Advertisement
১১ মে ২০২৪
স্কটিশ চার্চ

অধ্যক্ষ বিদায়ে প্রশ্ন, শিক্ষায় রাজনীতি কেন

কলেজ থেকে তাঁকে যেতে না-দেওয়ার আকুলতায় অনশন-অবস্থান পর্যন্ত করেছিলেন কিছু পড়ুয়া। তার সঙ্গে রাজনৈতিক চাপান-উতোর তো ছিলই। সব মিলিয়ে টানা দিন দশেকের টালবাহানার পরে অবশেষে স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি পেলেন অমিত আব্রাহাম। দীর্ঘ বৈঠকের পরে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে কলেজের কাউন্সিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৯
Share: Save:

কলেজ থেকে তাঁকে যেতে না-দেওয়ার আকুলতায় অনশন-অবস্থান পর্যন্ত করেছিলেন কিছু পড়ুয়া। তার সঙ্গে রাজনৈতিক চাপান-উতোর তো ছিলই। সব মিলিয়ে টানা দিন দশেকের টালবাহানার পরে অবশেষে স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি পেলেন অমিত আব্রাহাম। দীর্ঘ বৈঠকের পরে তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে কলেজের কাউন্সিল।

শিক্ষা শিবিরের প্রশ্ন, অধ্যক্ষ ব্যক্তিগত ভাবে অব্যাহতি পেয়ে গেলেও শিক্ষায় রাজনীতির ছড়ি ঘোরানোর আদত অসুখটার নিরাময় হল কি? প্রভাবশালী দুই মন্ত্রীর কাজিয়ার মাঝখানে পড়ে যাওয়াতেই তো অধ্যক্ষকে নিয়ে টানাপড়েন চলছিল স্কটিশ চার্চ কলেজে। এক জন অধ্যক্ষের বিদায়ে আপাতত হয়তো ঠান্ডা হল পরিস্থিতি। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান আদৌ হল কি?

এই প্রশ্নের জবাবে কোনও পক্ষই বিশেষ মুখ খুলছে না। ছাত্র ভর্তি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ২২ অগস্ট পদত্যাগপত্র পেশ করেন অমিতবাবু। অশান্ত হয়ে ওঠে কলেজের পরিবেশ। অধ্যক্ষকে ফেরানোর দাবিতে রাস্তা অবরোধ, অনশন করেন এক শ্রেণির পড়ুয়া। কিন্তু পদত্যাগের সিদ্ধান্তে অনড় ছিলেন অধ্যক্ষ। প্রথম দিকে তিনি ইস্তফার কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানে গভীর রাজনৈতিক অসুখের ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করেননি। ছাত্রদের আবেগকে সম্মান দিয়েও জানান, তাঁকে ফিরিয়ে আনার জন্য পড়ুয়ারা অনশনে করছেন করুন। চলে যাওয়ার মৌলিক অধিকার আদায়ে প্রয়োজনে তিনিও অনশনে বসতে পারেন।

বুধবার বিশপ অশোক বিশ্বাসের ঘরে কলেজের কাউন্সিল বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমেই অধ্যক্ষের পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। বৃহস্পতিবার ওই পদের দায়িত্ব নিয়েছেন সহ-অধ্যক্ষা অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু অধ্যক্ষের আকস্মিক ইস্তফার যে-ঘটনা জোর আলোড়ন তুলেছিল, তার এ-হেন নিষ্পত্তিতে মূল সমস্যার জট কতটা খুলল, আদৌ খুলল কি না, তা নিয়ে শিক্ষা মহল সন্দিহান।

সোমবার অমিতবাবুকে অধ্যক্ষ-পদে ফিরিয়ে আনার দাবিতে রাস্তায় অনশন-অবস্থানে বসেন পড়ুয়াদের একাংশ। রাস্তা আটকে যাওয়ায় পুলিশকর্তারা অমিতবাবুকে অুনরোধ করেন, তিনি যেন ছাত্রদের বুঝিয়ে রাস্তা অবরোধমুক্ত করেন। পদত্যাগী অধ্যক্ষ সেই পড়ুয়াদের অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়ে সটান বড়তলা থানায় হাজির হয়ে বলেন, ‘‘গ্রেফতার করুন আমাকে।’’ সেই ঘটনা প্রশ্ন তুলে দেয়, ছাত্রছাত্রীরা যাঁর জন্য অনশন করতে পারেন, এমন এক জন অধ্যক্ষকে চলে যেতে হবে কেন? কী এমন সমস্যা হয়েছে যে, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অনুরোধ সত্ত্বেও ইস্তফায় অনড় থাকেন অধ্যক্ষ?

তখনই মূল সমস্যার পর্দা উঠতে শুরু করে। অমিতবাবু জানিয়ে দেন, ছাত্রদের জন্য কাজ করতে চেয়েও কিছু বুদ্ধিজীবীর জন্য তিনি তা করতে পারেননি। এই পরিস্থিতি মানতে না-পেরেই চলে যাচ্ছেন তিনি।

অমিতবাবুর অভিযোগ, ‘‘লড়াইটা পুরনো। ত্রিমুখী লড়াই। মাঝখানে ফেঁসে গিয়েছি আমি।’’ স্কটিশ চার্চে অন্য ‘লড়াই’-এর আভাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রীও। তিনি বলেছিলেন, ‘‘এটা স্কটিশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তবে অনেক রকম খবরই আছে। হঠাৎ করে কেউ সরে যাচ্ছে না।’’ ‘অনেক রকম খবর’ খোলসা করেননি শিক্ষামন্ত্রী। কে বা কারা তাঁকে কী ভাবে ফাঁসাল, সেটা ব্যাখ্যা করেননি বিদায়ী অধ্যক্ষও। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘ইস্তফা গ্রহণ করায় আমি খুশি। কিছু দিন পরেই এখান থেকে চলে যাব। এখন সম্পূর্ণ বিশ্রাম চাই।’’

কিন্তু তাঁর বিদায়ে যে-হাজারো প্রশ্নের আগমন হল, তার নিরসনের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। মন্ত্রীদের কাজিয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান পদাধিকারীকে কেন এ ভাবে ‘ফেঁসে যেতে’ হবে, মিলছে না তার জবাব। স্কটিশের অদূরে জয়পুরিয়া কলেজের কাজিয়ার জেরে এক মন্ত্রী বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সমিতিতে কোনও মন্ত্রীরই থাকা উচিত নয়। সেই মন্তব্য নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে এই প্রশ্ন স্কটিশের ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ছে যে, শিক্ষায় রাজনীতির ছড়ি কি এ ভাবেই ঘুরতে থাকবে? যার জেরে অধ্যক্ষকে চলে যেতে হয়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE