Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘অপমানিত’ করিমুল হক

করিমুলের অভিযোগ, সকালে যখন মেয়ের জন্য রক্ত নিতে যান, তখনই তিনি ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের বলেছিলেন আরও রক্তের প্রয়োজন হতে পারে৷ কর্মীরা তখন জানান রক্ত রয়েছে, সমস্যা হবে না৷ কিন্তু দুপুরের পর রক্ত চাইতেই কর্মীরা অপমান করেন৷

জলপাইগুড়ি হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে উত্তেজিত করিমুল হক। ছবি: সন্দীপ পাল

জলপাইগুড়ি হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে উত্তেজিত করিমুল হক। ছবি: সন্দীপ পাল

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪২
Share: Save:

অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের জন্য রক্ত চাইতে যাওয়া পদ্মশ্রী করিমুল হককে অপমানের অভিযোগ উঠল জলপাইগুড়ি ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের বিরুদ্ধে৷ শনিবার দুপুরে এই ঘটনার পরে সেখানেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন করিমুল৷ যদিও ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা বা জলপাইগুড়ি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ মানতে চাননি৷

মালবাজারের রাজাডাঙায় করিমুলের বাড়িতেই থাকেন তাঁর মেয়ে শিমু বেগম৷ দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিমু শুক্রবার থেকে প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হন৷ বাড়ির কাউকে কিছু না বলে নিজে নিজেই প্যারাসিটামলও খান৷ কিন্তু শনিবার সকালে শৌচাগারে গিয়ে পড়ে যান তিনি৷ শুরু হয় রক্তক্ষরণ৷ বাড়ির লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে আসেন৷ সেখানে সিসিইউতে ভর্তি রেখে তার চিকিৎসা শুরু হয়৷ চিকিৎসকেরা তাঁকে এক বোতল রক্ত দেওয়ার পরামর্শ দেন৷ করিমুল নিজে ব্লাড ব্যাঙ্কে ছুটে গিয়ে ও পজিটিভ রক্ত জোগাড়ও করেন৷ কিন্তু দুপুরের পর চিকিৎসকেরা জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে আরও এক বোতল রক্ত দেওয়ার পরামর্শ দিলে বিপত্তি বাধে৷

করিমুলের অভিযোগ, সকালে যখন মেয়ের জন্য রক্ত নিতে যান, তখনই তিনি ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের বলেছিলেন আরও রক্তের প্রয়োজন হতে পারে৷ কর্মীরা তখন জানান রক্ত রয়েছে, সমস্যা হবে না৷ কিন্তু দুপুরের পর রক্ত চাইতেই কর্মীরা অপমান করেন৷ তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিবাদ করলে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়৷ দু’দিন আগেই আমি নিজের উদ্যোগে কাঠালগুড়িতে একটি রক্তদান শিবির করেছিলাম৷ সেখানে ১৬ বোতল রক্ত সংগ্রহ করে জলপাইগুড়ি ব্লাড ব্যাঙ্কে পাঠানো হয়েছিল৷ সে কথা বললে কর্মীরা আমায় নিয়ে হাসি-ঠাট্টা শুরু করে দেন৷’’

এর পরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন করিমুল৷ চিৎকার বলতে থাকেন, ‘‘মানুষের জন্য সব ফেলে আমি এত করি৷ সে জন্য সরকার আমায় পদ্মশ্রী পর্যন্ত দিল৷ কিন্তু আমার মেয়ের জন্য এক বোতল রক্ত চাইতে গিয়ে এ ভাবে আমায় অপমানিত হতে হবে! আমি এর বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ জানাব৷’’ আশপাশ থেকে রোগীর আরও কয়েকজন আত্মীয় ছুটে এসেও ব্লাড ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন৷ শেষ পর্যন্ত শিমু বেগমের স্বামী ছুেট এসে তাঁর স্ত্রীর জন্য রক্ত দেন৷

ব্লাড ব্যাঙ্ক বা হাসপাতাল কেউ-ই অভিযোগ মানতে চায়নি৷ ব্লাড ব্যাঙ্কের এক কর্মী তন্দ্রা দত্ত বলেন, ‘‘উনি যখন রক্ত চাইতে এসেছিলেন তখন ব্যাঙ্কে তা ছিল না৷ অপমান বা দুর্ব্যবহারের প্রশ্নই ওঠে না৷’’ ভারপ্রাপ্ত সুপার সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘একটি শিবির থেকে কিছুক্ষণের মধ্যে রক্ত আসার কথা ছিল৷ সেটা এলেই তাঁকে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল৷’’

তিনি জানান, কর্মীরা ওনাকে বোঝান ব্যাঙ্ক থেকে একেকদিন গড়ে ৪০-৫০ বোতল রক্ত রোগীরা নেন৷ তাই ওঁর দেওয়া রক্ত হয়তো শেষ হয়ে গিয়েছে৷ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘বিষয়টি আমি শুনেছি৷ কিন্তু এখন আমাদের লক্ষ্য রোগীকে বাঁচানো৷ সে যাতে রক্ত পায় তা নিশ্চিত করা৷ তারপর এ ব্যাপারে যা বলার বলব৷’’

রাতে হাসপাতালে করিমুলের মেয়েকে দেখতে গিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মন। তিনি বলেন, ‘‘করিমুলের মেয়ে এখন আগের চেয়ে কিছুটা ভাল আছে। রক্তের সঙ্কট মিটেছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE