Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মন্ত্রীর বারণ সত্ত্বেও বেতনে কোপ কলেজে

রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তারা বেতন কাটা হবে না বলে জানিয়েছিলেন। বাড়িভাড়া বাবদ কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন কাটা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রীও। কিন্তু সেই আশ্বাস থেকে গিয়েছে নিছক আশ্বাসেই। কার্যক্ষেত্রে বেতন কাটা চলছেই। যেমন, চলতি মাসেই খাস কলকাতার বাসন্তীদেবী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন থেকে ফের বাড়িভাড়া বাবদ অর্থ কেটে নেওয়া হয়েছে। সরকারের তরফে বাড়িভাড়া ভাতায় আর কোপ পড়বে না বলে জানানো সত্ত্বেও আবার কেন এমনটা হল, তা জানতে উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ওই কলেজের প্রতিনিধিরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৯:৩৫
Share: Save:

রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তারা বেতন কাটা হবে না বলে জানিয়েছিলেন। বাড়িভাড়া বাবদ কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন কাটা হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রীও।

কিন্তু সেই আশ্বাস থেকে গিয়েছে নিছক আশ্বাসেই। কার্যক্ষেত্রে বেতন কাটা চলছেই। যেমন, চলতি মাসেই খাস কলকাতার বাসন্তীদেবী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন থেকে ফের বাড়িভাড়া বাবদ অর্থ কেটে নেওয়া হয়েছে। সরকারের তরফে বাড়িভাড়া ভাতায় আর কোপ পড়বে না বলে জানানো সত্ত্বেও আবার কেন এমনটা হল, তা জানতে উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন ওই কলেজের প্রতিনিধিরা। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি বলে কলেজ সূত্রের খবর।

২০১২ সালে রাজ্যের অর্থ দফতর একটি নির্দেশিকা জারি করে জানায়, কোনও সরকারি কর্মচারীর স্বামী বা স্ত্রী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও বাড়িভাড়া বাবদ মিলিত ভাবে তাঁদের প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ কোনও মতেই ছ’হাজার ছাড়াতে পারবে না। আলাদা করে কোনও নির্দেশিকা জারি না-করেই ২০১৪ সালের শেষ থেকে অর্থ দফতরের নির্দেশটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কিছু কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপরেও প্রয়োগ করা হচ্ছে। ফলে আচমকা বেতন কমে যাওয়ায় সঙ্কটে পড়েছেন ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা। শুরু থেকেই এই বিষয়ে আপত্তি-প্রতিবাদ জানানো হচ্ছিল। কিন্তু তাতে যে কোনও ফল হয়নি, বাসন্তীদেবী কলেজের ঘটনাই তার প্রমাণ।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য প্রথম থেকেই বেতনে কোপ মারার এই প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করে আসছেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বেসরকারি ক্ষেত্রের কর্মী হিসেবে স্বামী বা স্ত্রী যে-বেতন পান, তার নিরিখে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন থেকে বাড়িভাড়া ভাতা কিছুতেই কাটা যাবে না। কিন্তু মন্ত্রী লিখিত ভাবে কোনও নির্দেশ দেননি, এই যুক্তিতে বেতন কাটার প্রক্রিয়া চলতেই থাকে। প্রশ্ন ওঠে, উচ্চশিক্ষা দফতর তো বেতন কাটার জন্য আলাদা ভাবে কোনও নির্দেশিকাই জারি করেনি। অথচ বেতন কাটা হচ্ছে। তা হলে টাকা কাটা বন্ধ রাখার জন্য আর মন্ত্রীর লিখিত নির্দেশের অপেক্ষা কেন? তা ছাড়া সব কলেজে না-করে কিছু কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতনই বা কাটা হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন তোলেন অনেকে।

এই নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যে শেষ পর্যন্ত বেতন কাটার সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রাখা হবে বলে চলতি মাসেই জানিয়েছিল উচ্চশিক্ষা দফতর। শাসক দলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসু জানিয়েছিলেন, দফতরের কর্তারা তাঁদের এই আশ্বাস দিয়েছেন। এতে আশ্বস্ত হন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

কিন্তু সম্প্রতি বাসন্তীদেবীর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চের বেতন বাবদ সরকারের পক্ষ থেকে যে-টাকা পাঠানো হয়েছে, তাতে বাড়িভাড়ার অর্থ বাদ পড়েছে বলে ওই কলেজ সূত্রের খবর। এক শিক্ষিকার কথায়, “আমরা আলোচনা করার জন্য উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে যাই। কিন্তু সেখানে কেউ কোনও কথাই বলতে চাননি।”

কৃষ্ণকলিদেবী আপাতত ছুটিতে। তিনি বলেন, “বিষয়টা জানি না। তবে রাজ্যের শিক্ষা অধিকর্তা বলেছিলেন, এই খাতে কারও বেতন কাটা হলে তা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওঁর সঙ্গে দেখা করে বিষয়টা জানাতে পারেন।” শিক্ষা অধিকর্তা নিমাইচন্দ্র সাহাকে বারবার টেলিফোন করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস করেও জবাব পাওয়া যায়নি। আর শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু বলেন, “আমি তো বলেই দিয়েছি, এই খাতে বেতন কাটা যাবে না। তবে ওই নির্দিষ্ট কলেজের ব্যাপারে আমার কাছে খবর নেই।”

শুধু কলেজ নয়, বাড়িভাড়া বাবদ বেতন কাটা হচ্ছে সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলেও। তাঁদের বেতনই বা কোন যুক্তিতে কাটা হবে, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। স্কুল ও কলেজে এ ভাবে বেতন কাটার বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই মামলা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। আগামী মাসে তার শুনানি হওয়ার কথা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE