Advertisement
০২ মে ২০২৪
নির্দেশ ডাক্তার, নার্সিংহোমকে

রোগীর মৃত্যু, ক্ষতিপূরণ ১০ লক্ষ টাকা

অভিযোগ ছিল চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যুর। সেই ঘটনায় বর্ধমানের এক চিকিৎসক ও একটি নার্সিংহোমকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১৭
Share: Save:

অভিযোগ ছিল চিকিৎসায় গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যুর। সেই ঘটনায় বর্ধমানের এক চিকিৎসক ও একটি নার্সিংহোমকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।

স্বামীর মৃত্যুর বিচার চেয়ে ওই চিকিৎসক ও নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছিলেন মঙ্গলকোটের কৈচরের বাসিন্দা পার্বতী সাঁতরা। ২০০৫ সালে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেন তিনি। ২০১৩ সালে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত তাঁর আবেদন খারিজ করে দেয়। জেলা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন মৃতের স্ত্রী। গত ২০ নভেম্বর জেলা আদালতের রায়ের তীব্র সমালোচনা করে রাজ্য ক্রেতা আদালত সাফ জানিয়েছে, রায় বেরোনোর দেড় মাসের মধ্যে চিকিৎসক ও নার্সিংহোমকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, বর্ধমানের মঙ্গলকোটের বাসিন্দা স্বপন সাঁতরা (২৭) জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা নিয়ে গত ২০০৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বর্ধমানের খোসবাগানে চিকিৎসক শান্তনু রায়ের চেম্বারে যান। শান্তনুবাবুর পরামর্শে সে দিনই স্বপনকে জীবনদীপ নার্সিংহোমে ভর্তি করান তাঁর পরিবারের লোকেরা। ওই নার্সিংহোমে শান্তনবাবুর তত্ত্বাবধানেই ভর্তি হয়েছিলেন স্বপন। ইউএসজি পরীক্ষা করানোর পরে চিকিৎসক জানান, তাঁর ফুসফুসে জল জমে রয়েছে। ফুসফুস থেকে জল বার করার জন্য রোগীকে পরের দিন দুপুরে নার্সিংহোমের পাশে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানো হয়। অভিযোগ, রোগীর ফুসফুস থেকে জল বার করার সময়ে এক জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি বাঞ্ছনীয় হলেও স্বপনের ফুসফুস থেকে জল বার করার কাজ করেছিলেন এক টেকনিশিয়ান।

স্বপনের দাদা অবধূত সাঁতরার অভিযোগ, ‘‘ভাইয়ের ফুসফুসে সিরিঞ্জ ফোটানোর পরে জলের বদলে রক্ত বেরিয়ে এসেছিল। প্রথম বার সিরিঞ্জ ফুটিয়ে রক্ত বেরোনোর পর দ্বিতীয়, তৃতীয় বারেও রক্ত বেরিয়ে আসে। এর পরেই ভাইয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।’’ অভিযোগ, রোগীর অবস্থার অবনতির কথা সেই সময়ে চিকিৎসক শান্তনু রায়কে জানানো হলেও তিনি আসেননি। ওই দিন বিকেলেই ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে নার্সিংহোমে রোগীকে আনা হয়। রোগীর পরিবারের অভিযোগ, নার্সিংহোমে আনার পরে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে। সে দিন রাত পর্যন্ত চিকিৎসক নার্সিংহোমে আসেননি। রাত দশটা নাগাদ স্বপনবাবু মারা যান।

স্বামীকে অকালে হারানোর পাঁচ মাস পরেই ক্ষতিপূরণের মামলা করে জেলা ক্রেতা আদালতের দ্বারস্থ হন পার্বতীদেবী। আট বছর পরে ২০১৩ জেলা ক্রেতা আদালত মামলাকারীর আবেদন খারিজ করে দেয়। পরের মাসেই জেলা ক্রেতা আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য ক্রেতা আদালতের দ্বারস্থ হন পার্বতীদেবী। চলতি বছরের ২০ নভেম্বর রাজ্য ক্রেতা আদালতের বিচারক ঈশান চন্দ্র দাস এবং তারাপদ গঙ্গোপাধ্যায় জেলা আদালতের রায়কে ভর্ৎসনা করে বলেন, ‘‘বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের মতামতকে উপেক্ষা করে একতরফা ভাবে এই রায় দেওয়া হয়েছিল। যা অনুচিত।’’ দুই বিচারক স্পষ্ট জানান, রোগীর মৃত্যুর দায় চিকিৎসক শান্তনু রায় এড়াতে পারেন না। তাঁর কর্তব্যে গাফিলতির জন্যই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। জীবনদীপ নার্সিংহোমও যে রোগীকে সুষ্ঠু পরিষেবা দিতে পারেনি, তা পরিষ্কার।

এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ফুসফুস থেকে জল বার করার কাজটা এক জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকই করেন। এ ক্ষেত্রে ফুসফুস থেকে জল না বেরিয়ে রক্ত বেরোনোয় প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, রোগীর শিরা, উপশিরা বা হৃৎপিণ্ডে আঘাত লাগার সম্ভাবনা প্রবল। যাঁর অধীনে ওই রোগী ভর্তি ছিলেন, সেই চিকিৎসকের আরও বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন ছিল।’’ এই রায় প্রসঙ্গে চিকিৎসক শান্তনুবাবুর মন্তব্য জানতে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন তোলেননি। এসএমএস করা হলেও উত্তর দেননি। জীবনদীপ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরাও কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE