Advertisement
০৫ মে ২০২৪

দলে ক্ষয় রুখতে দুধকুমারের প্রশংসায় রাহুল

বীরভূমে দলের ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এ নামলেও কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল বিজেপি-তে। রাজ্য সভাপতির বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ তুলে বীরভূম জেলা বিজেপি-র সভাপতি পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন দুধকুমার মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

বীরভূমে দলের ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’-এ নামলেও কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল বিজেপি-তে।

রাজ্য সভাপতির বিরুদ্ধে গুচ্ছ অভিযোগ তুলে বীরভূম জেলা বিজেপি-র সভাপতি পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন দুধকুমার মণ্ডল। বুধবার সেই দুধকুমারেরই প্রশংসা শোনা গেল বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহল সিংহের মুখে। এ দিন দুপুরে সিউড়িতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে ধর্নামঞ্চ থেকে দেওয়া রাহুলের সেই ‘বার্তা’য় অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি। উল্টে দলের নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের
প্রতি আস্থা দেখিয়ে দুধকুমার রাহুলকেই দরজা দেখানোর পক্ষে সওয়াল করে বসলেন!

লোকসভা ভোটের পরে এই দুধকুমারের নেতৃত্বেই রাজ্যে বিজেপি-র মুখ হয়ে উঠতে শুরু করেছিল বীরভূমের পাড়ুই এলাকা। সমানে টক্কর দিয়ে তৃণমূলের দাপুটে জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের খাসতালুকে দাঁত ফুটিয়েছিল বিজেপি। পুরভোটের ঠিক আগে রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষ জানিয়ে জেলা সভাপতির পদ ছেড়ে দেন দুধকুমার। এ দিনও দুধকুমারের বক্তব্যে নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ স্পষ্ট। বিজেপি-র ধর্নামঞ্চের কাছে থেকেও মঞ্চে আসেননি তিনি। দুধকুমার বলেন, ‘‘দলের অন্দরে বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ-বিতৃষ্ণা ফুটে উঠছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তা উপলব্ধি করেছেন। আশা করি তাঁরা পদক্ষেপ করবেন। তবে, দলের গঠনতন্ত্র মেনে দুই মেয়াদের পরে কেউ সভাপতি থাকতে পারেন না। রাহুলবাবুর তৃতীয় মেয়াদ চলছে। সাংগঠনিক ভাবেই ওঁকে সরতে হবে।’’

বস্তুত, দুধকুমারের ইস্তফার পর থেকে জেলা বিজেপি-তে যে ক্ষয় শুরু হয়েছিল, তা এখনও চলছে। দলের নেতাদের মধ্যেও বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধ তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সদ্য দল ছেড়ে তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়েছেন পাড়ুইয়ে দলের দুই সংগঠক হৃদয় ঘোষ ও নিমাই দাস। সাত্তোরের নির্যাতিতা বধূরও বিজেপি-তে থাকা নিয়েও নানা রটনা শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে অনেকটাই ব্যাকফুটে বীরভূমে বিজেপি-র সংগঠন।

জেলায় নেতিয়ে পড়া দলীয় সংগঠনকে চাঙ্গা করতে এ দিনের ধর্নামঞ্চকেই হাতিয়ার করেছিল বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব। তাই ‘মা-বোনের সম্মান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা’য় আয়োজিত ওই মঞ্চ পরিণত হল কার্যত সাংগঠনিক ক্লাসঘরে। তাই তৃণমূল সরকারকে তীব্র আক্রমণ শানানোর পাশাপাশি নিজেদের বক্তৃতায় কী ভাবে দলকে মজবুত করা হবে, কেন বিজেপি ভাল, কেন বিধানসভায় মানুষ বিজেপি-কে ভোট দেবেন, কী ভাবেই বা মানুষকে তা বোঝাতে হবে— দলীয় কর্মী-সমর্থকদের এ সব বোঝাতেই যেন বেশি ব্যস্ত হতে দেখা গেল রাহুল সিংহ, বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বা নেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এমনকী, শাসকদলের দিক থেকে সমস্ত জল্পনার পরেও তিনি যে এখনও বিজেপি-তেই রয়েছেন, তা বোঝাতে মঞ্চে হাজির করানো হয়েছিল সাত্তোরের নির্যাতিতাকেও।

শমীক অভিযোগ করেন, বীরভূমে পুলিশ-প্রশাসন বলে কিছু নেই। জেলার পুলিশ সুপার তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতিতে পরিণত হয়েছেন। রাহুলবাবু নিজের বক্তৃতায় কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, সারদা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি-র কোনও বোঝাপড়া হয়নি। কিন্তু, তাঁর বক্তব্যের মূল সুর বাঁধা ছিল বিধানসভা ভোটের আগে দলের সংগঠন মজবুত করা নিয়ে। ওই
সূত্রেই দুধকুমারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘‘দুধকুমার দলের শক্তিশালী কর্মকর্তা। তিনি দলেই আছেন। পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন। ওঁর ইস্তফা গৃহীত হয়েছে মাত্র। কিন্তু, দলের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হবে দুধকুমারকেই।’’

দুধকুমার অবশ্য ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলে দিয়েছেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার মানুষের কাছে জনপ্রিয় নেত্রী। তাঁর লড়াই দেওয়ার ক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা, দুই-ই আছে।’’

রূপা কিন্তু রাহুলের এ দিনের মঞ্চে ছিলেন না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE