টায়ারের দোকান থেকে এক দিনের জন্য চারটে টায়ার ভাড়া নিয়ে, গাড়ি ঝাঁ-চকচকে রং করে হাজির করতে হবে পরিবহণ দফতরের অফিসে। তার পরেও কিছু খামতি রয়ে গেলে মোটা টাকার বান্ডিল গুঁজে দিতে হবে পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা অফিসারের হাতে। তা হলেই কেল্লা ফতে! গাড়ির অবস্থা যেমনই থাকুক, ফিটনেস শংসাপত্র পেতে কোনও অসুবিধাই হবে না।
মোটর ভেহিক্লস ইনস্পেক্টরদের এই মৌরসিপাট্টা এ বার শেষ হওয়ার মুখে। কারণ, গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা (সিএফ)-র দায়িত্ব মোটর ভেহিক্লস ইনস্পেক্টরদের হাতে আর রাখছে না সরকার। পরিবর্তে রাজ্য জুড়ে কিছু বেসরকারি কেন্দ্রকে এই কাজের অনুমোদন দেবে সরকার। শুক্রবার এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।
প্রস্তাবে ঠিক হয়েছে, ওই সব কেন্দ্রই গাড়ির ফিটনেস শংসাপত্র দেবে। ঠিক যে ভাবে সরকার নিযুক্ত বিভিন্ন বেসরকারি কেন্দ্র গাড়ির দূষণ সংক্রান্ত শংসাপত্র দেয়।
নতুন এই নিয়মের জন্য আইন সংশোধন বা কেন্দ্রের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানাচ্ছেন রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা।
রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘১৯৮৮ সালের কেন্দ্রীয় মোটর ভেহিক্লস আইনে এমন কেন্দ্রকে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়ার সংস্থান ছিল।
সেই মতো ইতিমধ্যেই অনেক রাজ্য তা করেছে। এ বার পশ্চিমবঙ্গও তা করতে চলেছে।’’
কেন এমন সিদ্ধান্ত?
রাজ্য পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, প্রতিদিনই কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে গাড়ির সংখ্যা দ্রুত গতিতে বাড়ছে। এত গাড়ির ‘স্বাস্থ্য’ পরীক্ষার জন্য যত জন মোটর ভেহিক্লস ইনস্পেক্টর থাকা প্রয়োজন, তা সরকারের হাতে নেই। ফলে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা যতটা কড়া ভাবে হওয়া প্রয়োজন, ততটা হয় না।
অনেক ক্ষেত্রেই ইনস্পেক্টরেরা অর্থের বিনিময়ে ফিটনেসে খামতি থাকা গাড়িকেও শংসাপত্র দিয়ে দেন বলে ভুরি ভুরি অভিযোগ উঠেছে। ওই পরিবহণ কর্তা বলেন, ‘‘ওই সব অভিযোগ দেখেই ফিটনেস পরীক্ষাকে আরও সুষ্ঠু নিয়মের বেড়াজালে বাঁধার এই সিদ্ধান্ত।’’
পাশাপাশি, আরও একটি কারণ আছে। রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, দুর্ঘটনার নিরিখে এ রাজ্য ক্রমশই উপরের দিকে উঠে আসছে। রাজ্যে পথ-দুর্ঘটনার উপরে রাশ টানতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্প চালু করেছেন। কিন্তু তাতেও দুর্ঘটনা কমেনি।
ওই পরিবহণ কর্তা আরও বলেন, ‘‘পথ দুর্ঘটনা কমাতে হলে গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা কড়া হওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বাইরের কোনও সংস্থা ওই ফিটনেস পরীক্ষা করলে ভবিষ্যতে কোনও গাফিলতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ধরতেও আমাদের সুবিধা হবে। তাতে গাড়ির ফিটনেসের মান বাড়বে। ব্রেক ডাউন বা ব্রেক ফেল করে দুর্ঘটনার ঘটনাও কমবে।’’
কাদের দেওয়া হবে এই ফিটনেস পরীক্ষার দায়িত্ব?
পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর, কোন সংস্থাকে গাড়ি পরীক্ষা কেন্দ্র তৈরির অনুমোদন দেওয়া হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রাথমিক ভাবে যে সব গাড়ি সংস্থা রয়েছে, তাদের ওয়ার্কশপেই গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা কেন্দ্র তৈরির কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। সে ক্ষেত্রে ওই সব সংস্থাকে গাড়ি পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়া হবে। কতটা জায়গা থাকলে, কোন কোন যন্ত্র থাকলে অনুমোদন দেওয়া হবে, তার নির্দিষ্ট তালিকাও রয়েছে। তার ভিত্তিতেই তৈরি হবে কেন্দ্র। নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবহণ দফতরের অফিসারেরা পরিদর্শন করে রিপোর্ট দেবেন পরীক্ষা কেন্দ্র ঠিক মতো চলছে কি না। এখন যে সব শর্ত পূরণ হলে কোনও গাড়িকে ফিটনেস শংসাপত্র দেওয়া হয়, পরীক্ষা কেন্দ্রের ক্ষেত্রে সে সব শর্ত অপরিবর্তিতই রাখা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy