বাঘের খবরে উৎসাহিত মন্ত্রী থেকে আমজনতা সকলেই। নেওড়া ভ্যালিতে বাঘের সন্ধান মেলার বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে বিশদে রিপোর্ট দিতে উদগ্রীব বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন। আবার বাঘের খবর পেয়েই লাভা এলাকা নিয়ে উৎসাহ বেড়ে গিয়েছে পর্যটকদের একাংশের।
শনিবারই একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওই সফর চলাকালীন সময়েই রবিবার একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবার কথা রয়েছে বনমন্ত্রীর। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রীকে এ কথা বিশদে জানাতে মুখিয়ে রয়েছেন তিনি। বিনয়বাবু বলেন, “এতদিন উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে বাঘের অস্তিত্ব রয়েছে বলে আমরা দাবি করেছি, অনেকেই তা বিশ্বাস করতেন না। এ বার সেটা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। দারুণ আনন্দের ব্যাপার। দিদিকে সুযোগ হলে ওই ব্যাপারে জানাব।” বাঘের ছবি মোবাইল বন্দি করেছেন যিনি, সেই গাড়িচালক আনমোল ছেত্রীর সঙ্গেও দেখা করে শুভেচ্ছা জানাতে চান বলে এ দিন জানিয়েছেন বিনয়বাবু।
বাঘ দেখার খবর মিলতেই নেওড়া ভ্যালি নিয়ে পর্যটকদের খোঁজখবরও বেড়েছে। কেউ দ্রুত আসতে চাইছেন, কেউ আবার গভীর জঙ্গলে অবধি পৌঁছনোর খোঁজ নিচ্ছেন। ঝকঝকে কাঞ্চজঙ্ঘার দেখা মিলছে কি না সেই প্রশ্ন উধাও। এখন লাভায় শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে বাঘের দেখা কোথায় মিলতে পারে সেই প্রশ্নই। লাভার কাছেই ঝান্ডিতে বেড়াতে এসেছেন ভিক্টর বৈদ্য নামের কলকাতার বেহালার এক পর্যটক। ভিক্টরবাবু পাখির ছবি তোলেন। ১৯ তারিখ সকালে আনমোল বাঘটিকে যখন ক্যামেরাবন্দি করেছেন তাঁর সামান্য আগেই এই এলাকা দিয়েই ঘুরছিলেন তিনি। ‘‘জীবনে এমন সুযোগ আর কোনওদিন পাব কি না জানি না’’, এখন এমন আক্ষেপের সুর ভিক্টরবাবুর গলায়। ভিক্টরের মতো অনেকেই এখন দ্রুত লাভাতে আসতে চাইছেন। লাভার হোটেল রিসর্ট সংগঠনের সদস্য তথা কর্মকর্তা স্বপন দাস ইতিমধ্যেই পর্যটকদের ফোন পেতে শুরু করেছেন। ‘‘বাঘ কোন এলাকায় দেখা গিয়েছিল, জঙ্গলের ভেতরে ঢোকার নিয়ম কানুন, সবিস্তারে সবই খোঁজ নিতে চাইছেন পর্যটকেরা’’, জানালেন স্বপনবাবু।
পর্যটকদের কৌতূহলে আশার আলো দেখলেও খানিক উদ্বেগও রয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের মধ্যে। কারণ লাভা, কোলাখাম, পেডং, রিশপের মতো নেওড়া ভ্যালি লাগোয়া নানা গন্তব্যে নির্জন পথে ভোর থেকেই পর্যটকেরা বেড়িয়ে পড়েন। নিরালা পথে ট্রেক করে লাভা থেকে রিশপও যান অনেকে। এখন সে সব আদৌ হবে কি না তা নিয়েও চাপা আশঙ্কাও রয়েছে। উত্তরবঙ্গের ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন এতোয়ার পক্ষে সম্রাট সান্যাল যেমন জানালেন, ‘‘লাভার কাছে বাঘ দেখা যাওয়ার ফলে অবশ্যই পর্যটনমহলে আলোড়ন পড়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু লাভা কেন্দ্রিক যে অজস্র ট্রেকিং রুট, যেগুলো নেওড়া ভ্যালির ভিতরেও প্রসারিত সেগুলোর ভবিষ্যত কী হতে চলেছে তা বন দফতরকেই নির্ধারণ করতে হবে। আমরা ব্যবসা করতে চাইলেও বন দফতরের বিধিনিষেধ মেনেই তা করতে চাই।’’ বাঘ যেমন এলাকার গুরুত্ব বাড়াল, তেমনই পর্যটকদের নিরাপত্তাদানের দায়িত্বও অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে বলে সম্রাটবাবু মনে করেন। বন্যপ্রাণের উত্তর মন্ডলের বনপাল সুমিতা ঘটক। তিনি বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই পর্যটকেরা জঙ্গলের পথে ট্রেক করতে পারবেন। কিন্তু আমাদের নজরদারি আগের থেকে অবশ্যই বাড়বে।’’ বাঘকে খোঁজার জন্য নেওড়া ভ্যালির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ক্যামেরা বসানো হয়েছে বলেও বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy