Advertisement
১১ মে ২০২৪

জেহাদে মমতা একা, বাকিরা সাবধানি

পাশে রইল কেবল সিপিএম! পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল নিয়ে গতকাল নরেন্দ্র মোদীর প্রস্তাব মাটিতে পড়তেই তেড়েফুঁড়ে নেমেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! কেন্দ্রের ওই ফরমানকে তুঘলকি আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আর এক সেকেন্ডও ক্ষমতায় থাকা উচিত নয় এই সরকারের!’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৫২
Share: Save:

পাশে রইল কেবল সিপিএম!

পাঁচশো ও হাজার টাকার নোট বাতিল নিয়ে গতকাল নরেন্দ্র মোদীর প্রস্তাব মাটিতে পড়তেই তেড়েফুঁড়ে নেমেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! কেন্দ্রের ওই ফরমানকে তুঘলকি আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আর এক সেকেন্ডও ক্ষমতায় থাকা উচিত নয় এই সরকারের!’’ বুধবারও সেই বিরোধী স্বর বজায় রেখেও একটু তবু নরম মমতা। তাঁর মুখে এ বার ‘বিনীত অনুরোধ’-এর কথা। কারণ জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর তথাকথিত কোনও ‘বন্ধু’-কেই এ বিষয়ে অন্তত পাশে পাননি তিনি।

সাধারণ মানুষের হেনস্থার প্রশ্নে অন্য আঞ্চলিক দলগুলি অল্পস্বল্প উদ্বেগ জানালেও মোটের উপরে কালো টাকা রুখতে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে সমর্থনই করলেন নীতীশ কুমার-লালু প্রসাদ-অখিলেশ যাদবেরা। মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত কালো টাকা উদ্ধারে সহায়ক হবে না বললেও তেমন সুর চড়ায়নি কংগ্রেস। এমনকী, অরবিন্দ কেজরীবালও মমতার গত কালের ট্যুইটটি রিট্যুইট করা ছাড়া প্রকাশ্যে কোনও শব্দ খরচ করলেন না।

বরং, মমতার সমস্বর শোনা গেল শুধু সিপিএমের মুখে। তৃণমূল নেত্রীর মতোই সীতারাম ইয়েচুরি-সূর্যকান্ত মিশ্রদেরও বক্তব্য, ‘‘প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঢাকতেই এই গিমিকের পথে হেঁটেছেন মোদী।’’ যদিও মমতার সঙ্গে মৌলিক ফারাক রাখতেও সতর্ক ছিলেন সূর্যকান্তবাবু। তাই এও বলেন,‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে এই প্রতিবাদ মানায় না! ওঁর দলের নেতা-মন্ত্রীরা মুঠো মুঠো কালো টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তা জেনেও তাঁদের পদে বহাল রেখেছেন তিনি।’’

প্রসঙ্গত, নোট বাতিলের বিরুদ্ধে গতকাল মুখ খুলেছিল কংগ্রেসও। বুধবারও দুপুরে রাহুল গাঁধী ট্যুইট করে বলেন,‘‘মোদী যে সাধারণ মানুষের স্বার্থের কোনও খেয়াল করেন না, তা ফের একবার তিনি প্রমাণ করে দিলেন। আসল অপরাধীরা সেখানে বিদেশে টাকা জমাচ্ছেন, বা শেয়ার বা আবাসন ক্ষেত্রে টাকা লাগাচ্ছেন।’’ কিন্তু বিকেল গড়াতে বদলে যায় কংগ্রেসের সুর। সূত্রের খবর, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম সনিয়া-রাহুলকে বোঝান, কালো টাকার বিরুদ্ধে দেশের বড় অংশের মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। তাই নোট বাতিলের বিরোধিতা করলে ভুল বার্তা যেতে পারে মানুষের কাছে। মনে হবে, কংগ্রেস চাইছে না যে কালো টাকা উদ্ধার হোক। বরং এই ঘটনায় মানুষের হয়রানির প্রসঙ্গে সমালোচনা করা ভালো। চিদম্বরমের যুক্তি মেনে নেন সনিয়া-রাহুল। পরে সাংবাদিক বৈঠকে চিদম্বরম বলেন,‘‘সরকারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছে কংগ্রেস। তবে সাধারণ মানুষের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তা সরকারকে খেয়াল রাখতে হবে। মানুষের ন্যায়সঙ্গত আয় নিয়ে আয়কর বিভাগ যেন তাঁদের নাজেহাল না করে।’’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই একই ভাবনা থেকে মোদীর পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন নীতীশ-লালুরা। এমনকী, এক পা এগিয়ে নীতীশ এ-ও বলেন, ‘‘এতে দেশের অর্থনীতির লাভ হবে।’’ তা ছাড়া মোদী সরকারের এই পদক্ষেপে উত্তরপ্রদেশ ভোটে সপা-বসপা বেকায়দায় পড়বে বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হলেও, এ ব্যাপারে কেন্দ্রকে সমালোচনার পথে হাঁটেননি অখিলেশ-মায়াবতী।

প্রশ্ন হল, তা হলে তৃণমূল ও সিপিএম এতটা আক্রমণাত্মক কেন? জবাবে এ দিন সীতারাম ইয়েচুরিরা বলেন, কারণটা পরিষ্কার। কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর সব কটি বিষয়ে সব দিক থেকে ফেল করেছে মোদী সরকার। তাই কোনও একটা চমক দেখানোর জন্য মরিয়া ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই কারণেই এই
পদক্ষেপ করা হয়েছে। আজ যাঁরা তাঁকে বাহবা দিচ্ছেন, তাঁরা দু’দিন বাদেই বুঝতে পারবেন এতে কালো টাকা বন্ধ হল না।

অন্য দিকে তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, হতে পারে এ বিষয়ে কেন্দ্র বিরোধিতায় এই মুহূর্তে তৃণমূল নিঃসঙ্গ। কিন্তু গোটা ঘটনায় সমাজের সব অংশের মানুষ যে নাজেহাল ও বিভ্রান্ত তা নিয়ে সন্দেহ নেই। যে কারণে মমতা এ দিনও টুইট করে বলেছেন, ‘‘সর্বত্র নৈরাজ্য। অঘোষিত বন্‌ধ চলছে! আবারও বলছি, এই তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত।’’ তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, আম জনতার এই ‘সঙ্কটের সময়ে’ মমতা সুচিন্তিত ভাবেই তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিতে চেয়েছেন। হাটে-বাজারে গিয়ে মানুষ যে সমস্যায় পড়ছেন, তাকে নিজের সমস্যা করে নিয়েছেন। মমতার এই রাজনীতিই তাঁকে বরাবর ফল দিয়েছে। তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা, চেনা পথেই তাই হাঁটতে চেয়েছেন দিদি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE