Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ভেঙ্কটেশ উচ্ছেদে মমতাও পাশে: গডকড়ী

দু’সপ্তাহ আগে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এ বার ফের জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী জানালেন, তারাতলায় বন্দরের জমি থেকে শ্রীকান্ত মোহতার সংস্থাকে উৎখাত করে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের স্টুডিও ভেঙে দেওয়া হবে। শুধু তিনি নন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ওই এলাকায় কোনও বেআইনি কাজ সমর্থন করেন না বলেও জানান তিনি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২৫
Share: Save:

দু’সপ্তাহ আগে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এ বার ফের জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী জানালেন, তারাতলায় বন্দরের জমি থেকে শ্রীকান্ত মোহতার সংস্থাকে উৎখাত করে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের স্টুডিও ভেঙে দেওয়া হবে। শুধু তিনি নন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ওই এলাকায় কোনও বেআইনি কাজ সমর্থন করেন না বলেও জানান তিনি।

তারাতলায় বন্দরের জমিতে ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের স্টুডিও চালানোর প্রসঙ্গে আজ জাহাজমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি অফিসারদের বলেছি সমস্ত বেআইনি কাঠামো ভেঙে দিতে। ওখানে একটা ফিল্ম কোম্পানির স্টুডিও চলছে। ওটাও ভেঙে দেওয়া হবে। বেআইনি জবরদখলকারীদের কোনও সুরক্ষা দেওয়া হবে না।’’

দু’সপ্তাহ আগে বেআইনি জবরদখলকারীদের উৎখাত করার হুঁশিয়ারি দিয়ে নিতিন বলেছিলেন, ‘‘উনকো উখারকর ফেকেঙ্গে...ছোড়েঙ্গে নেহি।’’ সঙ্গে তারাতলার ঘটনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ও পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন নিতিন। কারণ বন্দর কর্তৃপক্ষ জবরদখল করা জমি উদ্ধার করতে পুলিশের সাহায্য চেয়েও পায়নি। জমি পুনর্দখল হয়ে যাওয়ার পরেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। আজ নিতিন বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক খুবই ভাল। মমতাও বলেছেন যে তিনি বন্দর এলাকায় কোনও বেআইনি কাজ সমর্থন করেন না।’’

জাহাজমন্ত্রীর এ বক্তব্য সুকৌশলে মমতাকে পাশে পাওয়ারই চেষ্টা বলে মনে করছেন রাজনীতিকরা। কারণ কলকাতায় বন্দরের জমি থেকে জবরদখল হটাতে রাজ্য সরকারের উপরেও চাপ বাড়াতে চাইছে কেন্দ্র। নরমে-গরমে

রাজ্য সরকারের সাহায্য নিয়েই শাসক দলের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের হাত থেকে বন্দরের জমি উদ্ধার করতে চাইছে জাহাজ মন্ত্রক। নীতিন গডকড়িও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আলাদা করে চিঠি লিখছেন বলে মন্ত্রক সূত্রের খবর।

তারাতলায় পি-৫১ হাইড রোড এক্সটেনসনের জবরদখল হয়ে যাওয়া জমি নিজেদের দখলে আনতে একাধিকবার কলকাতা পুলিশের সাহায্য চেয়েছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পুলিশ কিছুই করেনি। বাধ্য হয়ে গত ১৩ সেপ্টেম্বর পুলিশকে জানিয়ে বন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা নিজেরাই জমির দখল নেন। এর পরেই দেড়শো-দুশো মস্তান বাহিনী ওই জমি পুনর্দখল করে। তখনও পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল। তার পরেও তারাতলা থানার কাছে বন্দর কর্তৃপক্ষ সাহায্য চেয়েছেন।

তবে কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী জবরদখলকারী সরানোর কথা বললেও কলকাতা পুলিশ এখনও বন্দর কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে রাজি হয়নি। বন্দরের খবর, দু’বার চিঠি দেওয়ার পর কলকাতা পুলিশ ফের জমির দখল নেওয়ার সময় ফোর্স দিতে রাজি হয়নি। এর মধ্যে এলএমজের প্রতিনিধিরা বন্দরের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করে ওই জমি ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়ে এসেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ভেঙ্কটেশ ৮০ শতাংশ মালপত্র সরিয়ে নিয়েছে। বাকি মাল সরাতে আরও মাস খানেক লাগবে। তখনই তারা পি-৫১ এর জমি বন্দরের হাতে তুলে দেবে।

চাপের মুখে ভেঙ্কটেশ ফিল্মস অবশ্য ইতিমধ্যেই ধাপে ধাপে ওই জমি ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের দাবি, জমি ঘিরে বিবাদের বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। এলএমজে কনস্ট্রাকশনের কাছ থেকে তারা ওই জমি ভাড়া নিয়েছিল। জমিতে স্টুডিও গড়তে প্রায় ৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এখন তারা ওই জমি ছেড়ে দিতে চায়। একাংশ জমি তারা আগে ছেড়ে দেবে। বাকি জমি থেকে স্টুডিও সরানোর জন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।

তবে জাহাজমন্ত্রীর আজকের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, কোনও সময় দিতে রাজি নন তিনি। তার আগেই স্টুডিও ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছেন নিতিন। বন্দর কর্তৃপক্ষও ভেঙ্কটেশের ওই আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন। বন্দর কর্তাদের যুক্তি, তাঁদের অন্ধকারে রেখে এলএমজে-র সঙ্গে চুক্তি করেছিল ভেঙ্কটেশ। ফলে বন্দরের চোখে ভেঙ্কটেশ জবরদখলকারী। অবিলম্বে ওই জমি তাদের ছেড়ে দিতে হবে।

আজ শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে ভেঙ্কটেশ মামলার শুনানি হতে পারে। এ সংক্রান্ত চারটি মামলা একত্রে এনে মামলার শুনানি শুরু হলে আইনি প্রক্রিয়াও ঠিক ভাবে এগোতে পারবে বলে বন্দরের কর্তারা মনে করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE