Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সাত বছর পরেও ‘নিখোঁজ’ দুই পুলিশ

জঙ্গলমহল ইদানীং শান্ত। কিন্তু ‘নিরুদ্দেশ’ দুই পুলিশ কনস্টেবলের খোঁজ মিলল না সাত বছরেও! ২০০৯-এর ৩০ জুলাই থেকে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের দুই কনস্টেবল সাবির আলি মোল্লা ও কাঞ্চন গড়াই নিখোঁজ।

কাঞ্চন গড়াই ও সাবির আলি মোল্লা

কাঞ্চন গড়াই ও সাবির আলি মোল্লা

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৬ ০৩:৩০
Share: Save:

জঙ্গলমহল ইদানীং শান্ত। কিন্তু ‘নিরুদ্দেশ’ দুই পুলিশ কনস্টেবলের খোঁজ মিলল না সাত বছরেও!

২০০৯-এর ৩০ জুলাই থেকে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের দুই কনস্টেবল সাবির আলি মোল্লা ও কাঞ্চন গড়াই নিখোঁজ। ওই দিন লালগড়ের ধরমপুর থেকে মোটর সাইকেলে চড়ে তাঁরা বাজারে রওনা হয়েছিলেন পুলিশ ক্যাম্পের জেনারেটরের খারাপ হয়ে যাওয়া যন্ত্রাংশ বদলাতে।

আইন বলছে শনিবার, ৩০ জুলাইয়ের পর থেকে তাঁদের মৃত বলে গণ্য করতে হবে।

এই অবস্থায় শনিবার দু’জনের পরিবারই ক্ষোভ উগরে দিয়েছে। কাঞ্চনের ভাই চি়ত্তরঞ্জন গড়াই ও সাবিরের দাদা সামাদ মোল্লা জানাচ্ছেন, গত বছর মে মাসে লালগড়ের ভুলাগাড়ার জঙ্গলে মাটি খুঁড়ে দু’টি কঙ্কাল উদ্ধার হওয়ার পর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য বাড়ির লোকদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পুলিশ। কিন্তু সেই ডিএনএ রিপোর্ট আজও পাওয়া যায়নি। নিখোঁজ হওয়ার সময়ে কাঞ্চনের বয়স ছিল ২৫ ও সাবিরের ২৯ বছর। চিত্তরঞ্জন ও সামাদ বলেন, ‘‘ডিএনএ রিপোর্ট আসেনি নাকি নমুনা মেলেনি? বুঝতে পারছি না। এ দিকে বাড়ির বয়স্করা ওরা ফিরবে বলে আশা করে বসে আছেন। আমরা বুধবার আইজি পশ্চিমাঞ্চলকে চিঠি দিয়েছি।’’

ওই দু’জন নিখোঁজ হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে ধৃত কয়েক জন মাওবাদীর কাছ থেকে জানা যায়, সেই ৩০ জুলাই বড় বৃন্দাবনপুরে মাওবাদীরা তাঁদের মোটর সাইকেল আটকে তুলে নিয়ে যায় ভুলাগাড়ার জঙ্গলে। দু’জনই নিরস্ত্র ছিলেন। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সুষেণ নামে এক স্কোয়াড নেতার নেতৃত্বে মাওবাদীরা ‘গণ আদালত’ বসিয়ে দুই পুলিশের প্রাণদণ্ড দেয়। কাঞ্চন আর সাবির বার বার তাঁদের কাছে প্রাণভিক্ষা চান। ওই দুই পুলিশ বলেছিলেন, তাঁরা মাত্র বছর তিনেক চাকরি করছেন, বিয়েথা করেননি, তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হোক। তাতেও কর্ণপাত করা হচ্ছে না দেখে দু’জন জানান, তাঁরা মুচলেকা দিয়ে যাচ্ছেন যে পুলিশের চাকরি অবিলম্বে ছেড়ে দেবেন। এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, ‘‘সুষেণ তখন কিষেণজিকে মোবাইলে ফোন করে। কিষেণজি প্রাণদণ্ডের আদেশই বহাল রাখে। তার পর ওই দু’জনের গলা কেটে এক সঙ্গে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়।’’ প্রসঙ্গত, সুষেণ ২০১০-এ শিলদা হামলার সময়ে নিহত হয়েছে।

রাজ্য পুলিশের শীর্ষ অফিসারদের এক জন মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০১১-তে বেনাচাপড়ার কঙ্কাল উদ্ধার কাণ্ডে সিআইডি আড়াই মাসের মধ্যে ডিএনএ রিপোর্ট জোগাড় করেছিল। ওই মামলাতেই গ্রেফতার হন সিপিএম নেতা ও প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ। ওই অফিসারের কথায়, ‘‘ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানোর সময়ে মামলার পটভূমিকা ও প্রয়োজনীয়তা বলে দিলে দেরি হওয়ার কথা নয়।’’

পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ অবশ্য বলছেন, ‘‘গোটা প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল ও সময়সাপেক্ষ। বিশেষজ্ঞদের হাতে আরও অনেক মামলার কাজ পড়ে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা বার বার তাগাদা দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের ধৈর্য ধরতে বলা হচ্ছে।’’ সাবির ও কাঞ্চন ছাড়া রাজ্যে মাওবাদী-প্রভাবিত এলাকায় আর কোনও পুলিশ বা সরকারি নিরাপত্তাকর্মী নিখোঁজের তালিকায় নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

missing police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE