Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কাঁথিতে গণধর্ষণ-খুনের প্রমাণই পেল না পুলিশ

ঘরছাড়া এক সিপিএম নেতার স্ত্রীকে কাঁথির সুনিয়া গ্রামে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে সোমবার সারা দিন তোলপাড় হল রাজ্যে। মঙ্গলবারই অবশ্য পুলিশ জানিয়ে দিল, এটা ধর্ষণ বা খুন নয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন এ দিন বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ওই মহিলা আত্মহত্যাই করেছেন।” তাই এ দিন ওই ঘটনায় ধৃত তিন জনের বিরুদ্ধে গোড়ায় ধর্ষণ-খুনের অভিযোগ আনলেও, এ বার আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলাই হবে, জানিয়েছেন তিনি। ধৃতেরা সকলেই তৃণমূল কর্মী।

আদালতের পথে ধৃত তিন তৃণমূল কর্মী।

আদালতের পথে ধৃত তিন তৃণমূল কর্মী।

আনন্দ মণ্ডল
সুনিয়া শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৪২
Share: Save:

ঘরছাড়া এক সিপিএম নেতার স্ত্রীকে কাঁথির সুনিয়া গ্রামে গণধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে সোমবার সারা দিন তোলপাড় হল রাজ্যে। মঙ্গলবারই অবশ্য পুলিশ জানিয়ে দিল, এটা ধর্ষণ বা খুন নয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন এ দিন বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ওই মহিলা আত্মহত্যাই করেছেন।” তাই এ দিন ওই ঘটনায় ধৃত তিন জনের বিরুদ্ধে গোড়ায় ধর্ষণ-খুনের অভিযোগ আনলেও, এ বার আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলাই হবে, জানিয়েছেন তিনি। ধৃতেরা সকলেই তৃণমূল কর্মী।

পুলিশের সুরেই তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক দিব্যেন্দু অধিকারীও বলেন, “অত্যন্ত ছোট একটা ঘটনা। সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ করছে।” তাঁর দাবি, গ্রাম্য বিবাদের জেরেই ওই বধূ আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাটি এ ভাবে লঘু করে দেখানোর চেষ্টায় ক্ষুব্ধ বিরোধীরা। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব বলেন, “পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের মতো এক্ষেত্রেও তদন্তের আগেই বলা হচ্ছে, ধর্ষণ হয়নি।” সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু মালদহে মঙ্গলবার অভিযোগ করেন, এই ঘটনায় পুলিশের একাংশও প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত।

মঙ্গলবার সকালে রসুলপুর নদীর তীরে সুনিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, রীতিমতো সন্ত্রস্ত গোটা এলাকা। কেউ সহজে মুখ খুলতে চাইছেন না। বহু জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশ্য ক্রমশ রবিবার দিনভর ঘটে-যাওয়া ভয়ানক ঘটনার বিবরণ জানালেন গ্রামবাসীদের কয়েক জন। রবিবার সকাল থেকেই গোলমালের সূত্রপাত। সে দিন প্রায় দেড়শো জনের বাহিনী গ্রামে এসেছিল। গ্রামের রাস্তায় পাহারায় ছিল কিছু লোক। বাকিরা ওই সিপিএম নেতার বাড়িতে চড়াও হয়। বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে, গ্রামের রাস্তায় ওই মহিলার দেওরকে ঘিরে মারধর করা হতে থাকে। প্রাণে বাঁচতে বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে পাশের গ্রাম ছনবেড়িয়ায় এক জনের বাড়িতে আশ্রয় নেন ওই বধূ।

কিন্তু তাতেও তিনি রক্ষা পাননি। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, সে দিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ তৃণমূলের লোকজন ওই বধূকে মারতে মারতে টেনে-হিঁচড়ে গ্রামে নিয়ে আসেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন মহিলার কথায়, “রাস্তায় ফেলে ওই মহিলাকে মারছিল ওরা। হামলাকারীরা গোটা গ্রাম ঘিরে রেখেছিল। ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারিনি।”

মৃতার দেওর এবং স্বামীর অভিযোগে অবশ্য স্থানীয় দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ তথা ব্লক যুব তৃণমূল সম্পাদক দেবাশিস ভুঁইয়া-সহ ১২ জনের নাম রয়েছে। এ দিন কাঁথিতে মৃতার দেওর জানান, দেবাশিস ও তাঁর দলবলই গত শুক্রবার তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তাঁর কাছে ১২ লক্ষ টাকা দাবি করেছিল তারা। রবিবার সকালে গ্রামে ফিরিয়ে এনে দিনভর তাঁকে ও তাঁর বৌদিকে মারধর করা হয়। মৃতার দেওর আরও জানান, সন্ধ্যার পরে ওই বধূকে নিয়ে যাওয়া হয় কিছুটা দূরে জগদীশ মোড়ে। তার পর অর্ধমৃত অবস্থায় রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তাঁকে বাড়ির উঠোনে ফেলে রেখে যায় দেবাশিসের দলবল। তাঁর কথায়, “কিন্তু তখন যা পরিস্থিতি তাতে বৌদির চিকিৎসা করাতে পারিনি।” অভিযোগ, হামলাকারীরা রাতে ফের এসে ওই বধূকে গণধর্ষণ ও খুন করে।

ওই অভিযোগের ভিত্তিতে এ দিন স্বপন জানা, চন্দন জানা ও মানিকলাল গিরিকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে কেবল চন্দনবাবুর নাম ওই মহিলার স্বামীর করা অভিযোগে বারো জনের তালিকায় ছিল। রবীনবাবুর অভিযোগ, “এসপি থেকে কাঁথির আইসি সকলেই দলদাসে পরিণত হয়েছেন। তৃণমূল নেতা দেবাশিসবাবু-সহ মূল অভিযুক্তদের না ধরে অন্য তিন জনকে ধরা হয়েছে।” বিমানবাবু বলেন, “পুলিশ আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এমন ঘটনা এড়ানো যেত।”

সিপিএমের মহিলা প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ দিন সুনিয়া গিয়েছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান, সিপিএম নেতা তাপস সিংহ এবং চক্রধরবাবু। এ দিন ওই বধূর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দোতলার যে বারান্দায় সোমবার তাঁর দেহ উদ্ধার হয়, তার পাশেই তক্তপোশে রাখা অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের বেশ কিছু কাগজপত্র। ওই বধূ অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ছিলেন। লাগোয়া ঘরের মাটির মেঝে খোঁড়া হয়েছে, জিনিসপত্র সব তছনছ। মৃতার বৃদ্ধ শ্বশুর বলেন, “তৃণমূলের লোকজন বাড়িতে ঢুকে অস্ত্র পোঁতা রয়েছে বলে দাবি করে। ওরাই মাটি খুঁড়েছে, জিনিস লন্ডভন্ড করেছে।”

ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ananda mondal suniya capm cadre gangrape tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE