Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

অঢেল জোগানে খুচরোই এখন গলার কাঁটা

কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে খুচরো না-নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। এক টাকার ছোট মুদ্রা নিয়ে সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। মহানগরীর বাইরে অনেক জায়গাতেই অনেকে এক টাকার মুদ্রা নিতে অস্বীকার করছেন বলে পুলিশ-প্রশাসন থেকে শুরু করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও অভিযোগ পাচ্ছে।

বিড়ম্বনা: রাশি রাশি খুচরো। —নিজস্ব চিত্র।

বিড়ম্বনা: রাশি রাশি খুচরো। —নিজস্ব চিত্র।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৭
Share: Save:

ছবিটা উল্টে গিয়েছে বেমালুম!

এত দিন খুচরোর আকাল চরমে ওঠায় বাসে-অটোয়, হাটে-বাজারে পদে পদে নাজেহাল হতে হয়েছে মানুষকে। আর এ বার খুচরোর ঢালাও সরবরাহে নাকানিচোবানি খাওয়ার অবস্থা আমজনতার।

কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে খুচরো না-নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। এক টাকার ছোট মুদ্রা নিয়ে সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। মহানগরীর বাইরে অনেক জায়গাতেই অনেকে এক টাকার মুদ্রা নিতে অস্বীকার করছেন বলে পুলিশ-প্রশাসন থেকে শুরু করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও অভিযোগ পাচ্ছে। এখন পাঁচ ও দশ টাকার মুদ্রা দিলেও এক শ্রেণির অটোচালক ও ব্যবসায়ী তা নিতে চাইছেন না। অনেকে নিলেও পাঁচ কথা শুনিয়ে দিচ্ছেন। ফলে নতুন এক সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ।

অথচ কিছু দিন আগেও খুচরো দিতে না-পারলে অটোচালক থেকে দোকানদারদের মুখঝামটা শুনতে হতো মানুষকে। খুচরো নিয়ে বচসাকে ঘিরে হাতাহাতি থেকে থানা-পুলিশ পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত জোগানের ফলে এখন পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে, অতিরিক্ত খুচরোর ভারে অনেকেই মেজাজ হারাচ্ছেন।

আমজনতার আশঙ্কা, খুচরো দিতে না-পারলে এত দিন যে-হাতাহাতিটা হতো, এ বার খুচরো দিতে চাওয়ায় তেমনই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে! নোটবন্দির আগে টাকা নিয়ে গিয়ে অনেকেই বাটা দিয়ে খুচরো জোগাড় করতেন। ১০০ টাকার খুচরো দিলে মিলত ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। এখন ছবিটা বদলেছে। খুচরোর বদলে নোট নিতে গিলে গচ্চা দিতে হচ্ছে। ১০০ টাকার খুচরো দিলে ৮৫ টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন অনেক ভুক্তভোগী।

নোট বাতিলের পরে পরেই বাজারে খুচরোর বান ডাকতে শুরু করে। নোটের আকালে বহু মানুষকেই ব্যাঙ্ক থেকে হাজার হাজার টাকার মুদ্রা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল। সেই ছবি পুরোটা মোছেনি। এখনও বেশি টাকা তুলতে গেলে অনেক ব্যাঙ্ক নোটের সঙ্গে কিছু খুচরোও ধরিয়ে দিচ্ছে। ব্যাঙ্কগুলির বক্তব্য, তারা এত খুচরো রাখবে কোথায়! ভল্টে নোটের সঙ্গে মুদ্রা রাখতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের। তাই তারা গ্রাহকদের খুচরো দিতে বাধ্য হচ্ছে।

কিন্তু উপচে পড়া খুচরোর রাশ ধরা যাবে কী ভাবে? খুচরো-বাহুল্যের দরুন উদ্ভূত পরিস্থিতির মোকাবিলাই বা হতে পারে কোন পথে?

সদুত্তর মিলছে না। যাদের জবাব দেওয়ার কথা, তাদের বক্তব্য শুনলে মনে হবে, খুচরো নিয়ে কোথাও কোনও সমস্যাই নেই! যেমন, ব্যাঙ্কগুলি জানাচ্ছে, যে-কোনও লেনদেনে সকলেই যে খুচরো নিতে বাধ্য, সেই ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুস্পষ্ট নির্দেশিকা আছে। আর পুলিশ-প্রশাসনের বক্তব্য, কেউ খুচরো নিতে অস্বীকার করেছে বলে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তারা সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে!

কিন্তু আমজনতার ভোগান্তি কমছে না। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, ব্যাঙ্ক মুদ্রা দিয়েছে। সেই মুদ্রা দিয়েই তাঁরা বাজারে জিনিসপত্র কিনতে যাচ্ছেন, বাসে-অটোয় ভাড়া মেটাচ্ছেন। নইলে তো হাজার হাজার টাকার মুদ্রা তাঁদের বাড়িতেই ফেলে রাখতে হবে। অন্য দিকে, অটোচালকদের যুক্তি, তেল বা গ্যাস কিনতে গেলে পেট্রোল পাম্প খুচরো নিতে চাইছে না, নোট চাইছে। আবার মহাজনেরা খুচরো নিয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের মালপত্র দিচ্ছেন না। তাঁদের বক্তব্য, ব্যাগ-ভর্তি খুচরো নিয়ে তাঁরাই বা কী করবেন!

নোট বাতিলের পর্বে হাজারো ঝঞ্ঝাটের গন্ধমাদন ঘাড়ে চাপার পরে সেই উটকো ঝকমারির মধ্যেও রসিকদের রসঝর্না শতধারায় ঝরে পড়ছিল অফিসে, পথেঘাটে, সোশ্যাল মিডিয়ায়। এখনও রসিকপ্রবরেরা বলছেন, নোট বাতিলের দাওয়াই যাঁর আবিষ্কার, মুদ্রারাক্ষসকে নিশ্চয় তিনিই সামলাবেন। চিন্তা কী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coins খুচরো
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE