রাজ্য প্রশাসনের একাংশের মতে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বন্দিদের সংশোধন প্রক্রিয়ার জনক। তাঁর হাত ধরেই শুরু হয়েছিল বন্দিদের নিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সংগঠিত করা। বছরখানেক ধরে তিনি রাজ্য কারা দফতরের উপদেষ্টার পদেও রয়েছেন।
এ হেন বংশীধর শর্মা এ বার অভিনয় করছেন থিয়েটারে, জেলের বন্দিদের সঙ্গে। নাটকের নাম ‘টিহাউস ইন দ্য অগস্ট মুন’। এটি বন্দিদের অভিনীত দ্বিতীয় ইংরেজি নাটক। যার প্রথম অভিনয় হবে আজ, মঙ্গলবার।
ঘটনাচক্রে এই নাটকের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আরও ঘটনাপ্রবাহ। জেলের বন্দিদের দ্বারা অভিনীত প্রথম ইংরেজি নাটক ‘বেগম সমরু’র পরিচালক রোহিত পমব্রা বছর দুই আগেই শুরু করেছিলেন ‘টিহাউস ইন দ্য অগস্ট মুন’-এর কাজও। কিন্তু হঠাৎই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২০ অগস্ট মৃত্যু হয় রোহিতবাবুর। আচমকাই রোহিতের মৃত্যুতে আটকে যায় এই নাটকের কাজ। মন ভেঙে যায় বন্দিদেরও। শেষমেশ রোহিতের দুই সহযোগী নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কৃষ্ণা রায় হাল ধরেন নাটক পরিচালনার। তাঁদেরই নেতৃত্বে মঞ্চস্থ হতে চলেছে এই নাটক। রোহিতবাবুর জন্মদিনটিই বেছে নেওয়া হয়েছে প্রথম অভিনয়ের দিন হিসেবে।
‘টিহাউস ইন দ্য অগস্ট মুন’ নাটকের গল্পও অভিনব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ জাপানি দ্বীপ ওকিনাওয়ার দখল নিতে চায় মার্কিন সেনাবাহিনী। সেই লক্ষে ক্যাপ্টেন ফিসবিকে পাঠানো ওকিনাওয়ায়। উদ্দেশ্য ওকিনাওয়ার বাসিন্দাদের মধ্যে মার্কিন ভাবধারা ঢুকিয়ে দেওয়া। কিন্তু ওকিনাওয়াবাসীদের মার্কিন ভাবধারায় পরিবর্তিত করার বদলে ফিসবি হয়ে যান পুরোদস্তুর ওকিনাওয়ারই এক বাসিন্দা।
ফিসবিকে পাঠিয়েছেন মার্কিন সেনার যে কর্নেল, সেই ওয়েনরাইট পার্ডির চরিত্রেই অভিনয় করছেন প্রাক্তন আইজি (কারা) বংশীধর শর্মা। জেল দফতরে যিনি বিখ্যাত বিডি শর্মা নামেই।
এর আগে বাল্মীকি প্রতিভা-সহ বেশ কয়েকটি গীতিনাট্য এবং নাটকেও কাজ করেছেন তিনি। তবে সবেতেই থেকেছেন পর্দার পিছনে। এই বার প্রথম মঞ্চে দেখা যাবে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘‘আসলে, রোহিত আমাকে অনেকবার অনুরোধ করেছিল অভিনয়ের জন্য। তখন আমি নিমরাজি ছিলাম। কিন্তু রোহিতের মৃত্যুর পরে আমার কাছে এই কাজটা দায়িত্ব হয়ে গেল। রোহিতের ইচ্ছে তো পূরণ করতেই হবে।’’
পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়া ‘টিহাউস ইন দ্য অগস্ট মুন’-এর লেখক ফার্ন জে স্নাইডার। ১৯৫৩ সালে এটি প্রথমে গীতিনাট্য হিসেবে মঞ্চস্থ হয়। ১৯৫৬ সালে গল্পটি মুক্তি পায় হলিউডের রূপোলি পর্দাতেও। গল্পের সূত্রধরের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন মার্লিন ব্র্যান্ডো।
মার্কিন সেনার এই পরিবর্তনের কাহিনিই এ বার উঠে এসেছে বন্দিদের অভিনয়েও।
যা নিয়ে অন্যতম পরিচালক নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘বন্দিদের জীবনটাও তো পরিবর্তনেরই। কাজে এই পরিবর্তনের কাহিনি তাঁদেরকে আরও উদ্বুদ্ধ করবে বলেই মনে হয়।’’ এই নাটকটি বাছার আরও একটি কারণ রয়েছে বলে জানান নন্দিনী। তাঁর কথায়, ‘‘এই নাটকে অনেক চরিত্র রয়েছে এবং নাটকটি সঙ্গীতধর্মী। ফলে অনেক বেশি সংখ্যক বন্দিকে যুক্ত করা গিয়েছে এতে। তাঁরা কাজ করতে আনন্দ পাবেন ভেবেই এটি বেছেছিলেন রোহিত পমব্রা।’’
নন্দিনী জানান, রোহিত পমব্রার মৃত্যুর এই কাজ আর হওয়ার বিশেষ আশা ছিল না তাঁদের। কিন্তু কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে বিডি শর্মার পাশাপাশি সাহায্য করেন কারা দফতরের ডিজি অরুণ গুপ্ত এবং আলিপুর জেলের সুপার সৌমিক সরকার।
‘বেগম সমরু’র সময়ে বন্দিদের ইংরেজি বলায় সড়গড় করতে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিলেন রোহিতবাবু। এ বারের নাটকে ‘বেগম সমরু’তে অভিনয় করা জনা পাঁচেক শিল্পী রয়েছেন।
বংশীধর শর্মা ছাড়াও রয়েছেন জেলের দুই কর্মী। এ ছাড়া বাকি জনা বারো বন্দি একেবারেই নতুন। এ বারে নতুন করে তাঁদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ করে তুলেছেন রোহিত পমব্রা। নাটকের মধ্যে বেশ কিছু তর্জমা রয়েছে জাপানি ভাষাতেও। জাপানি উচ্চারণ এবং অভিব্যক্তি শেখানোর জন্যও আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট বন্দিদের, জানান নন্দিনী।
মূলত আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের বন্দিরাই অভিনয় করছেন এই নাটকে। তবে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের পাঁচ বন্দিও। যার মধ্যে এক বন্দি আবার বিচারাধীন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy