Advertisement
১১ মে ২০২৪

মৃত্যুতে বেটিংয়ের ছায়া, সঞ্জয় যেন জন্নত-এর অর্জুন

বাস্তবেও যেন বলিউডের ছায়াছবি ‘জন্নত’-এর পুনরাবৃত্তি। নৈহাটির সঞ্জয় দাস আর সেলুলয়েডের অর্জুন দীক্ষিত মিলেমিশে একাকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:০৬
Share: Save:

বাস্তবেও যেন বলিউডের ছায়াছবি ‘জন্নত’-এর পুনরাবৃত্তি। নৈহাটির সঞ্জয় দাস আর সেলুলয়েডের অর্জুন দীক্ষিত মিলেমিশে একাকার।

মামুলি জুয়াড়ি থেকে ক্রিকেট বেটিংয়ের বড়সড় বুকি-তে উত্তরণের পরে শেষমেশ পুলিশের গুলিতে জীবন শেষ হয় অর্জুন দীক্ষিতের। ‘জন্নত’ ছবিতে অর্জুনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ইমরান হাসমি। আর বাস্তবে পঁয়ত্রিশ বছরের যুবক সঞ্জয় দাসের দেহ মঙ্গলবার রাতে বিদ্যাসাগর সেতুর কাছে গঙ্গায় উদ্ধার হওয়ার পিছনেও সেই ক্রিকেট বেটিংয়ের ছায়া দেখছে পুলিশ।

সঞ্জয়ের স্ত্রী পূজা দাস জানিয়েছেন, বছর দুয়েক আগেই সঞ্জয় ক্রিকেট বেটিংয়ের একটি সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েন, যেখানে সব লেনদেন হতো অনলাইনে। মাস তিনেক আগে দু’লক্ষ টাকা খুইয়ে সঞ্জয় স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন— তাঁকে মরতেই হবে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দেনার বোঝা মাথায় চাপার পর সঞ্জয় মাঝেমধ্যে বাড়িতে বলতেন, তিনি গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হবেন। এমনকী পুলিশের দাবি, এর আগে তিনি দু’বার গঙ্গায় ঝাঁপ দিলেও স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করেন।

তবে সঞ্জয় আত্মহত্যা করেছেন, না খুন হয়েছেন— সে ব্যাপারে পুলিশ নিশ্চিত নয়। এক পুলিশ অফিসার বলেন, ‘‘ময়না-তদন্তের রিপোর্ট না-পেলে কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে প্রাথমিক ভাবে ওই যুবকের দেহে আঘাতের কোনও চিহ্ন মেলেনি।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, নৈহাটির উত্তর প্রসাদনগরের বাসিন্দা সঞ্জয় শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তার পর আর তাঁর খোঁজ পাননি বাড়ির লোকজন। সে দিনই পরিবারের তরফে নৈহাটি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। বুধবার সকালে নৈহাটি থানা থেকে বাড়িতে খবর পৌঁছয়, সঞ্জয় দাসের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে গঙ্গায় দেহটি ভাসতে দেখে মাঝিরা পুলিশকে জানান। যেখানে দেহটি উদ্ধার হয়, সেটি দক্ষিণ বন্দর থানার এক্তিয়ারে। কলকাতার ওই থানা থেকেই নৈহাটি থানায় খবর দেওয়া হয়।

সঞ্জয়ের পরিবার বলতে তাঁর স্ত্রী পূজা, এগারো মাসের এক কন্যাসন্তান ও মা সবিতা দাস। সবিতাদেবী হুকুমচাঁদ জুট মিলের কর্মী। বছর চারেক আগে সঞ্জয় একটি মোবাইল পরিষেবা সংস্থার অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। বছর দুয়েক পরে তিনি বিয়ে করেন। পূজা সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর পরিবারে অর্থের প্রয়োজন বেড়ে যায়। পুলিশকে পূজা জানান, তার কিছু দিন পরেই তাঁর স্বামী জানান, তিনি চাকরি ছেড়ে অনলাইনে ব্যবসা করছেন।

তবে মাস তিনেক আগে দু’লক্ষ টাকা খোয়ানের পর সঞ্জয় পূজাকে জানান, অনলাইন ব্যবসা-ট্যবসা নয়, তিনি আসলে ক্রিকেট জুয়ায় জড়িত। দু’লক্ষ টাকা হারানোর পর থেকেই সঞ্জয় মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।

ক্রিকেট বেটিংয়ের ওই চক্রটি কারা, কোথা থেকে চালায়, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE