গার্ডেনরিচ এলাকার রামনগর লেনে সন্দেহভাজন আইএসআই এজেন্ট ইরশাদের বাড়ি। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
গার্ডেনরিচে ইরশাদ আনসারির বাড়ির অতিথি যুবকের হাবভাব দেখেই সন্দেহ জেগেছিল রামনগর লেনের বাসিন্দাদের। কে ওই যুবক, কেউ কেউ প্রশ্ন করেন গৃহকর্তা ইরশাদ এবং তাঁর ছেলেকে। জবাব মেলেনি। যুবকটি কবে ওই ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছিল, তা-ও জানতে পারেননি ইরশাদের ফ্ল্যাটবাড়ির বাসিন্দারা।
আগন্তুক যে পাকিস্তানের গুপ্তচর বলে অভিযুক্ত, রবিবার টিভি দেখে সেটা জানতে পেরেছে রামনগর লেন। তত ক্ষণে পাক চর সন্দেহে পুলিশ গ্রেফতার করেছে ইরশাদ, তাঁর ছেলে আসফাক আনসারি এবং শ্যালক মহম্মদ জাহাঙ্গিরকে। এ দিন বিকেলে ঘিঞ্জি রামনগর লেনে দাঁড়িয়ে এক বাসিন্দা বললেন, এই মহল্লায় লোকে রাত পর্যন্ত রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়, পড়শিকে দেখলেই গল্প জুড়ে দেয়। কিন্তু ফর্সা, লম্বা চেহারার ওই ছেলেটা বেশির ভাগ সময় ইরশাদের ঘরেই থাকত। মাঝেমধ্যে বাইরে বেরোলেও কথা বলা তো দূরের কথা, কারও দিকে মুখ তুলে তাকাতই না।
আগন্তুককে নিয়ে কৌতূহল থাকলেও ইরশাদ চরবৃত্তি করতে পারেন, তা বিশ্বাস করতে পারছেন না এলাকার অনেকেই। এক জন বললেন, ‘‘ইজাজ নামে ওই ছেলেটার জন্যই ইরশাদ ফেঁসে গেল।’’ পুলিশ বিকেলে কোমরে দড়ি পরিয়ে ইরশাদকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। তা দেখে আক্ষেপ করেন অনেকে। এক বাসিন্দা জানান, বাবাকে ওই অবস্থায় দেখে ইরশাদের মেয়ে সায়রিন অজ্ঞান হয়ে যায়। অসুস্থ হয়ে পড়েন ওঁর স্ত্রীও।
গলি, তস্য গলিতে তেতলার ঘুপচি ফ্ল্যাট। দোতলায় উঠতেই এক জন বন্ধ দরজা দেখিয়ে বললেন, ‘‘ওটাই ইরশাদের ফ্ল্যাট।’’
দরজায় টোকা দিতেই একটি জানলার একটি পাল্লা খুলে গেল। এক তরুণী মুখ বাড়িয়ে বললেন, ‘‘দয়া করে চলে যান। আমরা কিছু বলব না।’’ বন্ধ হয়ে গেল জানলা। ফেরার পথে ওই বাড়ির এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘ওটাই ইরশাদের মেয়ে।’’ ওই বাড়িতেই থাকেন বন্দরের তৃণমূল নেতা সামসুজ্জামান আনসারির ভাগ্নি। মেয়ের বাড়িতে এসেছিলেন সামসুজ্জামানের বোন সাজিদা বানু। পাক চরের প্রসঙ্গ শুনেই বললেন, ‘‘আমি মেয়েকে দিতে এসেছি। এ-সব ব্যাপারে কিছু জানি না।’’
বাসিন্দারা জানান, ইরশাদ চুপচাপ থাকতেন। কাজকর্ম নিয়ে তেমন কথা বলতেন না। বাড়িতে কারা আসছে-যাচ্ছে, সেই প্রশ্নেরও স্পষ্ট উত্তর দিতেন না। আসফাক অবশ্য পাড়ায় নিয়মিত টহল দিত। হরিমোহন ঘোষ কলেজে রাজনীতির সূত্রে এলাকায় ‘মাতব্বরি’র হাবভাবও ছিল। গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্সে ঠিকা শ্রমিক হওয়ার সূত্রে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সদস্য ছিলেন ইরশাদও।
২০১২ সালের ৮ অগস্ট রামনগর লেন থেকে এক কিলোমিটার দূরে মসজিদ তালাওয়ে বিস্ফোরণ হয়। তখন স্থানীয় নেতা এবং পুলিশের একাংশ সেটাকে দেশি বোমা ফাটার ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করলেও গোয়েন্দারা জানান, আসলে ফেটেছিল কোনও জঙ্গি গোষ্ঠীর তৈরি আইইডি। এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘বিস্ফোরণের পরে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা নিলে এবং নজরদারির বন্দোবস্ত করলে এ দিনটা দেখতে হতো না। ইজাজ ও ইরশাদের জন্য পাড়ার বদনাম হয়েছে।’’
বছর তিনেক আগে মেটিয়াবুরুজ থেকে শের খান নামে এক ব্যক্তির এই ফ্ল্যাটবাড়িতে উঠে আসেন ইরশাদ। শের মারা গিয়েছেন। তাঁর আত্মীয় থাকেন ইরশাদের ফ্ল্যাটের উপরে। এ দিন তিনি কিছু বলতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy