শিলিগুড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে সূর্যকান্ত মিশ্র।
শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভলপমেন্ট অথরিটির (এসজেডিএ) দুর্নীতি মামলায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জড়িতদের একাংশকে আড়াল করার অভিযোগ তুললেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। সোমবার সূর্যবাবু শিলিগুড়িতে দলের বৈঠক করতে এসেছিলেন। হিলকার্ট রোডের অনিল বিশ্বাস ভবনে দলীয় বৈঠকের পর সূর্যবাবু বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি এসজেডিএ-তে দুর্নীতি। এই দুর্নীতিতে যুক্ত আসল লোকেদের কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী সিআইডি-র পায়ে বেড়ি পড়িয়ে রেখেছেন। সিআইডি-র মানে এখন চিফ মিনিস্টারস আইডি।’’
বিরোধী দলনেতা জানান, ঘটনার সময় যিনি এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান ছিলেন, যাঁরা বোর্ড সদস্য ছিলেন, তাঁদের অনেককে সাক্ষী করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এ আবার কেমন তদন্ত! দুর্নীতিতে বোর্ড সদস্য, তৎকালীন চেয়ারম্যান, বিধায়করা কেউ দায় এড়াতে পারেন না। জনপ্রতিনিধিদের আড়াল করে রাজ্য সরকার তদন্তই এগোতে দিচ্ছে না।’’
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই এসজেডিএ একটি দুর্নীতির মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে। সেখানে সংস্থার প্রাক্তন সিইও তথা আইএএস অফিসার গোদালা কিরণকুমার-সহ ১৬ জনের নাম রয়েছে। যাদের বেশিরভাগই ঠিকাদার এবং এসজেডিএ-র প্রাক্তন কয়েক জন বাস্তুকার। চার্জশিটের সাক্ষীদের তালিকায় সেই সময়কার পাঁচজন বোর্ড সদস্যেরও নাম রেখেছে সিআইডি। চার মধ্যে তৎকালীন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, বরো চেয়ারম্যান রঞ্জন শীলশর্মা, পুরসভার বিরোধী দলনেতা নান্টু পাল এবং জলপাইগুড়ি জেলার তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি চন্দন ভৌমিক আছেন। এদের সকলকে অবশ্য মামলার তদন্তের প্রথম দিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল।
ওই চার্জশিটের তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, বোর্ড সদস্যদের একাংশ দুর্নীতিতে জড়িত। তা ছাড়া এত বড় দুর্নীতি হতেই পারে না। সেখানে সিআইডি বোর্ড সদস্যদের তদন্তের মধ্যে রাখার কোনও উল্লেখই করেনি। এতেই পরিষ্কার হয়েছে, রাজনৈতিক স্বার্থেই সিআইডি কাজ করছে।
শিলিগুড়ি আদালতে গোদালা
এ দিনই শিলিগুড়ি হয়ে কলকাতা ফেরেন রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এসজেডিএ-এর দুর্নীতির ঘটনায় অভিযুক্তদের আড়াল করতে চাইছে রাজ্য সরকার। জনগণের টাকা লুঠ হয়েছে। শুধু গোদালা নয়, আরও অনেকে এই চক্রান্তে রয়েছে। আমরা সকলের শাস্তি চাই।’’
ঘটনাচক্রে এ দিনই দুপুরে গোদালা কিরণকুমারকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের পর এসিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। আদালতে ময়নাগুড়ির বিদ্যুতিক চুল্লির মামলার চার্জশিট জমা পড়ায় তাকে অন্য ছয়টি দুর্নীতি মামলায় আদালতে তোলা হয়েছিল। কিন্তু মামলার তদন্তকারী অফিসার আদালতে না আসায় এবং কেস ডায়েরি আদালত না চাওয়ায় মামলার শুনানি চার দিন পিছিয়ে দেওয়া হয়। তার আগে অবশ্য গোদলার আইনজীবী অভ্রজ্যোতি দাস ও সরকারি আইনজীবী সুদীপ রায় বসুনিয়া, দুজনেই নানা প্রশ্ন তোলেন। অভিযুক্তের আইনজীবী জানতে চান, তদন্তকারী অফিসার না আসলে কী করে মামলার গতিপ্রকৃতি জানা যাবে। কেস ডায়েরিও এখনও আদালতে আসেনি। উল্টে তাঁর মক্কেলকে টানা হেফাজতে রাখা হচ্ছে।
সরকারি আইনজীবী জানান, বিশেষ সরকারি কাজ পড়ে যাওয়ায় তদন্তকারী অফিসার আসতে পারেনি। টেলিফোন করে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন। আগামী ৭ অগস্ট মামলার শুধু শুনানি হবে। অভিযুক্তদের আইনজীবী কেস ডায়েরিও আনার কথাও বলেছেন। আর অভিযুক্তকে ১৪ দিন পর ১৭ অগস্ট জেল হেফাজত থেকে আদালতে হাজির করার কথা বলা হয়েছে। চার্জশিটের মামলাটির দার্জিলিং সেশন কোর্টে বিচারপর্ব হবে।
অভ্রজ্যোতিবাবু জানান, তদন্তকারী অফিসার না থাকলে মামলার গতিপ্রকৃতি তো জানা যায় না। আমরা বিচারককে সেটাই বলেছি। তাই নতুন শুনানির দিন ঠিক হয়েছে। তিনি জানান, আজ, মঙ্গলবার তাঁরা উচ্চ আদালত দার্জিলিং জেলা আদালতে গোদালার জামিনের আবেদন করবেন।
এ দিন মামলা চলাকালীন বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন বসুর আইনজীবী অখিল বিশ্বাস চার্জশিট জমা পড়া মামলাটির আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর দাবি, ‘‘সরকারি টাকা তছরুপের ওই মামলার বিচার দার্জিলিং স্পেশাল কোর্টে হবে। কিন্তু অভিযুক্তদের দুই জনের বিরুদ্ধে এই আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটা ঠিক নয়। তাই তাদের এই কোর্টে সিআইডিকে গ্রেফতার করে হাজির করাতে হবে বা গ্রেফতারি পরোয়ানার রিপোর্টে তা করা যায়নি বলে আদালতে জানাতে হবে। তার পরেই মামলা দার্জিলিঙে যাবে। আদালতকে বিষয়টি দেখতে বলেছি।
সোমবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy