Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কড়াকড়ির দরকারই নেই, কমিশনকে তৃণমূল

মুকুল রায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে জানিয়ে এল— পশ্চিমবঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট ভাল। অন্য অনেক রাজ্যের থেকে এ ব্যাপারে তারা অনেক এগিয়ে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৫৭
Share: Save:

মুকুল রায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে জানিয়ে এল— পশ্চিমবঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট ভাল। অন্য অনেক রাজ্যের থেকে এ ব্যাপারে তারা অনেক এগিয়ে।

কিন্তু কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে হঠাৎ এই অভিযানের কেন দরকার পড়ল রাজ্যের শাসক দলের?

পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা ভোটে ঢালাও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগের আশ্বাস দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সপ্তাহ তিনেক আগে অশোকনগরে তাঁর বক্তব্য ছিল, পশ্চিমবঙ্গে ভোট যাতে অবাধ হয়, কেন্দ্র অবশ্যই দেখবে।

আজ নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে এই ব্যাপারে অভিযোগ জানিয়ে এল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। মুকুল রায়, সুখেন্দুশেখর রায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষদস্তিদার, সুলতান সিংহ-সহ তৃণমূলের সাত জনের প্রতিনিধি দল আজ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দলীয় সূত্রের দাবি— প্রতিনিধিরা কমিশনকে বোঝাতে চেয়েছেন, রাজ্যে এই জমানায় আইন শৃঙ্খলার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। বুথে বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠিয়ে ভোট করার মতো পরিস্থিতি একেবারেই নেই রাজ্যে। দিন কয়েক আগে মুকুল রায়কে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদ দিয়ে তাঁকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দেন মমতা। তার পরে আজই দলবল নিয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনে হাজির হলেন।

রাজ্যের বিরোধী দলগুলি ইতিমধ্যেই কমিশনের কাছে এসে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে গিয়েছে। তাদের প্রতিনিধিরা বলছেন, শাসক দল পঞ্চায়েত ও পুরভোটে বিরোধীদের ওপর যেমন আক্রমণ করেছে, সন্ত্রাস চালিয়ে সাধারণ মানুষকেও বুথ পর্যন্ত পৌঁছতে দেয়নি। বিভিন্ন বুথে অবাধে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে তৃণমূলের সমর্থকরা। সাংবাদিকরা পর্যন্ত হামলার শিকার হয়েছে। এখনও পরিস্থিতির বিশেষ পরিবর্তন হয়নি বলে কমিশনকে জানিয়েছে বিরোধী দলগুলি। রাজনৈতিক কর্মসূচির সময়ে আক্রান্ত হচ্ছে বাম, কংগ্রেস ও বিজেপি— সব ক’টি বিরোধী দলই। বীরভূম, মেদিনীপুর, বর্ধমান-সহ কয়েকটি জেলায় শাসক দলের কর্মীরা নিজেরাই বোমা-বন্দুক নিয়ে খুনোখুনি করছে। গত কালই বিজেপি নেতা মুখতার আব্বাস নকভির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল কমিশনে গিয়ে নালিশ জানিয়ে এসেছে, পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের ইশারায় কাজ করছেন পুলিশ-প্রশাসনের বেশ কিছু অফিসার। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে অবাধ ভোটের জন্য যত বেশি সম্ভব কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন।

আজ বৈঠকের পর নির্বাচন সদনের বাইরে এসে সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতায় আসায় পশ্চিমবঙ্গের মানুষ শান্তি এবং ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছেন। রাজ্যের সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল দেখে সিপিএম এবং তার লেজুড় কংগ্রেস আতঙ্কিত। তাই তারা কাঁদুনি গেয়ে প্রতিদিন এখানে প্রতিবেদন দিয়ে যাচ্ছেন। আতঙ্কের আবহ
তৈরি করছেন।’’

কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘রাজনাথ সিংহ পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে বলেছেন যে ভোটের সময় সেনা পাঠাবেন। সেনা যাবে কি যাবে না, সেটা স্থির করবে নির্বাচন কমিশন, কোনও মন্ত্রী নন। আমরা কমিশনকে বলেছি আপনারা স্বাধীন ভাবে তথ্য সংগ্রহ করুন।’’

‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো’-র একটি নথিও কমিশনের কাছে আজ জমা দিয়েছে তৃণমূল। তাতে দেখানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা অনেক রাজ্যের চেয়ে ভাল। মুকুল রায়ের কথায়, ‘‘এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর, পরিস্থিতি এখন শান্ত। পাহাড়ে গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। জঙ্গলমহলে মৃত্যু মিছিল বন্ধ হয়েছে।’’ মুকুলবাবু জানান, ভোট এগিয়ে আনার আর্জিও তাঁরা জানিয়েছেন। কারণ মে মাসে রাজ্যে অত্যধিক গরম পড়ে।

তৃণমূলের আজকের নির্বাচন কমিশন অভিযানের পরে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘ভারতে আর কোনও রাজ্য আছে, যেখানে পঞ্চায়েত নির্বাচন করানোর জন্য রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত দৌড়তে হয়েছে? আর কোনও রাজ্য আছে, যেখানে পুরভোটের মাঝখানেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারকে হাঁফিয়ে উঠে পদ ছেড়ে যেতে হয়েছে? এই সব তথ্য কমিশন নিশ্চয়ই মাথায় রাখবে।’’

কলকাতাতেও এ দিন তৃণমূলের একটি প্রতিনিধি দল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্তের সঙ্গে দেখা করেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বিধায়ক তাপস রায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

election TMC assembly commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE