কলকাতা থেকে যাদবপুর হয়ে সম্প্রতি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়েও সরকারের তরফে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অভিমানী গলায় জানিয়ে দিলেন, স্বাধিকারের প্রশ্ন তুললে কেউ যেন কলেজের গোলমাল নিয়ে তাঁর কাছে না-যায়! কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার রক্ষা করতে গিয়ে তিনি নিজের অধিকার কী ভাবে জলাঞ্জলি দিয়েছেন, তা-ও জানান পার্থবাবু।
মঙ্গলবার নিউ টাউনের সরকারি কলেজের নতুন ভবন উদ্বোধন করতে গিয়ে পার্থবাবু বলেন, ‘‘অনেকে (শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের) স্বাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু তাতে তো আমারই অধিকার নষ্ট হচ্ছে!’’
কেন তিনি এমন মন্তব্য করলেন, তার ব্যাখ্যাও দেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘কোথাও দুর্নীতি হলে আমি কিছু বলতে পারব না! কোথাও ছাত্রদের হস্টেল খারাপ, অথচ শিক্ষকদের ল্যাপটপ দেওয়া হচ্ছে। সেখানেও আমি কিছু বলতে পারব না!’’ তার পরেই কিছুটা অভিমান মেশানো গলায় পার্থবাবু মন্তব্য করেন, স্বাধিকারই যদি চাওয়া হয়, সে-ক্ষেত্রে কলেজের ঝামেলায় কেউ যেন তাঁর দ্বারস্থ না-হন।
রাজ্য সরকার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অর্থ দেয়। তাই শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারেন বলে সম্প্রতি প্রকাশ্যেই দাবি করেছিলেন পার্থবাবু। শিক্ষামন্ত্রীর সেই মন্তব্য নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। তার পর থেকে স্বাধিকারের প্রশ্নে তিনি মোটামুটি নীরবই ছিলেন। তবে স্বাধিকারে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠা বন্ধ হয়নি। তাই এ দিন নিউ টাউনে নতুন সরকারি কলেজের নতুন ভবনের উদ্বোধন করতে গিয়ে স্বশাসন এবং স্বাধিকার নিয়ে সরব হলেন শিক্ষামন্ত্রী।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গোলমালের ঘটনায় উপাচার্যের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব, ফিনান্স অফিসারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে শিক্ষাবিদদের তোপের মুখে পড়েছিলেন পার্থবাবু। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ল্যাপটপ কেনা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পরেও সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রেসিডেন্সির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলি করে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছিল।
এই সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে স্বাধিকার নিয়ে পার্থবাবুর এ দিনের মন্তব্যে শিক্ষাবিদদের একাংশ বিস্মিত। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসু বলেন, ‘‘ছাত্রদের উপদেশ দেওয়া বা শিক্ষকদের আবেদন-নিবেদন করে কোনও কিছু বলা হলে সেটা হস্তক্ষেপ হয় না। কিন্তু কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি অধিকার খর্ব করে সরকার যদি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চায়, তবে সেটা অবশ্যই স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ হবে।’’
আলোচনা-পরামর্শ করা আর স্বাধিকারে নাক গলানোর তফাত ব্যাখ্যা করেছেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকারও। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কোনও শিক্ষকের শিক্ষাদানের পদ্ধতিতে পড়ুয়ারা অসন্তুষ্ট হলে শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু পুরোটাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হওয়া বাঞ্ছনীয়। দুর্নীতি হলে প্রতিষ্ঠান যদি কোনও ব্যবস্থা না-নেয়, তিনি পদক্ষেপ করতে পারেন। কিন্তু আগ বাড়িয়ে সরকার এগিয়ে গেলে সেটা অবশ্যই স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ।’’
রাজ্য সরকার কোনও অবস্থাতেই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারে না বলে মনে করেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কোনও শিক্ষক যদি ঠিকঠাক পড়াতে না-পারেন, প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতি, প্রতিষ্ঠানের প্রধান সেই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। রাজ্য সরকার তার মধ্যে যাবে কেন? এটা হলে অবশ্যই বলতে হবে, স্বাধিকার হস্তক্ষেপ করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy