Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
অভিযোগ জেলার বহু স্কুলে

নিয়ম ভেঙে সভাপতি বাছছে শিক্ষা দফতর

নিয়ম বলে, সরকার-পোষিত স্কুলগুলির পরিচালন সমিতির সভাপতি ও শিক্ষানুরাগীদের যোগ্যতা স্নাতক হতে হবে। কর্মরত কোনও শিক্ষককে পরিচালন সমিতির মাথায় বসানো যাবে না। অথচ জেলার বহু স্কুলই বছরের পর বছর নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:৪৪
Share: Save:

নিয়ম বলে, সরকার-পোষিত স্কুলগুলির পরিচালন সমিতির সভাপতি ও শিক্ষানুরাগীদের যোগ্যতা স্নাতক হতে হবে। কর্মরত কোনও শিক্ষককে পরিচালন সমিতির মাথায় বসানো যাবে না। অথচ জেলার বহু স্কুলই বছরের পর বছর নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে।

কোথাও অভিযোগ উঠছে শাসক দলের মদতপ্রাপ্ত লোক একই সঙ্গে একাধিক স্কুলের দায়িত্বে রয়েছেন। আবার কোথাও শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক না হলেও বহাল তবিয়তে পরিচালন সমিতির সভাপতির পদ আঁকড়ে রয়েছেন অনেকে।

স্কুল শিক্ষা দফতরের যুগ্ম সচিব অসীমকুমার ভট্টাচার্য গত বছরের ২০ এপ্রিল (নির্দেশ নম্বর: ৩০৩) ও ১৪ মে (নির্দেশ নম্বর:৪০০) পরপর দুটি নির্দেশে গভর্মেন্ট স্পনসরড স্কুলগুলির পরিচালন সমিতির সভাপতি ও শিক্ষানুরাগীদের যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেন। তার পরেও জেলার বহু স্কুলে এমনটা চলছে বলে অভিযোগ করছে শিক্ষক সংগঠনগুলিই। তাঁদের দাবি, এক জন একাধিক স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি থাকতে পারবে না বলেই আগেই নির্দেশ জারি করেছিল স্কুল শিক্ষা দফতর। ফলে বেশ কয়েকটি স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্যদের পদ ছাড়তে হয়েছে, কিংবা স্কুল শিক্ষা দফতর পদ কেড়ে নিয়েছে এমন উদাহরণও রয়েছে। তারপরেও শাসক দলের মদতে অনেকেই অন্যায় ভাবে ক্ষমতা উপভোগ করছেন। শিক্ষক সংগঠনগুলির আক্ষেপ, পরিচালন সমিতি তৈরিতে গলদ থাকলে তাঁরা স্কুল চালাবে কী করে? তা ছাড়া তাঁরা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা-ও বেআইনি হিসেবে ধরা হবে। স্কুলের উন্নয়নে আসা টাকা আটকে যেতে পারে বলেও তাঁদের আশঙ্কা।

শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা যায়, সরকার-পোষিত স্কুলে অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচন হয় না। তার বদলে স্কুল শিক্ষা দফতর পরিচালন সমিতির সভাপতি, দু’জন শিক্ষানুরাগী, সরকারি প্রতিনিধি ও মেডিক্যাল অফিসারের নাম পাঠায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক পরিচালন সমিতির সম্পাদক হন। তবে তিন জন শিক্ষক প্রতিনিধি ও এক জন অশিক্ষক প্রতিনিধিকে নির্বাচনের মাধ্যমে পরিচালন সমিতির সদস্য হতে হয়। তারপরে পরিচালন সমিতির সভাপতি দু’জন অভিভাবককে মনোনীত করে মোট ১২ জনের পরিচালন সমিতি গঠন করেন। কিন্তু বর্তমানে তৃণমূলের তরফ থেকে শিক্ষা দফতরে নামগুলি পাঠানো হয়। আর সেই নামই মনোনীত করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও জেলা পরিদর্শকের কাছে স্কুল শিক্ষা দফতর পাঠিয়ে দেয় বলে বিরোধীদের অভিযোগ। খোঁজ নিয়েও দেখা গিয়েছে, বর্ধমান শহরের বেশ কয়েকটি স্কুল এবং খণ্ডঘোষের অধিকাংশ স্কুলে সভাপতি কিংবা পরিচালন সমিতির শিক্ষানুরাগী প্রতিনিধি কেউই স্নাতক নন।

এ জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে স্কুল রয়েছে ৯৬২টি। তার মধ্যে সরকার পোষিত হওয়ার জন্য আবেদন করেছে ৭০৭টি, অনুমোদন পেয়েছে ৬০৬টি স্কুল। এদের মধ্যে ৫৫৬টি স্কুলে পরিচালন সমিতি গঠন হয়েছে। শিক্ষক সংগঠনগুলির দাবি, কেতুগ্রামের গঙ্গাটিকুরি অতীন্দ্রনাথ বিদ্যামন্দির, মেমারি ইউনিট ১, কাটোয়ার রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ, কাটোয়া বালিকা বিদ্যালয়, গুসকরা পিপি ইনস্টিটিউট-সহ জেলার বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষানুরাগী হিসেবে পরিচালন সমিতিতে কর্মরত শিক্ষকরা রয়েছেন। এ ছাড়াও এক ব্যক্তি দুটি স্কুলের পরিচালন সমিতির পদে রয়েছেন এমন উদাহরণও বহু। জানা গিয়েছে, বর্ধমানের তেজগঞ্জ, কলিগ্রাম ও যুবরাজপুর স্কুলের পরিচালন সমিতির সদস্য রয়েছেন তৃণমূলের বর্ধমান ১ ব্লকের এক নেতা। আবার বর্ধমান শহরের এক কাউন্সিলর ইছলবাদ গার্লস, বিদ্যার্থী বয়েজ ও গার্লস স্কুলে পরিচালন সমিতির সদস্য রয়েছেন। তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের মঙ্গলকোটের নেতা গণপুর ও গুসকরা একটি স্কুলে, আবার আউশগ্রামের এক নেতা রয়েছেন এড়াল ও গুসকরার একটি স্কুলে। অথচ গলসির কসবা রাধারানি ও চকতেঁতুল স্কুলের পরিচালন পদ্ধতির মধ্যে ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের এক প্রাক্তন সভাপতি। শিক্ষা দফতর তাঁকে একটি স্কুল থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক সুদীপ্ত গুপ্তর কটাক্ষ, “পরিচালন সমিতি তৈরির ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ম সরকারি দলই মানছে না। আমরা শিক্ষা দফতরের কাছে অভিযোগও জানিয়েছি।” প্রধান শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিজয় সরকার মনে করেন, “বেনিয়মের যা বহর, তাতে পরিচালন সমিতিই না উঠে যায়।” তৃণমূল প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের জেলা সভাপতি রথীন মল্লিকও বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখছি। যদি সত্যতা থাকে তাহলে সরকারের নির্দেশ মেনে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে বলব।” জেলা পরিদর্শক (মাধ্যমিক) খগেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “এমন অভিযোগ পেলে সংশোধনের জন্য শিক্ষা দফতরে পাঠাই।”

পাশের জেলা বীরভূমেও মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সভাপতি পদে অন্য স্কুলের শিক্ষকেরা রয়েছেন এমন নজির মিলেছে। শিক্ষা দফতরের প্রতি মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পুরনো সার্কুলার অনুযায়ী এটা হতে পারে। নতুন সার্কুলার আসলে বিষয়টি দেখা হবে। আর স্নাতক নন এমন সভাপতি বা শিক্ষানুরাগীদের প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ইতিমধ্যে শিক্ষা দফতর থেকে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE