Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দুর্গতদের ক্ষোভে পিছু হটল পুলিশ

শুক্রবার দুপুরে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের কিসানমান্ডি ও বিডিও অফিসে তালা ভেঙে ত্রাণ সামগ্রী লুটপাটের অভিযোগও উঠেছে। পুলিশের সামনেই কিসানমান্ডির সাটারের তালা ভেঙে ১০ বস্তা চাল ও কিছু ত্রিপল লুঠ হয় বলে অভিযোগ।

ত্রাণ: ইটাহারের শ্রীপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে বন্যাদুর্গতদের খাবার বিলি। ছবি: গৌর আচার্য।

ত্রাণ: ইটাহারের শ্রীপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে বন্যাদুর্গতদের খাবার বিলি। ছবি: গৌর আচার্য।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ০৪:১৯
Share: Save:

কাউকে রাত কাটাতে হচ্ছে ঘরের চালে। কেউ সংসার নিয়ে উঠে এসেছেন বাঁধে বা রাস্তার ধারে। খাবার নেই। ওষুধ নেই। এর মধ্যে যখন ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে বলে খবর আসছে, দলে দলে লোক ছুটে যাচ্ছেন। ঘণ্টার পরে ঘণ্টা লাইনেও দাঁড়াচ্ছেন। তারপরেও যেখানে ত্রাণ মিলছে না, ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন বানভাসি মানুষ। গোলমালের আশঙ্কায় পুলিশও তাই কোনও কোনও ক্ষেত্রে পিছু হঠেছে।

শুক্রবার দুপুরে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের কিসানমান্ডি ও বিডিও অফিসে তালা ভেঙে ত্রাণ সামগ্রী লুটপাটের অভিযোগও উঠেছে। পুলিশের সামনেই কিসানমান্ডির সাটারের তালা ভেঙে ১০ বস্তা চাল ও কিছু ত্রিপল লুঠ হয় বলে অভিযোগ। বন্যা দুর্গতদের অনেকে ইটাহার বিডিও অফিসের কয়েকটি দরজা ও জানলা ভেঙে কয়েক কুইন্টাল চিড়ে, গুড় লুঠ করে পালায় বলেও অভিযোগ। তখন কম্পিউটার, আলমারি, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের হাঁড়ি, কড়াই ও বাসনপত্রও লুঠ হয়েছে। কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যদের মারধর করে তাঁদের খাবার ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি।

ইটাহারেই বৃহস্পতিবার রাতে বন্যা দুর্গতদের লুঠপাটের সময় পুলিশ রবার বুলেট চালায় বলে অভিযোগ। তাতে এক ব্যক্তি আহত হন। তাই এ দিন প্রশাসন বড় প্রতিরোধের পথে যায়নি। এমনকী, লুঠপাটের খবর পেয়ে জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বিরাট পুলিশ বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেও পিছু হঠতে বাধ্য হন। এলাকা দখল করে নেন বন্যা দুর্গতরাই। ইটাহারের বিধায়ক তৃণমূলের অমল আচার্য অবশ্য দাবি করেন, ‘‘দুর্গতদের নাম করে কিছু দুষ্কৃতী অবাধে লুটপাট শুরু করেছে।’’ জেলাশাসক আয়েশা রানি জানান, কারা গোলমাল পাকাচ্ছে দেখা হচ্ছে। তবে ত্রাণসামগ্রীর অভাব নেই।

এ দিনই ত্রাণ বিলি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূলের চকভৃগু অঞ্চলের এক পঞ্চায়েত সদস্যের দুই সঙ্গীকে ধরে দুর্গতরা মারধর করেন। সরোজ সেতুর উপর থেকে তাদের কলার চেপে ধরে থানার সামনে নিয়ে গিয়ে কিল চড় ঘুসি মারা হয়। পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। বানভাসিদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত সদস্যদের ওই দুই সাগরেদ ত্রাণের ত্রিপল আত্মসাৎ করছেন। অভিযোগ অস্বীকার করছেন প্রহৃতরা। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যদের দাবি, ত্রাণের জন্য কম ত্রিপল এসেছিল। সকলকে দেওয়া যায়নি। তাই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

দু’দিন আগে চকভৃগুতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী বাচ্চু হাঁসদাও তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়েন। ত্রাণ না পেয়ে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সভাপতি প্রবীর রায় এবং বিডিও কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের দিকে বাঁশ নিয়ে তেড়ে যান বানভাসিরা। এ দিন আলিপুরদুয়ারে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব গেলে সেখানেও তাঁর কাছে গিয়ে দুর্গতরা ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ জানান।

তবে মন্ত্রী জানান, প্রশাসন ত্রাণ দিতে তৎপর। কোথাও কোথাও জল না নামায় ত্রাণ পৌঁছতে সমস্যা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Flood Relief Police পুলিশ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE