Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

রাউটার-কাণ্ডে জড়িত ভিনদেশি চক্র, সন্দেহ

দার্জিলিং পাহাড়ের মিরিকে’র বেআইনি ‘রাউটার’ কান্ডের তদন্তে নেমে হায়দরাবাদ এবং নেপালের যোগসূত্র তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, গত মাসের শেষে মিরিকে ধৃত দুই নেপালের বাসিন্দাকে জেরা করে চক্রের এক মাথার হদিস পায় পুলিশ। তার নাম রবীন প্রধান। সে নেপালের ঝাপার বাসিন্দা, সে দেশের মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গেও সে জড়িত বলে জানা গিয়েছে।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০২:৪০
Share: Save:

দার্জিলিং পাহাড়ের মিরিকে’র বেআইনি ‘রাউটার’ কান্ডের তদন্তে নেমে হায়দরাবাদ এবং নেপালের যোগসূত্র তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, গত মাসের শেষে মিরিকে ধৃত দুই নেপালের বাসিন্দাকে জেরা করে চক্রের এক মাথার হদিস পায় পুলিশ। তার নাম রবীন প্রধান। সে নেপালের ঝাপার বাসিন্দা, সে দেশের মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গেও সে জড়িত বলে জানা গিয়েছে। নেপাল পুলিশের একটি দল সম্প্রতি জেলা পুলিশের কাছে সেই তথ্য তুলে দিয়েছে। এমনকী, দীর্ঘদিন ধরে রবীন এ দেশের নানা প্রান্তে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে বলেও পুলিশ জানতে পেরেছে। আবার হায়দরাবাদ থেকে এক ব্যক্তির নির্দেশ মতই রবীন ধৃতদের মাধ্যমে বিদেশি রাউটারের দিয়ে আন্তর্জাতিক টেলিফোন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে বলে জেরায় ধৃতরা জানিয়েছে। হায়দরাবাদের ওই ব্যক্তির নাম-ঠিকানা দিয়ে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের মাধ্যমে অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

তবে, এদেশের মাটিকে ব্যবহার করে শুধুমাত্র বেআইনিভাবে রাউটার দিয়ে নেপাল থেকে বিদেশে সস্তায় ফোন বা আইএসডি করার জন্যই চক্রটি কাজ করছিল, না কি এই মাধ্যম দিয়ে কোনও সংগঠন তাঁদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল, তা জানার চেষ্টা শুরু করেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। বিশেষ করে, একসময়ের নেপাল মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে একজন জড়িত থাকার প্রমাণ সামনে আসায় তা আরও জোরাল হয়েছে। ইতিমধ্যে কলকাতায় কেন্দ্রীয় সরকারের টেলিকম মন্ত্রকের দফতরে চিঠি দিয়ে তদন্তে সাহায্য করার আবেদনও জানিয়েছে পুলিশ।

দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছিল, রাউটার দিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিদেশে সস্তায় টেলিফোন করছিল চক্রটি। কিন্তু তদন্তে একের পর এক তথ্য সামনে এসেছে। ভিন রাজ্য থেকে নেপালের বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে ধৃতদের চক্রের যোগাযোগ রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।’’ এই ডিজিট্যাল নেটওয়ার্ক, কোনও সংগঠন তাদের কাজে লাগাচ্ছিল কি না, তা বিশেষভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, গত মে মাসের শেষ নাগাদ মিরিক বাজার এলাকায় ৩ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি ভাড়া নেয় নেপালের ঝাপা জেলার বাসিন্দা নরেশ মেচে এবং অঞ্চল ধিমাল। তারা সেই সময় জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং প্যান কার্ড দেখিয়ে নিজেদের শিলিগুড়ি এলাকার বাসিন্দা বলেও দাবি করেছিল। একটি বিশেষ সমীক্ষার কাজে তারা মিরিকে এসেছেন। চিনে তৈরি দুটি অত্যাধুনিক রাউটার ছাড়াও নেপাল-ভারত মিলিয়ে ৭১টি সিম কার্ড উদ্ধার হয়। ১৬টি ভারতীয় ইন্টারনেট ‘ডঙ্গেল’ও উদ্ধার হয়। মিরিক থানার ওসি সঞ্জয় দাসের নেতৃত্বে তদন্তকারীরা দেখেন, বাড়ির ভিতরে দেওয়াল খাঁজ তৈরি করে রাউটারগুলি ব্যবহার হচ্ছিল। বাইরে থেকে প্লাইবোর্ড দিয়ে তা ঢেকে রাখা হয়েছিল। অভিযানের সময় রাউটারগুলি অনলাইন ছিল।

ধৃতদের আদালতের মাধ্যমে হেফাজতে নেওয়ার পরেই নেপালের প্রাক্তন মাওবাদী স্কোয়াডের সদস্য রবীন প্রধানের নাম পুলিশের কাছে আসে। তার মাধ্যমেই হায়দরাবাদের এক ব্যক্তির সঙ্গে ধৃতদের যোগাযোগ হয়। মাসিক ২০ হাজার টাকা বেতনের ভিত্তিতে দুই জন ওই কাজ করছিলেন। তারা পুলিশকে জানায়, নেপাল থেকে বিদেশে আইএসডি কল অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ। আবার, উল্টো দিকেও বিদেশ থেকে নেপালে টেলিফোনের রেট অনেক। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, এই ক্ষেত্রে নেপালের সিমকার্ড ব্যবহার করে ওপারের কলগুলিকে এদেশে ‘ডাইভার্ট’ করা হত। তার পরে এদেশের ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল বা ভিওআইপি’র মাধ্যমে কলগুলি বিদেশে ট্রান্সফার করা হত। এতে খরচ অনেক কম। হায়দরাবাদের এক ব্যক্তির কলসেন্টার দিয়ে তা তদারকি করত পলাতক রবীন প্রধান।

পুলিশ সূত্রের খবর, এক একটি রাউটারের পিছনে ১৬টি সিমকার্ড লাগানো ছিল। অভিযানের পর সেনা, এসএসবি ছাড়াও কেন্দ্র ও রাজ্য গোয়েন্দা দফতরের অফিসারেরা ধৃতদের জেরা করেন। রাউটারগুলি নেপালে হস্তান্তর হলেও তার প্রযুক্তি পুরোপুরি না বোঝা যাওয়ায় পুলিশ টেলিকম মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞদের সাহায্য চেয়েছেন। জেলা পুলিশ সুপার জানান, স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা রাউটারগুলি দেখেছেন। কিন্তু তা পুরোপুরি খতিয়ে দেখে কোথায় সেগুলির মাধ্যমে যোগাযোগ হয়েছে তা জানাটা প্রয়োজন। সেই কাজ চলছে। বর্তমানে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের মামলায় ধৃতেরা কার্শিয়াং জেলবন্দি।

মিরিকে এই বেআইনি তথ্য প্রযুক্তির কারবার নতুন কিছু নয়। গত ২০১২ সালের মার্চ মাসে মিরিক থেকেই ভোলা কিশোর ডাংগল নামে নেপালের এক বাসিন্দাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনিই সেখান থেকে বেআইনি ভাবে ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছিলেন। উদ্ধার হয়েছিল প্রচুর যন্ত্রপাতি। পরবর্তীতে পুলিশ জানতে পারে, ভোলা কিশোর নেপালের বেআইনি তথ্য প্রযুক্তির ব্যবসার কিংপিন। নতুন দলটি ওই চক্রের কি না তাও পুলিশ দেখছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE