Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাংবাদিকদের রাস্তায় ফেলে চলল বেধড়ক মার

কলকাতার রাজপথ এ দৃশ্য বোধ হয় আগে দেখেনি!রাস্তা দিয়ে প্রাণভয়ে ছুটছেন নিরস্ত্র সাংবাদিক-আলোকচিত্রীরা। পিছনে লাঠি হাতে উন্মত্তের মতো তেড়ে আসছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। নেতৃত্বে ডিসি (এসটিএফ) মুরলীধর শর্মা এবং এডিসিপি (দক্ষিণ) অপরাজিতা রাই।

মেয়ো রোডে মার খেলেন সাংবাদিকেরা। ছবি: শৌভিক দে।

মেয়ো রোডে মার খেলেন সাংবাদিকেরা। ছবি: শৌভিক দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৭ ০৪:০৪
Share: Save:

কলকাতার রাজপথ এ দৃশ্য বোধ হয় আগে দেখেনি!

রাস্তা দিয়ে প্রাণভয়ে ছুটছেন নিরস্ত্র সাংবাদিক-আলোকচিত্রীরা। পিছনে লাঠি হাতে উন্মত্তের মতো তেড়ে আসছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। নেতৃত্বে ডিসি (এসটিএফ) মুরলীধর শর্মা এবং এডিসিপি (দক্ষিণ) অপরাজিতা রাই। হাতের নাগালে যাকে পাচ্ছে, তাকেই পেটাচ্ছে পুলিশ। রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছেন পেশার দায়ে রাস্তায় নামা সংবাদকর্মীরা, তাতেও উর্দিধারীদের হাত থেকে নিষ্কৃতি মেলেনি!

পুলিশি হামলার শেষে দেখা গেল কারও মাথা ফেটেছে, কেউ অচৈতন্য হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছেন। কারও গায়ের চামড়া ফেটে গিয়েছে, কেউ কব্জির যন্ত্রণায় ছটফট করছেন, কারও পা ফেটে রক্ত ঝরছে অঝোরে। তখনও পুলিশি বীরত্ব কমেনি! আহত, যন্ত্রণাকাতর সাংবাদিক-চিত্র সাংবাদিকদের উদ্দেশে উড়ে আসছে বাছাই করা ‘পুলিশি ভাষা’। কে বলবে, ক’দিন আগেও থানায় ঢুকে দুর্বৃত্তদের মারের মুখে এই পুলিশকেই টেবিলের তলায় ঢুকে ফাইল দিয়ে মাথা বাঁচাতে দেখা গিয়েছে!

কোনও রকম প্ররোচনা ছাড়া পুলিশের এই বেদম মার খেয়ে এ দিন অন্তত ১২-১৪ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। কেন এমন উন্মত্ততা? সাংবাদিকদের অপরাধ কী?

আরও পড়ুন:মারমুখী পুলিশ, বিস্মিত প্রাক্তনরা

জবাব দিতে পারেননি ঘটনাস্থলে হাজির থাকা অতিরিক্ত কমিশনার (১) বিনীত গোয়েল, অতিরিক্ত কমিশনার (৪) বিশাল গর্গ। কিন্তু এ দিন ডাফরিন রো়ডে বামেদের মিছিল ‘কভার’ করতে হাজির থাকা সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা, গোড়া থেকেই যেন নিশানা করে রেখেছিল পুলিশ। বামেদের মারের ছুতোয় সাংবাদিকদেরও দেদার ঠেঙিয়েছে তারা। এবং মিছিল ভেঙে যাওয়ার পরেও পরেও কার্যত পায়ে পা লাগিয়ে গোলমাল পাকিয়েছে।

মিছিল ছত্রভঙ্গ হওয়ার পরে মেয়ো রোডের ফুটপাথ থেকে খবর পাঠাচ্ছিলেন একটি চ্যানেলের সাংবাদিক। আচমকাই র‌্যাফের দুই জওয়ান দৌড়ে এসে তাঁকে গালাগাল করতে করতে সপাটে চ়ড় মারে। তিনি প্রতিবাদ করলেও ঘটনাস্থলে হাজির পুলিশকর্তারা আমল দেননি। বরং র‌্যাফের কর্মীদের আড়াল করার চেষ্টা করতে থাকেন। তা নিয়ে সাংবাদিকরা আপত্তি করেন। মেয়ো রোড কিছু ক্ষণের জন্য অবরোধ করা হয়। পরে সাংবাদিকরা দল বেঁধে মেয়ো রোড এবং ডাফরিন রো়ডের সংযোগস্থলে হাজির হন। সে সময় আলোচনার নামে দলবল নিয়ে হাজির হন মুরলীধর শর্মা ও অপরাজিতা রাই। দু’পক্ষের কথার মাঝে আচমকাই মারমুখী হয়ে ওঠেন মুরলীধর। তাঁর ও অপরাজিতার নির্দেশে পুলিশ বেধড়ক মারতে শুরু করে উপস্থিত সাংবাদিকদের। কলকাতা প্রেস ক্লাবের তরফে সাংবাদিকদের ওপর এ দিনের আক্রমণকে ‘অনভিপ্রেত ও দুর্ভাগ্যজনক’ বলে বর্ণনা করে নিন্দা করা হয়েছে। সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ পরিকল্পনা মাফিকই আক্রমণ করেছে সাংবাদিকদের।’’ তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও পুলিশের আচরণের নিন্দা করে বলেছেন, ‘‘সাংবাদিকদের সব সময়েই স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত।’’

বিশাল গর্গের অবশ্য দাবি, ‘‘কিছুই হয়নি!’’ অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (৩) সুপ্রতিম সরকারের যুক্তি— ‘‘সাংবাদিকদের অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তেই হয়। এটাও তেমনই বিষয়।’’ তবে তিনি বলেন, ‘‘বাড়াবাড়ি হয়ে থাকলে নিন্দনীয়। ফুটেজ দেখছি।’’ অতিরিক্ত কমিশনার (১) বিনীত গোয়েলেরও আশ্বাস, ‘‘কী ঘটেছে, নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখব।’’

কত দূর খতিয়ে দেখা হবে, তা নিয়ে অবশ্য সংশয়ে সাংবাদিকরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Journalists Police Beat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE