প্রতীকী ছবি।
আইন করে গৃহশিক্ষকতা বন্ধ করা যায় না বলে কয়েক দিন আগে কলকাতায় এসে জানিয়ে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্কুলশিক্ষা সচিব অনিল স্বরূপ। রাজ্য সরকারও শিক্ষকদের আচরণবিধির খসড়ায় গৃহশিক্ষকতার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কিন্তু শিক্ষা মহলের মত, সমাজ এগিয়ে না এলে এই প্রবণতা বন্ধ করা যাবে না। এই পরিস্থিতে তাই সক্রিয় হয়েছে শহরের বেশ কিছু স্কুল। গৃহশিক্ষক নেই এমন পড়ুয়াদের পুরস্কৃত করা এবং তাদের নিয়ে দল তৈরি করে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের আশা, এর ফলে লাগাম পরানো যাবে গৃহশিক্ষকতার দৌড়কে।
বাম জমানা থেকেই শিক্ষা জগতের বহু আলোচিত বিষয় গৃহশিক্ষকতা। সে সময়ে গৃহশিক্ষকতা করা যাবে না বলে কার্যত মুচলেকা দিতে হত শিক্ষকদের। কিন্তু তার পরেও সেই প্রবণতা বন্ধ হয়নি। উল্টে বর্তমানে তা কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে বলে দাবি শিক্ষামহলের। গৃহশিক্ষকের সংখ্যার উপরেই নির্ভর করে সাফল্যের মাপকাঠি মাপতে শুরু করেছে সমাজ। কিন্তু এর বাইরেও যে ভাল ভাবে পড়াশোনা করা যায়, সেই পথ দেখাতেই উঠেপড়ে লেগেছে শহরের বেশ কয়েকটি স্কুল।
যেমন মডার্ন হাইস্কুল ফর গার্লস-এর অধিকর্তা দেবী কর জানান, প্রথমে তাঁদের স্কুলে প্রতিটি ক্লাসে পড়ুয়াদের মধ্যে সমীক্ষা চালানো হয়। গৃহশিক্ষকতা ছাড়াই পড়াশোনা করছে এমন পড়ুয়াদের বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া তো হয়ই, তাদের পুরস্কৃতও করা হয়। গৃহশিক্ষক ছাড়া পড়াশোনা করা যে যথেষ্ট কৃতিত্বের, তা-ই বোঝানোর চেষ্টা করে স্কুল। এ ছাড়া ওই স্কুলে পড়ুয়ারাই অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে। বিশেষত ইংরেজি ও গণিতের জন্য এই ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ‘‘আশা করছি, এ ভাবেই ধীরে ধীরে স্কুলের পডুয়াদের মধ্যে থেকে গৃহশিক্ষকদের কাছে পড়ার প্রবণতা কমানো যাবে,’’—বলছেন দেবী কর।
স্কুল যে পড়াশোনা সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে পড়ুয়াদের পাশে রয়েছে সেটা বোঝানো খুব প্রয়োজন। তা হলেই গৃহশিক্ষকের নির্ভরতা কমানো যায়। এমনটাই মনে করেন দ্য ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের অধ্যক্ষ রঞ্জন মিত্র। তিনি জানিয়েছেন, সে কারণে ওই স্কুলে ছুটির পরে বাড়তি সময় পড়ুয়াদের নিয়ে ক্লাস করানো হয়। এই পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। যদিও গোখেল মেমোরিয়াল গার্লস স্কুলে এই পদ্ধতি চালু হলেও বেশি দিন তা সফল হয়নি। তাই নতুন করে পথ খোঁজার কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষা ইন্দ্রাণী মিত্র। একই ভাবে এপিজে স্কুলের অধ্যক্ষা রীতা চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁদের স্কুলে যোগ দেওয়ার আগেই শিক্ষকদের এই মর্মে স্বাক্ষর করতে হয় যে তাঁরা কোনও ভাবেই গৃহশিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। ফলে এই প্রচেষ্টা সফল হয়েছে বলেই দাবি তাঁর। পিছিয়ে নেই বাংলা মাধ্যমের স্কুলগুলিও। যাদবপুর বিদ্যাপীঠ-সহ বেশ কয়েকটি স্কুল ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ শুরু করেছে।
কিন্তু আদৌ কি মিটবে এই প্রবণতা?
ঢোঁক গিলছেন শিক্ষকদের একাংশই। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘শিক্ষকদের নিজেদের কর্তব্যের বিষয়ে যেমন তাঁদের সচেতন হতে হবে, তেমনই পরীক্ষার রেজাল্টের পিছনে দৌড়ে অহেতুক গৃহশিক্ষক রাখা বন্ধ করতে হবে অভিভাবকদের।’’ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই বিষয়ে অবশ্য শিক্ষকদের আগ্রহ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি দাবি করেন, অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষকদের আগ্রহ থাকলেও গৃহশিক্ষকতা বন্ধে তাঁদের সক্রিয় হতে দেখা যায় না! এ বার স্কুল সক্রিয় হতে আশার আলো দেখছে শিক্ষামহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy