Advertisement
১০ মে ২০২৪

সব প্রশ্ন বাসে উঠেছিল কি, ধন্দে ডাককর্তা

বাস থেকে প্রশ্নপত্রের একটি প্যাকেট পড়ে যাওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে টেট পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগস্ট ডাক বিভাগের ভাড়া করা বাসে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বোঝাই ১৫৪টি ব্যাগই তোলা হয়েছিল কি?

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩০
Share: Save:

বাস থেকে প্রশ্নপত্রের একটি প্যাকেট পড়ে যাওয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে টেট পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগস্ট ডাক বিভাগের ভাড়া করা বাসে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বোঝাই ১৫৪টি ব্যাগই তোলা হয়েছিল কি?

এই প্রশ্ন সামনে রেখেই ঘুরে গিয়েছে তদন্তের অভিমুখ। সোমবার রাজ্যের চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল অরুন্ধতী ঘোষের করা একটি মন্তব্যই সিআইডি-র তদন্তকারীদের নতুন সম্ভাবনার সন্ধান দিয়েছে।

প্রশ্নপত্রবাহী বাস থেকে একটি প্যাকেট খোয়া গিয়েছে বলে ডাক বিভাগ বৃহস্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে লিখিত ভাবে জানিয়েছিল। তার ভিত্তিতে পুলিশের কাছে আলাদা ভাবে অভিযোগও জানায় ডাক বিভাগ ও পর্ষদ। তদন্তভার নেয় সিআইডি। যে-পথে বাসটি গিয়েছিল, দু’দিন ধরে সেই রাস্তায় তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালিয়েও বাস থেকে প্রশ্নের একটি প্যাকেট পড়ে যাওয়ার তত্ত্বের প্রমাণ পাননি গোয়েন্দারা।

বিরোধীরা অবশ্য প্রথম থেকেই এই ঘটনার পিছনে ষড়যন্ত্র এবং শাসক দলের হাত আছে বলে অভিযোগ করছেন। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদে ভাল ভাবে খোঁজ নিলে এবং সেখানকার কর্মীদের যথাযথ ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্যাকেট লোপাট রহস্যের সমাধান মিলবে বলে মন্তব্য করেন শিক্ষা দফতরের সঙ্গে যুক্ত অনেকে। সোমবার সেই ভাবনাটাকেই ফের উস্কে দেন রাজ্যের চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল অরুন্ধতী ঘোষ।

এ দিন অরুন্ধতীদেবী বলেন, ‘‘আমাদের তদন্ত যেটুকু এগিয়েছে, তাতে মনে করা হচ্ছে, উধাও হয়ে যাওয়া ব্যাগটি সম্ভবত বাসেই ওঠেনি। আরও কয়েকটি বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার পরেই গোটা বিষয়টি স্পষ্ট হবে।’’ প্যাকেট লোপাটের ঘটনায় কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে ইতিমধ্যেই ডাক বিভাগের দুই কর্মী অরূপ দাস ও অরূপ মুখোপাধ্যায়কে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ওই দুই কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।

রাজ্যের ডাক অধিকর্তার বক্তব্যের পরে এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘আমরা প্রশ্নের কোনও প্যাকেট বাসে না-ওঠার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছি না।’’ এ দিনও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ওই বেসরকারি বাসের চালক ও খালাসিকে। গোয়েন্দারা কথা বলেন ওই বাসে থাকা দুই ডাককর্মী এবং রাজ্য পুলিশের দুই কর্মীর সঙ্গেও। ওই দুই পুলিশকর্মীর দায়িত্ব ছিল বাসে প্রশ্নপত্র পাহারা দেওয়া। বাস থেকে একটি প্যাকেট কী ভাবে পড়ে গেল, বারবার জিজ্ঞাসাবাদেও সেই ব্যাপারে কোনও সূত্র পায়নি সিআইডি।

বাসে প্যাকেট না-তোলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ডাক বিভাগের দুই কর্মী যে ১৫৪টি প্যাকেট গুনে গুনে বাসে তুলেছিলেন, তার লিখিত প্রমাণ আছে। ওই দুই কর্মী নির্দিষ্ট কাগজে সই করে ১৫৪টি প্যাকেট বাসে তুলেছেন বলে স্বীকার করেছেন। সেই কাগজ সিআইডি-কে দেওয়া হয়েছে। চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেলের দাবি, ওই তদন্তে কাউকে জোর করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। তাই শিক্ষা দফতর-সহ সকলকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ঠিক কথাটা বলতে অনুরোধ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তাঁর আরও দাবি, ‘‘এই ঘটনায় সত্যটা উঠে আসা দরকার।’’

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের স্টোররুমে বুধ ও বৃহস্পতিবার কী হয়েছিল, তার উপরে বিশেষ ভাবে নজর দিচ্ছে সিআইডি। রবিবার ওই স্টোররুম ঘুরে দেখেন তদন্তকারীরা। টেটের প্রশ্নপত্র ছাপাখানা থেকে এনে ওই ঘরেই রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সেখান থেকে ডাক বিভাগের ভাড়া করা বাসে প্রশ্নপত্র তোলা হয়। গোয়েন্দারা জানান, প্রশ্নপত্রের ক’টি প্যাকেট ওই স্টোররুম থেকে বাসে তোলা হয়েছিল, তা জানার জন্য অফিসের রেজিস্টার খতিয়ে দেখা হয়েছে। কোন কোন কর্মী ওই দিন বাসে প্যাকেট তুলেছিলেন, তাঁদের নামও জানতে চাওয়া হয়েছে পর্ষদের কাছে।

ভবানী ভবন সূত্রের খবর, ডাক বিভাগ, পর্ষদের কর্মী-সহ যে-আট জনকে এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, পরস্পরবিরোধিতা রয়েছে তাঁদের বক্তব্যে। ওই অসঙ্গতি দূর করার জন্য তাঁদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার। অভিযোগ, বাসের পিছনের ফাইবার গ্লাস খুলে যাওয়ায় প্যাকেট পড়ে গিয়েছে। কিন্তু পর্ষদ অফিসের সিসিটিভি-র ফুটেজ খতিয়ে দেখার পরে গোয়েন্দাদের দাবি, প্রশ্নপত্র যখন বাসে তোল হয়, তখন ওই ফাইবার গ্লাস অটুট ছিল। পিঠ বাঁচাতেই বাসের দুই কর্মী, ডাক বিভাগের দুই কর্মী এবং পুলিশকর্মীরা নিজে থেকে ওই ফাইবারের চাদরটি খুলে ফেলেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সিআইডি জানিয়েছে, ওই বাসের পিছনের ফাইবার গ্লাসটি নিজে থেকে খুলে গিয়েছিল, নাকি খোলা হয়েছিল, তা জানার জন্য ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হচ্ছে।

হুগলির শ্রীরামপুরে নিয়ে যাওয়ার পথে বাস থেকে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট পড়ে যায় বলে অভিযোগ। এ দিন বালির নিশ্চিন্দা থানায় যান সিআইডি-র আইজি (২) বিনীত গোয়েল এবং সিআইডি-র সুপার সোমা দাসমিত্র। সঙ্গে ছিলেন সংশ্লিষ্ট বাসের চালক, খালাসি এবং ডাক বিভাগ ও পুলিশের অভিযুক্ত কর্মীরা। নিবেদিতা সেতু টোল প্লাজার তরফে সিআইডি-কে একটি বিশেষ ভিডিও ফুটেজ (ম্যানেজমেন্ট ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেম) দেওয়া হয়। সিআইডি-র দাবি, ওই ভিডিও ফুটেজ সিসিটিভি ফুটেজের থেকে কিছুটা আলাদা।

কী রকম?

সিআইডি জানাচ্ছে, বাসে ক’টি বসার আসন আছে, সেখানে ক’জন ছিলেন— ওই ফুটেজে সবই বোঝা যায়। তাতে দেখা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা নাগাদ বাসটি ডানকুনি থেকে সল্টলেকের দিকে গিয়েছিল। তখন সেটি ছিল ফাঁকা। বেলা ১১টা ৮ মিনিট নাগাদ বাসটি প্রশ্নপত্র নিয়ে ডানকুনির দিকে যায়। ১২টা ৪১ মিনিট নাগাদ ফের সেটি যায় সল্টলেকের দিকে। খতিয়ে দেখা হয় সিসিটিভি-র ফুটেজও। ভবানী ভবনে ফিরে বিনীত বলেন, ‘‘পর্ষদ থেকে ডানকুনির মাইতি পাড়া পর্যন্ত যে-রুট দিয়ে বাসটি গিয়েছিল, সেখানকার সব সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE