শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়লেন স্বামী। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়
আগামী বৃহস্পতিবার সন্তান হবে বলে সময় দিয়েছিলেন ডাক্তার। সেই খুশিতেই ছিলেন দেগঙ্গার চাকলার সিভিক ভলেন্টিয়ার ও তাঁর স্ত্রী। সেই আনন্দই শোকে বদলে গেল। চাকলার দশ মাসের অন্তঃসত্ত্বা রত্না দাস (২৫) মারা গেলেন রবিবার রাতে। তাঁর মৃত্যুর কারণে আরজিকর হাসপাতাল জানিয়েছে, ‘ডেঙ্গি হেমারেজিক শক’।
রবিবার রাত থেকে থেকে সোমবার পর্যন্ত ডেঙ্গি আর জ্বরে গোটা রাজ্যে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ছ’জনই উত্তর ২৪ পরগনার এবং এক জন উত্তরবঙ্গের।
উত্তর ২৪ পরগনায় মৃত ছ’জনের মধ্যে চার জন দেগঙ্গার বাসিন্দা। বাকিদের এক জনের বাড়ি হাবরা ও অন্য জনের নৈহাটিতে। দেগঙ্গার চাকলার দাসপাড়ার রত্না দাসকে গত সোমবার বারাসত জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবার। বুধবার রত্নাকে ছুটি দেন চিকিৎসক। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরদিন সেখান থেকে আরজি করে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। পরিবারের দাবি, সেখানেই জানানো হয়, বাচ্চা মারা গিয়েছে। ডেঙ্গি জ্বর থাকায় মৃত বাচ্চা বের করা যাবে না, তাতে অধিক রক্তক্ষরণে মায়েরও মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। অভিযোগ, ওই ভাবেই ফেলে রাখা হয় রত্নাদেবীকে। রবিবার মারা যান তিনি। হাসপাতালের অবশ্য দাবি, সব রকম চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনকে কড়া বার্তা দিলেন মমতা
দেগঙ্গার চাঁপাতলার রমজান আলি (৪৪) ৭ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন।
রবিবার সন্ধ্যায় রমজানের পেট ফুলে যায়, সঙ্গে শ্বাসকষ্ট। কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সোমবার তাঁর মৃত্যু হয়। আমুলিয়ার চাঁদপুরের মাবিয়া বিবিকে (৫০) স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসার পাশাপাশি রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে রবিবার জানা যায়, ডেঙ্গি হয়েছে। বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যায় মাবিয়া। দেগঙ্গার কলিযুগার আমেনা বিবির (২৩) জ্বর হলে মঙ্গলবার তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বারাসত হাসপাতালে। সেখান থেকে পাঠানো হয় আইডি হাসপাতালে। শুক্রবার ফের সেখান থেকে স্থানান্তরিত করা হয় নীলরতন সরকার হাসপাতালে। রবিবার মারা যান আমিনা।
হাবরা থানার আয়রা এলাকার বাসিন্দা হাজিরা বিবি (৬৭) জ্বর নিয়ে বারাসতের এক বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। রবিবার মারা যান তিনি। রবিবার কলকাতার নার্সিংহোমে মৃত্যু হয় নৈহাটির বাসিন্দা ভিকি সাউয়ের (২৯)। মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গি হয়েছিল বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। এ দিনই শিলিগুড়িতে মৃত্যু হয়েছে মনক রায়ের (৩৭)। পরিবারের দাবি, মনকের ডেঙ্গির উপসর্গ ছিল। যদিও মৃত্যুর শংসাপত্রে লেখা হয়েছে ‘এনএসওয়ান রিঅ্যাকটিভ’। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, ‘‘এনএসওয়ান মানেই ডেঙ্গি বলা যাবে না। ম্যাক এলাইজা পরীক্ষায় ওই রোগীর কী রিপোর্ট এসেছে তা খোঁজ নিচ্ছি।’’ জ্বর নিয়ে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছেন সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সভাপতি জীবেশ সরকার। পুরসভার দুই সিপিএম কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ জয় চক্রবর্তী ও পরিমল মিত্র জ্বর, ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে শহরের দুটি আলাদা নার্সিংহোমে ভর্তি রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy