Advertisement
১১ মে ২০২৪

বেতন-বৈষম্যে ক্ষোভ দেখেও এ রাজ্যের সরকার রা কাড়ছে না

সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ দিল্লি মেনে নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতনের ফারাক যাই দাঁড়াক, আপাতত তা নিয়ে মুখ খুলবে না মমতার সরকার। বৃহস্পতিবার বিধানসভা ও নবান্নে এ প্রসঙ্গে যাবতীয় প্রশ্নের জবাবে কার্যত নীরব থেকে সে কথাই বুঝিয়ে দিলেন রাজ্যের মন্ত্রীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৬ ০৪:১৯
Share: Save:

সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ দিল্লি মেনে নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতনের ফারাক যাই দাঁড়াক, আপাতত তা নিয়ে মুখ খুলবে না মমতার সরকার। বৃহস্পতিবার বিধানসভা ও নবান্নে এ প্রসঙ্গে যাবতীয় প্রশ্নের জবাবে কার্যত নীরব থেকে সে কথাই বুঝিয়ে দিলেন রাজ্যের মন্ত্রীরা।

দু’সরকারের বেতনে মহার্ঘভাতা (ডিএ)-র ব্যবধান হাফ সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ফেলায় এত দিন রাজ্যের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের আগুন জ্বলছিলই। বুধবার কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সঙ্গে রাজ্যের বেতন-ব্যবধান এক ধাক্কায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় আগুনে যেন ঘি পড়েছে। নবান্ন তো বটেই, জেলা থেকে শহরের প্রায় প্রতিটি প্রশাসনিক ভবনে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কর্মীরা। বিরোধী কর্মচারী সংগঠনগুলি একযোগে ঠিক করেছে, বকেয়া ডিএ মেটানো এবং রাজ্য পে কমিশনের সুপারিশ দ্রুত প্রকাশের দাবিতে আগামী ২ সেপ্টেম্বর তারা ধর্মঘটে যাবে।

এমতাবস্থায় অনেকে মনে করেছিলেন, ক্ষোভ ধামাচাপা দিতে সরকার হয়তো এ দিন কিছু ঘোষণা করবে। আশাকে উস্কে দেয় অর্থমন্ত্রীর অমিত মিত্রের নবান্নে ডাকা একটি সাংবাদিক বৈঠক। এ দিন বিকেল চারটে নাগাদ অর্থমন্ত্রী আচমকা সাংবাদিক বৈঠক ডাকায় নবান্নের কর্মীরা কিছুটা উৎসাহিত হয়েছিলেন। কিন্তু অমিতবাবু শুধু কথা বললেন রাজ্যে এক বেসরকারি খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ল্যাবে বিনিয়োগ সম্পর্কে। বকেয়া ডিএ এবং রাজ্যের বেতন কমিশন সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে তাঁর জবাব, ‘‘এখন ল্যাবে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়েই আলোচনা হবে।’’

ডিএ-বেতন কমিশন নিয়ে দেখে-শুনে বল ছাড়ার অন্যথা বিধানসভাতেও হয়নি। এ দিন বিরোধী দলগুলি বিধানসভায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে চাইলে স্পিকার আলোচনার অনুমতি দেননি। বিরোধীরা প্রতিবাদ করলে পরিষদীয়মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না, তবে বিরোধীদের বক্তব্য মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে জানিয়ে দেবেন। পরে বিধানসভার বাইরে বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ডিএ-র ফারাক ৫০% ছিলই। কেন্দ্রীয় পে কমিশন কার্যকর হওয়ায় এখন বেতনের ফারাক প্রায় ১০০% হয়ে যাবে! তা সত্ত্বেও সরকার কেন ব্যবস্থা নেবে না?’’

ক্ষোভের পাশাপাশি এ দিন রঙ্গ-রসিকতাও কম শোনা যায়নি। যেমন, নবান্নের ক্যান্টিনে খোশগল্পে মত্ত দুই কর্মীর এক জন বলছিলেন, ‘‘ওদের মাইনে বাড়ায় তোদের এত হিংসে কেন?’’ অন্য জনের হতাশ উত্তর— ‘‘হিংসে নয় রে ভাই। ন্যায্য পাওনা চাইছি।’’ এক অর্থ-কর্তার আক্ষেপ, ‘‘বাজারেও মুখ দেখাতে পারছি না! মাছওয়ালা ঠাট্টা করে বললেন, দাদা, ইলিশের দাম অনেকটা কমেছে। তবে আপনাদের নাগালে আসেনি!’’

এবং এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের সংগঠনকে আরও মজবুত করতে চাইছে বিরোধী কর্মী সংগঠনগুলি। ২ সেপ্টেম্বর ধর্মঘট ডাকায় কর্মীরা রীতিমতো খুশি বলে দাবি করেছেন কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা মনোজ গুহ। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘প্রত্যেকেই ক্ষুব্ধ। অনেকে টেলিফোনে আমাদের পদক্ষেপকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আশা রাখছি, ধর্মঘটে বিরাট অংশের সমর্থন পাব।’’ কংগ্রেস প্রভাবিত কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের নেতা মলয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ধর্মঘটে তাঁদের নৈতিক সমর্থন থাকছে। আর এক বিরোধী কর্মী সংগঠন— ওয়েস্টবেঙ্গল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (নবপর্যায়)-এর নেতা সমীর মজুমদার বলেন, ‘‘এই সরকার নির্লজ্জ। এর বিরুদ্ধে যাঁরাই লড়াই করবেন, তাঁদের প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন থাকবে।’’

বিরোধীরা অবশ্য ধর্মঘটেই ক্ষান্ত দিচ্ছে না। সম্প্রতি ত্রিপুরা হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, সে রাজ্যে সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ-র পুরোটাই অবিলম্বে সরকার মিটিয়ে দিক। ওই রায়কে সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মী সংগঠনের একাংশ মামলার তোড়জোড় করছে। ‘‘আইনি পরামর্শ নিচ্ছি। সরকারের এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে অবিলম্বে কোর্টে যাব।’’— মন্তব্য এক বিরোধী ইউনিয়ন নেতার।

অন্য দিকে, শাসকদলের দখলে থাকা ওয়েস্টবেঙ্গল ফরেস্ট সার্ভিস এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের তরফে সেই সংগঠনের সভাপতি অমল সিংহ এ দিন জানিয়েছেন, সরকারের কাছে বেতনবৃদ্ধির আবেদন করেছেন তাঁরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pay-discrimination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE