গোটা দেশে মেট্রো রেল ও শহুরে দ্রুত গতির যান ব্যবস্থার জন্য সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প গড়া হচ্ছে। যেমন দিল্লি মেট্রো বা মুম্বই, হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, কোচি মেট্রো। কিন্তু শুধু রাজনৈতিক কারণেই কলকাতায় মেট্রো রেল সম্প্রসারণের কাজ জোর করে রেলের ঘাড়ে এনে ফেলেছেন তৃণমূলনেত্রী! একই ভাবে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পকেও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ থেকে রেলে আনা হয়েছে তাঁর আমলে। অথচ বিদেশি আর্থিক সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে মেট্রো প্রকল্পগুলি যৌথ উদ্যোগে রূপায়ণের পথে হাঁটলে সেগুলির অগ্রগতি হতো। আবার বাজেটে যে ৫৮২ কোটি টাকা মেট্রোর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে, তা প্রান্তিক প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ করা যেত। অর্থাৎ এমন অন্তত পঞ্চাশটি প্রকল্প রাজ্যে রয়েছে, যেখানে আরও দশ বা পনেরো কোটি টাকা খরচ করলে আগামী অর্থবর্ষেই কাজ শেষ হয়ে যেতো। তার সুফল পেত বাংলাই।

শুধু তাই নয়, মেট্রো রেল প্রকল্পগুলিতে কম বরাদ্দের জন্য মন্ত্রকের আরও একটি যুক্তি রয়েছে। তা হল, জমি অধিগ্রহণ বা স্থানীয় সমস্যার জন্য সেখানে কাজ এগোচ্ছে না। এমনকী নির্মাণ সামগ্রী রাখার জন্যও জমি পাওয়া যাচ্ছে না! ফলে অতিরিক্ত বরাদ্দ করলেও তা খরচ হতো কি না, সন্দেহ!

কিন্তু এই তত্ত্বের কচকচি বা যুক্তিজাল কি নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সমালোচনার হাত থেকে বাঁচাতে পারবে?


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি যখন প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, তখন এই রেল বাজেট কি তাদের সমস্যায় ফেলবে না? বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য তেমনটা মনে করছেন না। কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্রেফ পপুলিজম করেছেন, কাজ করেননি! রেলের কাছে মানুষের প্রাথমিক চাহিদা যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য, পেশাদারিত্বের সঙ্গে স্টেশন পরিচ্ছন্ন রাখা, ট্রেনে খাবার ও পানীয়ের সুব্যবস্থা ইত্যাদি। মোদী সরকার তাতে অগ্রাধিকার দিয়েছে। দিল্লি ও কলকাতার মধ্যে আরও দ্রুতগামী ট্রেন চালানোর অঙ্গীকার করা হয়েছে বাজেটে।” একই সঙ্গে সমালোচনা ঠেকাতে তাঁর যুক্তি, “বড় কথা হল, আর্থিক সঙ্কট সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ যে বরাদ্দ পেয়েছে, তা পূর্ব ভারতে আর কোনও রাজ্য পায়নি।”

মন্ত্রী বাবুলের এই দাবি অবশ্য কানেই তুলছে না তৃণমূল। রাজ্যের বঞ্চনার বিষয়টিকে সামনে রেখে বাজেট পেশের পরেই সমালোচনায় মুখর হয়েছে তারা। বরাদ্দ নিয়ে বাবুলের দাবি ফুৎকারে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী বা বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। দীনেশের কটাক্ষ, “সবই প্রভুর মায়া! সে ছাড়া আর কিছু নেই বাজেটে!” রেল বাজেট বিতর্কে এ নিয়ে সরব হওয়ার প্রস্তুতি আজ থেকেই শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। একই সঙ্গে তাদের বক্তব্য, পুরভোটের আগে তৃণমূলের হাতে ভাল অস্ত্র তুলে দিয়েছে বিজেপি।

বিজেপিকে অবশ্য কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেন তৃণমূলেরই একজন! প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়! রেলভাড়া বাড়ানোর ‘অপরাধে’ দীনেশ ত্রিবেদীকে সরিয়ে মমতা যাঁকে রেলমন্ত্রী করেছিলেন। রেল বাজেট নিয়ে তৃণমূলের ঝাঁঝালো প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে দাঁড়িয়ে মুকুল এ দিন বলেন, “সাধারণ মানুষের উপর ভাড়ার বোঝা বাড়েনি, এটা সুখবর। যথেষ্ট বাস্তবসম্মত রেল বাজেট হয়েছে বলা যায়” একই সঙ্গে তাঁর কৌশলী মন্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রকল্প যেগুলি মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়, দীনেশ ত্রিবেদী এবং আমার সময়ে শুরু করা হয়েছিল, সেগুলি পূর্বতন কংগ্রেস সরকারের আমলে থমকে গিয়েছে। এগুলিকে অবিলম্বে চালু করা দরকার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rail budget shankhadwip das
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE