Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
ডেঙ্গির প্রকোপ

শুধু প্লেটলেট নয়, বিপদ অন্য উপসর্গেও

ডেঙ্গি আক্রান্ত কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল। জ্বর কমা-বাড়া আর প্লেটলেটের পরিমাণ জানতেই বেশি উৎসুক ছিলেন বাড়ির লোকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৫
Share: Save:

ডেঙ্গি আক্রান্ত কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। বাড়িতেই চিকিৎসা চলছিল। জ্বর কমা-বাড়া আর প্লেটলেটের পরিমাণ জানতেই বেশি উৎসুক ছিলেন বাড়ির লোকে। অন্য মাপকাঠিগুলোর কথা মাথায় আসেনি। ফলে জ্বর অনেক কম থাকা সত্ত্বেও ছেলে যখন একেবারে নেতিয়ে পড়ল, তখন ঘাবড়ে গিয়ে তড়িঘড়ি ডাক্তার ডাকলেন তাঁরা। ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে দেখলেন, রক্তচাপ অস্বাভাবিক মাত্রায় নেমে গিয়েছে। প্লেটলেট নিয়ে অতিরিক্ত মাথা ঘামাতে গিয়ে বাকি দিকগুলিতে নজর রাখা হয়নি।

ডেঙ্গি নিয়ে ইদানীং এমন সমস্যা আকছার হচ্ছে। চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ বলছেন, প্লেটলেটের বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শুধু প্লেটলেট নয়, নজর রাখতে হবে শ্বেতকণিকা এবং প্যাক সেল-এর পরিমাণের দিকেও। অনেকেই তা করেন না। আর সেই সুযোগে অন্য সমস্যা তরতরিয়ে বেড়ে ওঠে। রক্তচাপ এক ধাক্কায় কমে যাওয়া তারই অন্যতম। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গির কারণে প্লেটলেট কমে যাওয়ার পরে আবার তা বেড়েও যাচ্ছে। কিন্তু রক্তচাপ কমে গিয়ে পরিস্থিতি এমনই জটিল হয়ে পড়ছে যে রোগীকে স্থানান্তরিত করতে হচ্ছে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে।

ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সৌরেন পাঁজা জানান, অনেক ক্ষেত্রে ডেঙ্গি শক-এর কারণে রক্তচাপ কমে যায়। ফলে দেহের ভিতরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় গোলমাল হয়ে যায়। সেটা কেমন? তিনি বলেন, ‘‘রোগ প্রতিরোধের বিষয়টা তখন বহু ক্ষেত্রেই অতিরঞ্জিত হয়ে পড়ে। অর্থাৎ যা প্রতিরোধ করা দরকার, তার বাইরেও বহু কিছু প্রতিরোধ করতে শুরু করে শরীর। একে বলে ‘ডিসরেগুলেশন’। এ ছাড়া রক্তজালিকা ফেটে যায়। শরীরের বিভিন্ন অংশে জল জমতে শুরু করে। প্রস্রাব কমে গিয়ে কিডনি বিকল হতে থাকে।’’ শ্বেতকণিকা কমে গিয়েও অনেক রোগী নানা ধরনের সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন বলে জানান তিনি। এই সংক্রমণ বেশি হচ্ছে গলা এবং বুকে।

চিকিৎসকেরা প্রায় এক বাক্যে বলছেন, ডেঙ্গির চরিত্র এ বারে এমনই গোলমেলে হয়ে উঠেছে যে কখন কোন দিক থেকে হুল ফোটাবে বোঝা মুশকিল। মেডিসিন-এর চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানান, শ্বেতকণিকার পরিমাণই সবচেয়ে আগে ডেঙ্গির সঙ্কেত দেয়। কারও হয়তো প্লেটলেট দেড়-দু’লাখ, কিন্তু শ্বেত কণিকা ২৮০০ বা ৩০০০, তা হলে ডেঙ্গির আশঙ্কা থাকে। তিনি বলেন, ‘‘এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ হল ‘প্যাক সেল ভলিউম’। এটা যদি ৪০ থেকে ৪৪-এর বেশি হয়, তা হলে রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যায়। রক্তচাপও কমে যায় দ্রুত। এ ক্ষেত্রে দ্রুত স্যালাইন চালানো দরকার।’’

জ্বর কমল মানেই ডেঙ্গি থেকে সেরে উঠলেন কেউ, এমনটাও আর ভাবা যাচ্ছে না। কারণ, ডেঙ্গি যাওয়ার আগে নিজের ছাপটা গভীর ভাবে রেখে যাচ্ছে শরীরে। ডেঙ্গির পিছু পিছু আসছে অন্য হাজারো সমস্যা। কারও লিভারের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কারও কিডনি বিকল হচ্ছে। কেউ এনসেফ্যালোপ্যাথির জেরে ভুল বকা শুরু করছেন। কারও বা ক্লান্তি আর মাথাব্যথা সঙ্গ ছাড়ছে না।

শিশুদের ক্ষেত্রে অনেকেই হাসপাতাল থেকে তাড়াতাড়ি ছুটি পাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাড়ির লোকেরাও জ্বর কমামাত্রই বাড়ি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ হল, এ ক্ষেত্রেও তাড়াহুড়ো না করে অন্তত চারটি দিকে খেয়াল রাখা দরকার। প্লেটলেট কমার পরে আবার বেড়েছে কিনা। যত জল সারা দিনে খাওয়া হচ্ছে, প্রস্রাবের পরিমাণ তার থেকে বেশি হচ্ছে কি না। টানা ৪৮ ঘণ্টা জ্বর না আসা এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকা। এগুলি একসঙ্গে থাকলে তবেই বাড়ি নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue symptoms
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE