Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ফেরার পথ নেই, বাড়ি বেচে দিলেন নিহত ছাত্রীর বাবা

দু’বছর আগের এক রাতে ওই বাড়ির দরজার সামনেই পাওয়া গিয়েছিল উল্টে থাকা একপাটি ছেঁড়া চটি। বাবা-মা বুঝেছিলেন, বাড়ির সামনে থেকেই ওরা মেয়েকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে।

অনির্বাণ রায়
ধূপগুড়ি শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:১৪
Share: Save:

দু’বছর আগের এক রাতে ওই বাড়ির দরজার সামনেই পাওয়া গিয়েছিল উল্টে থাকা একপাটি ছেঁড়া চটি। বাবা-মা বুঝেছিলেন, বাড়ির সামনে থেকেই ওরা মেয়েকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছে।

এই বাড়ির দেওয়ালে, উঠোন জুড়ে এখনও মেয়ের স্মৃতি। দশ মাস আগে আর এক গভীর রাতে হুমকির মুখে এই বাড়িই ছাড়তে হয়েছিল গোটা পরিবারকে। তার পর থেকে এক রাতের জন্যও আর বাড়িতে থাকতে পারেননি তাঁরা। প্রশাসনের আশ্বাস সত্ত্বেও নয়।

নতুন ইংরেজি বছরের প্রথম দিন ৪ কাঠার সেই বাড়িটা অর্ধেক দামে বেচে দিলেন ধূপগুড়ির নিহত দশম শ্রেণির সেই ছাত্রীর বাবা। বিক্রির প্রথম কিস্তি বাবদ দশ হাজার টাকাও পেয়েছেন তিনি।

সেটা ছিল ২০১৪ সালের ২ সেপ্টেম্বরের ঘটনা। ধূপগুড়ির মধ্যপাড়ায় তৃণমূল নেতার ডাকা সালিশি সভায় বাবাকে মারধরের প্রতিবাদ করেছিল দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী। সেই ‘অপরাধে’ সভার মাতব্বরেরা তাকে থুতু চাটতে নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, চুলের মুঠি ধরে মারধরও করা হয়। সালিশি সভা থেকে মেয়েটি পালিয়ে যায়। কয়েক জন তখনই অন্ধকারে তার পিছু নেয় বলে অভিযোগ। রাতভর ছাত্রীর হদিস মেলেনি। পর দিন সকালে বাড়ির পাশে রেললাইনের ধারে তার বিবস্ত্র ছিন্নভিন্ন দেহ মেলে। মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ করে তৃণমূল নেতা-কর্মী-সহ সভায় থাকা ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ছাত্রীর বাবা। তার পর থেকেই লাগাতার হুমকি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ।

সেই হুমকির ধাক্কায় গত ফেব্রুয়ারিতে স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন ছাত্রীর বাবা। সেখানে গোয়ালঘর মেরামত করে তাতেই থাকছেন এখন। লিজে দু’বিঘা জমি নিয়ে মরসুমি চাষ করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। বললেন, ‘‘ছেলেমেয়ে দুটোর হাজারো কষ্ট সত্ত্বেও গোয়ালঘরেই থেকেছি। আশা ছিল কোনও দিন হয়তো নিজের বাড়িতে ফিরতে পারব।’’ কিন্তু থানা-পুলিশকর্তাদের বহুবার বলেও কাজ হয়নি, বলছেন তিনি। বলছেন, ‘‘রফা না করলে বাড়ি ফিরতে দেওয়া হবে না বলে কয়েক জন রোজ শাসাচ্ছে।’’ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘‘মেয়েটা আমার একটু জেদিই ছিল। আমিও জেদ করে বসেছিলাম, বাড়িতে ফিরবই। কিন্তু তা আর হল না।’’

এলাকার বাসিন্দারা আড়ালে সহানুভূতি দেখালেও প্রকাশ্যে পাশে দাঁড়াতে পারছেন না। বিক্রিতে প্রথমে সায় ছিল না ছাত্রীর মায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘একবার ভেবেছিলাম নিজের বাড়িতে ফিরে যাব। পরে ভয় হয়, রাতে যদি আবার হামলা চালায় ওরা!’’

ধূপগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক মিতালী রায় জানান, ওই পরিবার কেন বাড়ি বিক্রি করছেন সেটা খোঁজ নেবেন। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, ‘‘ছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের কী অভিযোগ-সমস্যা, সব আমাদের জানা। নিশ্চয়ই পদক্ষেপ হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Raoe and Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE