Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

গরমে টোম্যাটোয় লাভ

খাঁ খাঁ রোদেও বিশ্রাম নেই বাগনানের গোপালপুর এলাকার কয়েকশো টোম্যাটো চাষির। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাঁদের ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে টোম্যাটোর পরিচর্যা, তোলা ও তা বাজারে পাঠানোর কাজে। এমনিতে ঠান্ডা আবহাওয়ায় টোম্যাটোর ভাল ফলন হয় বলে শীতকালে চাষ হয় বেশি।

বাজারের পথে। উলুবেড়িয়ায় সুব্রত জানার তোলা ছবি।

বাজারের পথে। উলুবেড়িয়ায় সুব্রত জানার তোলা ছবি।

মনিরুল ইসলাম
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০২:৩৫
Share: Save:

খাঁ খাঁ রোদেও বিশ্রাম নেই বাগনানের গোপালপুর এলাকার কয়েকশো টোম্যাটো চাষির। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তাঁদের ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে টোম্যাটোর পরিচর্যা, তোলা ও তা বাজারে পাঠানোর কাজে। এমনিতে ঠান্ডা আবহাওয়ায় টোম্যাটোর ভাল ফলন হয় বলে শীতকালে চাষ হয় বেশি। কিন্তু ‘সক্ষম’ ও ‘অভিলাষ’ নামে যে দু’টি হাইব্রিড জাতের টোম্যাটো চাষ করেন গোপালপুরের চাষিরা, তা ৪০-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও সহ্য করে নেয়। বোরো চাষ না করে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে এই হাইব্রিড টোম্যাটো লাগিয়ে মার্চ-এপ্রিল মাসে তাই ভাল ফলন পাওয়া যায়। অসময়ের টোম্যাটোর চাহিদা বেশি বলে মুনাফাও বেশি হয়।

গোপালপুরের চাষি সোমনাথ বেজ এই বছরে ১২ বিঘা জমিতে টোম্যাটো চাষ করেছেন। গত বছরে তিনি ১১ বিঘা জমিতে শুধু টোম্যাটো চাষ করে লক্ষাধিক টাকা আয় করেছিলেন। তাঁর এই সাফল্যের কারণে তাঁকে কৃষকরত্ন শিরোপা দেওয়া হয় সরকারের তরফে। আর এক চাষি অরূপ শাসমল এই বছরে ৬ বিঘা জমিতে টোম্যাটো চাষ করেছেন। তাঁরা ছাড়াও গোপালপুরের হারাধন বেরা, বিশ্বনাথ বেজ, হেমন্ত বেজ-সহ কয়েকশো চাষি অসময়ের টোম্যাটো চাষ করছেন। গরমের তিন থেকে চার মাস তা সরবরাহ হচ্ছে ধূলাগড়ে, পাঁশকুড়ায়। ধূলাগড়ের সব্জি ব্যবসায়ী সত্যগোপাল সাহা বলেন, ‘‘এই সময় রাজ্যের বাইরে থেকে টোম্যাটো আনার পাশাপাশি বাগনানের ওই চাষিদের কাছ থেকেও টোম্যাটো নিচ্ছি। এখানের টোম্যাটোর স্বাদ ভাল হওয়ায় চাহিদা বেশি।’’

গ্রীষ্মকালীন টোম্যাটো চাষের জন্য যে বিশেষ পরিচর্যা নিতে হয়, এমনটা নয়। বেশি তাপমাত্রা সহ্যকারী জাতের বীজ এখন মোটামুটি রাজ্যের সর্বত্রই পাওয়া যায়। জৈব সার মিশিয়ে প্রয়োজন মতো চাষ দিয়ে দিন দশেক মাটি রোদে ভাল করে শুকিয়ে জমি তৈরি করা হয়। বীজ ছড়ানোর ৩০-৩৫ দিনের মাথায় চারা মোটামুটি ১২-১৫ সেমি উঁচু হলে মূল জমিতে রোয়ার উপযুক্ত হয়েছে বলা যায়। ২ ফুট/৩ ফুট অন্তর মাদা বানিয়ে সেই মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য-অনুখাদ্য মিশিয়ে চারা লাগানো হয়। তার দিন কয়েক পরে ভাল করে সেচ দিয়ে জমিতে পাটি বাঁধা হয়।

মনে রাখতে হবে, পরিমাণ মতো নাইট্রোজেন না পেলে টোম্যাটো গাছ দুর্বল হয় ও ফলন কম হয়। আবার নাইট্রোজেনের বেশি ব্যবহারে গাছের পাতা ও শাখা এতটাই ছেয়ে যায় যে ফলন কম হয়। তাই সারের পরিমাণটা জানা জরুরি। শেষ চাষের সময় একর প্রতি ৬০ কুইন্ট্যাল জৈব সারের সঙ্গে ৩৫ কেজি ইউরিয়া, ১০০ কেজি সিঙ্গল সুপার ফসফেট ও ২৭ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ প্রয়োগ করতে হবে। ২১ দিন পর চাপান সার হিসাবে ১৮ কেজি ইউরিয়া ও ফুল ধরার সময় আর এক বার ওই পরিমাণে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। যেহেতু গরমে চাষ হচ্ছে, সেহেতু মাটির রসের দিকেও নজর রাখতে হবে। একেবারে শুকনো খটখটে মাটি হয়ে গেলে তার পর জল দিলেই টোম্যাটো ফেটে যাবে। আবার সবসময় বেশি বেশি জল দেওয়াও চলবে না। মাটিতে রস কমে আসার সময় বুঝে মেপে জলসেচ করতে হবে। আর কীটনাশক বা রাসায়নিক সারের প্রয়োগ কমিয়ে যতটা সম্ভব পরিবেশবান্ধব জৈব উপায়ে (জৈব ছত্রাকনাশক, ফেরোমেন ফাঁদের প্রযুক্তি ব্যবহার) চাষ করতে হবে। ভাল ফলনের পাশাপাশি বজায় থাকবে মাটির স্বাস্থ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE